কলকাতা, 7 এপ্রিল: "আমরা চা খাব না! " বাক্যটাকে নিয়ে কত ঠাট্টা, কত মশকরা, কত মিম । জনতা কারফিউয়ের দিন এক ব্যক্তির "চা প্রেম" নিয়ে কতই বিদ্রুপ করলেন নেটিজেনরা । সোশাল মিডিয়ায় হাসির খোরাক হয়ে ওঠা মানুষটার জীবনে নেমে এল এক অদ্ভুত আঁধার । এখানে ওখানে শুনতে হল কটূক্তি । আবার বাড়ি এসে হুমকিও নাকি দিচ্ছেন কেউ কেউ । অথচ পেশায় রাজমিস্ত্রি সেই "চা কাকু"-র লকডাউনে কাজ বন্ধ । ঠাট্টা-মশকরার মেধ্যে থাকা নেটিজেনদের কেউ খোঁজ রাখল না মানুষটা আদৌও খেতে পাচ্ছেন?
চা নয়, বাঁচতে ভাত চান "ভাইরাল" চা কাকু মৃদুল - কোরোনা ভাইরাস
"পেটে ভাত নেই লোকে হাসি মশকরা করছে, হুমকি দিচ্ছে, কখনও কখনও মারধর করার কথা বলছে । আমার পেটের ভাতের ব্যবস্থা করে দিন । বৃদ্ধা মা, মানসিক ভারসাম্যহীন দিদি আর সংসার নিয়ে আমি শুধু বাঁচতে চাই ।"
যাদবপুরের বিজয়গরের শ্রী কলোনি । সেখানেই ছ'ফুট বাই চার ফুটের দুটো ঘর । পেশায় রাজমিস্ত্রি মৃদুল দেবের সেটাই ছিল শান্তির নীড় । স্ত্রী,পুত্র,বৃদ্ধা মা, আর মানসিক ভারসাম্যহীন দিদি । এই নিয়েই মৃদুলবাবুর পৃথিবী । পুরোপুরি মিস্ত্রি নন মৃদুল । 65 বছরের মানুষটা আসলে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে । রোজ কাজে গেলে 300 টাকা পান । জনতা কারফিউ তাঁর কাছে কাজ কেরে নেওয়া একটা দিন ছিল । তবে জনতা কারফিউ কী, তা জানা ছিল না তাঁর । না, সেদিনও কাজ বন্ধ করেননি । হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে বাড়ি ফিরে বিকেলে পাড়ার চায়ের দোকান খোলা পেয়ে রোজকার অভ্যেসে গিয়েছিলেন চা খেতে । তখনি এক যুবতি ছবি তুলে সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দেন । তারপর থেকেই মৃদুল হয়ে ওঠেন সোশাল মিডিয়ায় "চা কাকু" । ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ আর মিমের ফুলঝুরি । কেউ একবার খোঁজ নিয়েও জানতে চাননি কে তিনি, কী তাঁর পরিচয় । তিনি কি আড্ডা মারতে বেরিয়েছিলেন রাস্তায়? নাকি না বুঝে সরল মনে করেছিলেন কাজটা ।
মৃদুলবাবুর বিষয়ে খবর পাওয়ার পর পাশে দাঁড়িয়েছেন BCCI প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলি । সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ৷ আপাতত তাতেই দিনগুজরান হচ্ছে তাঁর । তিনি বলেন, "পেটে ভাত নেই লোকে হাসি মশকরা করছে, হুমকি দিচ্ছে, কখনও কখনও মারধর করার কথা বলছে । আমার পেটের ভাতের ব্যবস্থা করে দিন । বৃদ্ধা মা, মানসিক ভারসাম্যহীন দিদি আর সংসার নিয়ে আমি শুধু বাঁচতে চাই ।"