কলকাতা, 10 জানুয়ারি : গোটা বিশ্বের কাছেই সাইবার ক্রাইম হয়ে উঠেছে মাথা ব্যথার কারণ । গতবছর গোটা পৃথিবীতে সবথেকে বেশি যে অপরাধ হয়েছে, সেটি সাইবার অপরাধ । দেশের বেড়াজাল টপকে অপরাধীরা বিশ্বের নানা জায়গা থেকে অপারেট করছে অপরাধ চক্র । অনেক সময় সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকায় অথবা বিদেশনীতির জটিলতার কারণে অনেক মামলার সমাধান অধরাই থেকে যায় । এর থেকে মুক্তি মিলবে কিভাবে? গোটা বিশ্বের সেরা তদন্তকারীরা এ-নিয়ে চালাচ্ছেন নিরন্তর আলোচনা ।
কলকাতা পুলিশের দাবি, মানুষের সচেতনতাতেই দমন করা সম্ভব এই সাইবার ক্রাইম । তাই এবার সাইবার ক্রাইম নিয়ে জোরদার সচেতনতার প্রচারের উদ্যোগ নিচ্ছে কলকাতা পুলিশ । লালবাজারে তৈরি হচ্ছে সেই প্রচারের রূপরেখা ।
সাইবার ক্রাইমের খুঁটিনাটি এবং তা থেকে বাঁচার উপায় নিয়ে লালবাজারের তরফে তৈরি করা হচ্ছে একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি । যেটি বিভিন্ন সিনেমা হলে ছবি শুরুর আগে বা বিরতিতে বিজ্ঞাপন হিসেবে দেখানো হবে ।
2019 সাল । গত দশকের শেষ বছরে লাফিয়ে বেড়েছে সাইবার ক্রাইমের সংখ্যা । লালবাজারের তথ্য বলছে, কয়েক বছর ধরেই গ্রাফটা ঊর্ধ্বমুখী । শেষ বছর মোট কতগুলি সাইবার ক্রাইমের মামলা হয়েছে সেই তথ্য পাওয়া যাবে কিছুদিন পরে । কিন্তু এক ঝলক দেখলেই বোঝা যাচ্ছে সংখ্যাটা অনেক । বেশ কিছু অপরাধের তদন্তে নেমে রীতিমতো অসুবিধায় পড়েছে পুলিশ । কারণ, সেই অপরাধ এই দেশ থেকে সংঘটিত হয়নি । হয়েছে বিদেশ থেকে । ঠিক যেমনটা কলকাতায় বসে ইউরোপের বিভিন্ন নাগরিককে ঠকানোর চক্র কাজ করছিল ।
ঘটনা গত অক্টোবরের । কলকাতা পুলিশ গ্রেপ্তার করে সাত জনকে । পৃথিবীর বিখ্যাত কোম্পানি মাইক্রোসফটের নাম করে ফোন যেত বিলেতে । বলা হত, দেওয়া হবে টেকনিক্যাল সাপোর্ট । আর সেভাবেই করা হত প্রতারণা । মাইক্রোসফট কর্পোরেশন ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের হয়ে এ'বিষয়ে কলকাতা পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন ভূপিন্দর সিং বিন্দ্রা । তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, পুরো চক্রটি চালান হচ্ছে তপসিয়ার উইজার্ড হাউস এবং রফি আহমেদ কিদওয়াই রোডের ভিশাল সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড থেকে । ঘটনায় দু'টি জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় সাত জনকে । এই সাতজন ইউরোপের কয়েক হাজার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছিল । কলকাতা পুলিশের এই সাফল্যর পরে নগরপালকে ফোন করেন স্বয়ং লন্ডনের পুলিশ কমিশনার । ধন্যবাদও জানান ।
ব্রিটেনের মতো বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে । অন্যদিকে, আবার মাইক্রোসফ্টের মতো কোম্পানির ভারতীয় শাখা থাকায় সহজেই সেই মামলার সমাধান হয়েছে । কিন্তু, অনেক দেশের সঙ্গেই বিদেশনীতির কারণে সুসম্পর্ক নেই । আজ সেসব দেশ থেকে সাইবার অপরাধ সংগঠিত করা হলে, পুলিশের হাত-পা বাধা । আর এইসব কারণেই পুলিশ চাইছে জনমানসে সচেতনতা ।
কলকাতার গোয়েন্দা প্রধান মুরলীধর শর্মা এ'প্রসঙ্গে ETV ভারতকে বলেন, "আমরা চাইছি সাইবার অপরাধের মতো বড় বিপদ থেকে রক্ষা পাক শহরবাসী । এই জন্য চাই চূড়ান্ত সচেতনতা । কতগুলি ছোটো জিনিস মাথায় রাখলেই এর হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব । যেমন দেশের বাইরে থেকে অচেনা নম্বরের ফোন না ধরা । কোনও অচেনা লিঙ্কে ক্লিক না করা । ব্যাঙ্কের নামে কোনও ভুয়ো ফোন এলে তাতে কর্ণপাত না করা । প্রয়োজন হলে সশরীরে ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখা করতে হবে । মোবাইল থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ওয়েবসাইট না খোলা । কোনও অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে কোনও OTP শেয়ার না করা । প্রাথমিকভাবে এই বিষয়গুলি মাথায় রাখলেই চলবে ।"
সাইবার ক্রাইমের খুঁটিনাটি এবং তা থেকে বাঁচার উপায় নিয়ে লালবাজারের উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে স্বল্পদৈর্ঘ্যের একটি ছবি । পাশাপাশি ব্যাঙ্ক এবং সোশ্যাল মিডিয়াগুলিকে বলা হবে, এই প্রচার চালানোর জন্য । কলকাতা পুলিশের প্রণাম-এর মত বড় গোষ্ঠী যেগুলি রয়েছে, তাদেরও দেওয়া হবে সচেতনতার পাঠ । পরিকল্পনা, চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি হয়ে গেছে । এবার তা বাস্তবায়নের পালা ।