কলকাতা, 10 মে : কালি কলম মন লেখে তিনজন ৷ তিন মূর্তির ত্রিবেণী সঙ্গমে ফুটে ওঠে লেখকের কল্পনা, আবেগ, দুঃখ, ভালবাসা ও বাস্তবের ছবি ৷ কিন্তু, ওই তিনজনের মধ্যে যদি কোনও একজনের তাল কেটে যায়, বেসুরো হয়ে পড়ে, তাহলে পুরোটাই ঝাপসা ৷ পেন বা কলম নামক বস্তুটি লেখকের বড় আবেগের ৷ সাধারণত আমরা পেন বা কলম খারাপ হলে তা ফেলে দিয়ে থাকি ৷ কিন্তু, নষ্ট বা বিকল কথাটি আপেক্ষিক ৷ তাই নষ্ট পেন বা কলমে প্রাণ ফিরিয়ে নিয়ে আসার মধ্যে একটা বাড়তি আনন্দ, উদ্দীপনা রয়েছে ৷ কলকাতা শহরেই রয়েছে এমন একটি দোকান এবং কারিগর, যাঁর হাত ধরে দুষ্প্রাপ্য তার যৌবন ফিরে পায় (Seventy Seven Years Old Pen Hospital in Esplanade) ৷
ধর্মতলা মেট্রো স্টেশনের চার নম্বর গেট দিয়ে বেরিয়ে, বাঁ-দিকে একটি গলির মধ্যে প্রবেশ করলেই আপনার চোখে পড়বে পেন হাসপাতাল ৷ হ্যাঁ, পেনের হাসপাতাল ! শুনতে অবাক লাগলেও বাস্তবের ছবিটাও আকর্ষণীয় ৷ ইমতিয়াজ, মধ্যবয়স্ক মানুষটির অগোছালো দোকান ঘরেই লুকিয়ে পেন বা কলমের জিয়ন কাঠি ৷ 1945 সালে ইমতিয়াজের দাদু এই পেন হাসপাতাল খুলেছিলেন ৷ সেই সময় বিদেশ থেকে আসত ওয়াটারম্যান, শেফার্ড, পিয়ার কারদা, উইলসনের মত পেন ৷ নামের বিভিন্নতার সঙ্গে প্রতিটি পেনের গঠনশৈলীতেও ছিল বৈচিত্র্য ৷ ফলে এক একটি পেনের প্রতি লেখকের আবেগ অনুভূতি ছিল ভিন্ন ৷ তাই কলমপ্রেমীদের দুঃখ লাঘব করার ভাবনা থেকেই পেন হসপিটালের যাত্রা শুরু হয়েছিল ৷
সাতাত্তর বছরের পুরনো ইতিহাসে জড়িয়ে আছে অনেক কিছু ৷ যেখানে সাধারণ মানুষ থেকে নামজাদা অধ্যাপক, লেখক তাঁদের পেনের অসুখ সারাতে ছুটে আসেন এই পেন হাসপাতালে ৷ বর্তমান সময়ে ডট পেনে লেখা দস্তুর ৷ এই সময়ে দাঁড়িয়ে ফাউটেন পেন নিয়ে আবেগের স্রোত না দেখলে বিশ্বাস করা শক্ত ৷
তেমনি পেন সারাই করাতে আসা অমৃতা ঘোষ জানান, “দেখুন ফাউটেন পেন নিয়ে আবেগ ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ নতুনদের উপর ৷ আমার কাছে অনেকগুলো দেশি-বিদেশি পেন রয়েছে ৷ ডট পেনে আমিও লিখি ৷ কিন্তু, নিব পেনে লেখার আনন্দ আলাদা ৷ তাই পেন খারাপ হলেই ছুটে আসি পেন হাসপাতালে ৷” প্রায় একই সঙ্গে যোগ করলেন, “আমার বাবা অধ্যাপক ৷ উনি ফাউটেন পেন ছাড়া লিখতে পারেন না ৷ দেশি-বিদেশি কলমের সংগ্রহ ওনার কাছে রয়েছে ৷ আমার কাছেও আছে ৷ পেনগুলো নিয়ে আমাদের ভালবাসা রয়েছে ৷’’