কলকাতা, 16 জুন : বিধানসভায় সাসপেনশন উঠল 7 বিজেপি বিধায়কের (Seven BJP MLAs Suspension Withdrawn from Bengal Assembly) । বাজেট অধিবেশন চলাকালীন সাসপেন্ড হয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Bengal Opposition Leader Suvendu Adhikari), বিরোধী দলের মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা-সহ সাতজন বিজেপি বিধায়ক । তারপর থেকেই তাঁদের সাসপেনশনের বিষয়টি নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি । অবশেষে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে সাসপেনশন উঠল 7 বিজেপি বিধায়কের ।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার আদালতের নির্দেশে বিধানসভায় দু’টি মোশন নিয়ে আসে বিজেপি । এই মোশন বা প্রস্তাবের মূল লক্ষ্য ছিল বিজেপি বিধায়কদের সাসপেনশন প্রত্যাহারের জন্য আবেদন । কিন্তু অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় (Speaker Biman Banerjee) তরফ থেকে এই আবেদন ত্রুটিপূর্ণ বলে বাতিল করে দেওয়া হয় ।
বিধায়কদের সাসপেনশন প্রত্যাহারে বিজেপির আবেদন বৃহস্পতিবার অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধে যখন আবার বিষয়টি বিবেচনার জন্য যায়, তখন বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল (BJP MLA Agnimitra Paul) বিধানসভায় বক্তব্য রাখেন ৷ সেখানে তিনি দাবি করেন, ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার কারণে নয়, বরং পছন্দ না হওয়ার জন্য আগেরবার আবেদন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন অধ্যক্ষ । তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এদিনই 7 বিজেপি বিধায়কের সাসপেনশন প্রত্যাহার করে নিল রাজ্য বিধানসভা ।
বিধায়কদের সাসপেনশন প্রত্যাহারে বিজেপির আবেদন বিধানসভায় ঠিক বলেছিলেন অগ্নিমিত্রা পাল ? তিনি বলেন, ‘‘বিরোধী দলনেতা এবং বিরোধী দলের মুখ্য সচেতক অনুপস্থিত, সেখানে বিধানসভা কীভাবে চলতে পারে । আগেও আমরা আপনার কথামতো মোশন এনেছিলাম । তবে সেই মোশনের লেখা আপনার পছন্দ হয়নি ।’’
এদিন অগ্নিমিত্রা পাল অধ্যক্ষকে পছন্দ-অপছন্দের কথা বলে দোষারোপ করার চেষ্টা করলেও এই নিয়ে আর কথা বাড়াননি বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় । শুধু মনে করিয়ে দেন যে আগেরবার যে আবেদন করা হয়েছিল সেখানে অতিরিক্ত বিষয় ছিল, সেটাকে সংশোধন করার কথা তিনি বলেছিলেন ।
সাসপেনশন প্রত্যাহার নিয়ে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আপনাদের হাই কোর্টে যাওয়ার দরকার ছিল না । আমি বারবার বলেছি, আপনারা বিধানসভায় আসুন, মানুষের কথা বলুন । কিন্তু আপনারা তা না করে বিধানসভার গেটে এসে এমন কিছু বলেন, যা মানায় না ।’’
অন্যদিকে রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Bengal Minister Partha Chatterjee) বলেন, ‘‘আমরা তিক্ততা চাই না । সকলকে বলব মোশনকে সমর্থন করুন । আমরা সকলে মিলে বিধানসভা চালাব । কাউকে বাইরে রেখে বিধানসভা চালাতে চাই না । কিন্তু বিধানসভা যেমন বিরোধীদের ছাড়া চলতে পারে না, তেমনই বিরোধীদেরও কিছু দায়িত্ব, কর্তব্য রয়েছে । যা তাঁদের পালন করা উচিত ।’’
এরপরেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সংযোজন, ‘‘আপনাদের হাইকোর্টে যাওয়ার দরকার ছিল না । বারবার বলেছি আপনারা বিধানসভায় আসুন মানুষের কথা বলুন । কিন্তু আপনারা তা না করে বিধানসভার গেটে এসে এমন কিছু বলেন যা মানায় না ৷ শুধু তাই নয়, বিধানসভা চালানোর দায়িত্ব অধ্যক্ষ্যর । ধন্যবাদ বিচারপতিকে, তিনি বলেছেন বিধানসভার অধ্যক্ষের কথাই শেষ কথা ।’’ পরিষদীয় রীতিনীতি মেনে বাংলার হয়ে বিজেপি বিধায়কদের কাজের বার্তাও দেন পার্থ ৷
এনিয়ে বালুরঘাটের বিজেপি অশোক লাহিড়ী অধ্যক্ষের ভূমিকার প্রশংসা করেন । বলেন, ‘‘আপনার মহান নেতৃত্বে আজ ঐতিহাসিক বিধানসভার গরিমা অক্ষুন্ন থাকল । ইতিহাসের পাতায় আপনার নেতৃত্বের কথা লেখা থাকবে ।’’ তবে তাঁর এহেন মন্তব্যকে দ্ব্যর্থবোধক বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ । এরপর বিজেপির আনা দু’টো মোশনের উপর ধ্বনি ভোট হয় এবং সাত বিজেপি বিধায়কের উপর থেকে সাসপেনশন উঠে যায় । এবার রাজ্য বিধানসভার অধিবেশনে যোগ দিতে পারবেন শুভেন্দু অধিকারী, মনোজ টিগ্গা-সহ সাত বিধায়ক ।
এদিকে নিজেদের ত্রুটি না মানলেও এদিন অধ্যক্ষ বিজেপি বিধায়কদের সাসপেনশন তুলে নেওয়ায় তাদের নৈতিক জয় দেখছেন বিজেপি পরিষদীয় দলের মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা । তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সাসপেনশন অবৈধ । আমরা কোর্টে গিয়েছি । কোর্টের নির্দেশেই মোশান এনেছিলাম । আমরা মনে করি, এটা আমাদের জয় ।’’
আরও পড়ুন :BJP MLAs Suspension: জমা পড়েনি ত্রুটিমুক্ত আবেদন, এখনও সাসপেন্ড বিজেপি'র সাত বিধায়ক