পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / city

"ফি কমালে বন্ধ হয়ে যাবে স্কুল", মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি কলকাতার বিশপের - কলকাতা

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা দুইপাতার চিঠিতে কী কী কারণে ফি কমালে স্কুল বন্ধ হয়ে যেতে পারে তা বিস্তারিতভাবে জানিয়েছেন পরিতোষ ক্যানিং।

kolkata
kolkata

By

Published : Jun 17, 2020, 5:05 AM IST

কলকাতা, 17 জুন: টিউশন ফি বা অন্যান্য ফি কমালে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন দেওয়া সম্ভব হবে না। তার ফলে স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে। অভিভাবকদের টিউশন ফি ছাড়া অন্যান্য ফি মকুবের দাবির মুখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে এমনই জানালেন কলকাতার বিশপ পরিতোষ ক্যানিং। দুইপাতার চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কোন কোন কারণে চার্চ অফ নর্থ ইন্ডিয়ার অধীনস্থ বেসরকারি স্কুলগুলিতে টিউশন ফি ছাড়া অন্যান্য ফি মুকুব করা সম্ভব নয় তা বিস্তারিতভাবে জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রীকে এবিষয়ে হস্তক্ষেপ করারও আবেদন জানিয়েছেন বিশপ।

কোরোনা আবহে চলা লকডাউনে ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিলেন বহু বেসরকারি স্কুলের অভিভাবকরা। ফলস্বরূপ রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বেসরকারি স্কুলগুলিকে আবেদন করা হয়েছিল, এই বছর যাতে তাঁরা ফি বৃদ্ধি না করে। একাধিকবার সরকারের সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে ফি বৃদ্ধি থেকে পিছিয়ে এসেছিল অধিকাংশ বেসরকারি স্কুল। কিন্তু, দীর্ঘ সময় ধরে চলা লকডাউনে আর্থিক সমস্যায় পড়েছেন অভিভাবকরা। তাই তাঁরা শুধুমাত্র টিউশন ফি ছাড়া অন্যান্য সব খাতের ফি মকুব করার দাবি তুলেছেন। লকডাউন চলাকালীন স্কুল কর্তৃপক্ষকে ই-মেইল করেও এক জুন থেকে পথে নেমে ফি মকুবের দাবিতে সরব হয়েছেন বহু বেসরকারি স্কুলের অভিভাবকরা। প্রায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও স্কুলের অভিভাবকরা স্কুলের সামনে গিয়ে জমায়েত করে, অবস্থান-বিক্ষোভ করে, রাস্তা অবরোধ করে একই দাবি জানাচ্ছেন। সেই প্রেক্ষাপটেই গতকাল মুখ্যমন্ত্রীকে কলকাতার বিশপের পাঠানো চিঠি বেশ কয়েকটি নামী বেসরকারি স্কুলের ফি মকুব না হওয়ারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

চার্চ অফ নর্থ ইন্ডিয়া, ডায়োসিস অফ কলকাতার অধীনে 11টি আন-এডেড ইংরেজি মাধ্যম ও 3টি DA গেটিং স্কুল রয়েছে। সেগুলি হল, কলকাতার লা মার্টিনিয়ার ফর বয়েস, লা মার্টিনিয়ার ফর গার্লস, প্র্যাট মেমোরিয়াল স্কুল, খিদিরপুরের সেন্ট থমাস স্কুল, খিদিরপুরের সেন্ট থমাস গার্লস স্কুল, হাওড়ার সেন্ট থমাস চার্চ স্কুল, ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের সেন্ট থমাস স্কুল, সেন্ট পলস মিশন স্কুল, সেন্ট জেমস স্কুল, ইউনিয়ন চ্যাপেল স্কুল, সেন্ট জনস ডায়োসিসান গার্লস হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল, ক্রাইস্ট চার্চ গার্লস হাইস্কুল এবং স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুল। এর মধ্যে স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলে গত সপ্তাহে ফি মকুবের দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন অভিভাবকরা। চার্চের অধীনস্থ স্কুলগুলির প্রেসিডেন্ট, চেয়ারম্যান তথা কলকাতার বিশপ পরিতোষ ক্যানিং মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চার্চ অব নর্থ ইন্ডিয়ার অধীনে থাকা স্কুলগুলি সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী 2020-21 শিক্ষাবর্ষে ফি বৃদ্ধি করেনি। কিন্তু, টিউশন ফি সহ অন্যান্য ফি না নিলে শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অশিক্ষক কর্মীদের বেতন সংকটের মধ্যে পড়তে হবে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশপ।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা দুইপাতার চিঠিতে কী কী কারণে ফি কমালে স্কুল বন্ধ হয়ে যেতে পারে তা বিস্তারিতভাবে জানিয়েছেন পরিতোষ ক্যানিং। তিনি লিখেছেন, "স্কুল শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশ অনুযায়ী 2020-21 শিক্ষাবর্ষে চার্জ অফ নর্থ ইন্ডিয়ার অধীনে থাকা স্কুলগুলিতে ফি বৃদ্ধি করা হয়নি। বর্তমানে রাজ্য সরকারের ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ মেনে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মীদের বেতন দেওয়া হচ্ছে। সেই মতোই এই বছর ফি বৃদ্ধি করা হয়েছিল। কিন্তু, পরে দপ্তরের নির্দেশ মেনে আমরা বর্ধিত ফি লাগু করিনি। আমাদের বেশিরভাগ স্কুল 150 থেকে 225 বছর পুরনো। স্কুলগুলিকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়মিত নজর ও বিপুল খরচ দিতে হয়। এর মধ্যে আমফান ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বিল্ডিং গুলিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অবিলম্বে সেগুলির সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। COVID-19 পরিস্থিতিতে আমরা নিয়মিত স্কুলগুলিকে স্যানিটাইজ় করছি, যার জন্য অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে।"

তিনি চিঠিতে আরও উল্লেখ করেছেন, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুয়িটি ফান্ড, পেনশন ফান্ড, কর্পোরেশন ট্যাক্সের মতো বিভিন্ন বিষয়ের জন্য নিয়মিত পেমেন্ট করতে হচ্ছে। লকডাউনের কারণে স্কুল বন্ধ থাকলেও CCTV, লিফ্ট, এসি, কম্পিউটারের মতো পরিকাঠামোগত জিনিসগুলো রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। আর্থিক খরচের এই ধরনের একাধিক কারণ দেখিয়ে বিশপ লিখেছেন, "আপনাদের আবেদন অনুযায়ী আমরা ফি বৃদ্ধি না করেই এই খরচগুলি বহন করার চেষ্টা করছি। এটা করার জন্য আমাদের স্কুল প্রোগ্রাম ও ফাংশনের বাজেট অনেকাংশে কমাতে হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র টিউশন ফি শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অশিক্ষা কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত নয়। যদি এই পরিস্থিতিতে আরও ফি কমানো হয় তাহলে শিক্ষকদের বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে সংকটে পড়তে হতে পারে। যার ফলে স্কুল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে শুধু শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং কর্মচারীদের উপর নয়, ছাত্র-ছাত্রীদের উপরেও এর প্রভাব পড়বে ৷ আমরা আপনার হস্তক্ষেপের আবেদন জানাচ্ছি।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details