কলকাতা, 14 জুন : মাধ্যমিকে (Madhyamik Examination) 35 শতাংশ নম্বর পেলেই উচ্চমাধ্যমিকে (Higher Secondary) পড়া যাবে বিজ্ঞান নিয়ে । উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের এই ঘোষণা হওয়ার পরেই স্কুলে স্কুলে পড়ুয়াদের বিজ্ঞান নিয়ে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছে (Schools inundated with requests to admit students to the HS science section) ৷ এর ফলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষগুলিকে ৷
কারণ, স্কুলগুলিতে বিজ্ঞান বিভাগের জন্য বরাদ্দ আসনের একটি নির্দিষ্ট সীমা রয়েছে ৷ বেশি আবেদন জমা পড়লেও, তা গ্রহণ করা সম্ভব নয় ৷ তাছাড়া কম নম্বর পাওয়া পড়ুয়াদের পরবর্তী ক্ষেত্রে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে সমস্যায় পড়তে হতে পারে ৷ তখন তাদেরই ভবিষ্যত নষ্ট হবে বলে মত শিক্ষাবিদদের ৷ সেক্ষেত্রে কাউন্সেলিংই একমাত্র পথ বলে মনে করছেন অনেকে ৷ তাই অনেক স্কুল ইতিমধ্যে পড়ুয়াদের কাউন্সেলিংও শুরু করেছে ৷
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, চলতি মাসের শুরুতে প্রকাশিত হয় এই বছরের মাধ্যমিকের ফলাফল ৷ তার পরই উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ (West Bengal Council for Higher Secondary Education) বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য মাধ্যমিকে ন্যূনতম 35 শতাংশ নম্বর পেতেই হবে ৷ গণিত, সংখ্যাতত্ত্ব, জীববিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, কম্পিউটার সায়েন্স ও ভূগোলে কমপক্ষে 35 শতাংশ নম্বর পেলেই এই আবেদন করা যাবে ।
গত বছর এই ক্ষেত্রে ন্যূনতম নম্বর ছিল 45 শতাংশ ৷ যদিও সংসদের দাবি, 35 শতাংশ নম্বর পেলে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা করা যাবে এই নিয়ম দীর্ঘদিনের ৷ শুধু গত বছর নিয়ম বদল করা হয়েছিল ৷ কারণ, গত বছর করোনা পরিস্থিতিতে 100 শতাংশ পরীক্ষার্থীই পাশ করেছিল ।
কিন্তু এবার বিষয়টি হইচই বেশি হয়েছে ৷ সেই কারণেই আবেদনের সংখ্যাও বেশি ৷ কৈলাস বিদ্যামন্দির স্কুলের টিচার ইনচার্জ রামকৃষ্ণ সরদার বলেন, "এই ঘোষণার পরে বহু ছাত্র-ছাত্রী যারা মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিষয়গুলিতে 35 শতাংশ নম্বর বা 40 শতাংশ নম্বর পেয়েছে তারাও ভর্তির আবেদন জানাচ্ছে । এমনকি মাধ্যমিকে অঙ্কে 25 নম্বর পাওয়া পড়ুয়ারাও বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার আবেদন জানাচ্ছে ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা তাদের যথাসম্ভব বোঝাবার চেষ্টা করছি । কারণ, এখন বিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হলেও পাঠ্যক্রম অনুধাবন করতে না পারলে পড়ে তাদেরই সমস্যায় পড়তে হবে । তাই এখনও পর্যন্ত ভর্তির মেধাতালিকা তৈরি করে উঠতে পারছি না ।" ওই স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগে আসন সংখ্যা 15 ৷ মাধ্যমিকে 60 শতাংশ নম্বর না পেলে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির ফর্মই দিচ্ছে না ওই স্কুল ৷
ঠিক একইভাবে শিয়ালদহ পার্ক ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা বলেন, "আমাদের স্কুলেও বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য বহু পড়ুয়া প্রতিদিন আসছে ৷ তবে আমরা তাদের কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করছি । এখন তারা বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হলেও পরে যদি তাদের পাঠ্যসূচি বুঝতে সমস্যা হয়, তখন আর ফেরার পথ থাকবে না । তাই তারা যেন বিষয়টি নিয়ে ভালোভাবে চিন্তা করে তবেই বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয় ।"
তিনি জানান যে কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে পড়ুয়াদের কাছে বাস্তব চিত্রটা পরিষ্কার হচ্ছে । অনেকেই তারপর কলা ও বাণিজ্য বিভাগে ওই স্কুলেই ভর্তি হচ্ছে । বিজ্ঞান বিভাগে পার্ক ইনস্টিটিউশনে মোট আসন সংখ্যা 40টি । যেই পড়ুয়ারা মাধ্যমিকের বিজ্ঞান এবং অঙ্কে 60 থেকে 65 শতাংশ নম্বর পেয়েছে, শুধুমাত্র তাদেরই ফর্ম দেওয়া হচ্ছে ।
স্কটিশ চার্চ স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিভাস সান্যাল বলেন, "কাউন্সিলের এই নোটিশ জারি হওয়ার পরে স্বাভাবিকভাবে অভিভাবক এবং পড়ুয়ারা আমাদের দ্বাদশ বিভাগে কম নম্বর থাকা সত্ত্বেও ভর্তি হওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করছে, তবে আমরা তাদের যথাসম্ভব বোঝানোর চেষ্টা করছি ।"
এই বিষয়ে তিনি বলেন, "ন্যূনতম যে নম্বর 35 শতাংশ দেওয়া হয়েছে সেখানে প্রজেক্টের উপরেই স্কুল থেকে 10 নম্বর দিয়ে দেওয়া হয় । অর্থাৎ সেই ভাবে দেখতে গেলে 25 শতাংশ নম্বরের ভিত্তিতেই ভর্তির আবেদন জানাচ্ছে পড়ুয়ারা । যেসব পড়ুয়ারা 45 বা 50 শতাংশ নম্বর পাচ্ছে, তারাও বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য আবেদন জানাচ্ছে । তবে আমাদের স্কুলের নিয়ম অনুসারে 60 থেকে 65 শতাংশের থেকে কম নম্বর পেলে কোনও মতেই ফর্ম দেওয়া সম্ভব নয় ।" উল্লেখ্য, স্কটিশ চার্চ স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগে মোট আসন সংখ্যা 150 ।
প্রসঙ্গত, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারপার্সন চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য ইটিভি ভারতকে আগেই বলেন, "নম্বরের এই নিয়মটি নতুন নয় । এবার দেখা গিয়েছিল যে 2023 সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়াবে গিয়ে 10 লক্ষের বেশিতে । যা সাধারণত দেখা যায় না । সাধারণত উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা 8 লক্ষের আশেপাশে থাকে । এবার সেই সংখ্যার মধ্যে যদি অনেকই বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায় তাহলে স্কুলগুলোর পক্ষ অত সংখ্যক ছাত্রছাত্রীদের ল্যাবের সুবিধা দেওয়া সম্ভব নয় । কারণ, বিজ্ঞানের অনেকগুলি বিষয় ল্যাবের প্রয়োজন । তাই সেই পড়ুয়া সংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য গত বছর 35 থেকে 45 শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল । তাই গতবছর একটি স্পেশাল অর্ডার করে এই নিয়মটি পরিবর্তন করা হয়েছিল ।"
তিনি আরও জানিয়েছিলেন যে বেশ কিছু বছর ধরে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করার উৎসাহ কমছে । তাই তাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য নম্বর দেওয়া হয় । এ ছাড়াও বহু ছাত্র-ছাত্রী হয়তো কোনও সমস্যার জন্য মাধ্যমিকের বিজ্ঞান বিভাগে ভালো ফল করতে পড়ল না । কিন্তু তার বাসনা যে সে ভবিষ্যতে বিজ্ঞান চর্চা করবে, তাই উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়বে । তাই সে সেই সমস্ত পড়ুয়াদের একটা সুযোগ করে দেওয়া উচিত বলে সংসদ মনে করে ।
আরও পড়ুন :Higher Secondary : মাধ্যমিকে 35 শতাংশ নম্বর পেলেই উচ্চমাধ্যমিকে পড়া যাবে সায়েন্স