কলকাতা, 10 অক্টোবর : করোনা সংক্রমণের জেরে একটানা দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। এরফলে সমস্যায় পড়েছেন গবেষণার সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের চরম অর্থনৈতিক ও শিক্ষা বিষয়ক সমস্যার সমুখীন হতে হচ্ছে। গবেষকরা তাঁদের গবেষণা ও তারপর চাকরি পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।
গবেষণার ফান্ডিংয়ের বা অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রেও ওই একই অবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বার্ষিক বাজেটে বড় ধরণের ধাক্কা লেগেছে। তাই গবেষকদের বৃত্তি বা অনুদান সময় মতো এসে পৌঁছচ্ছে না বলে অভিযোগ। বরাদ্দ অর্থ হাতে পাচ্ছেন না গবেষকরা। সবমিলিয়ে, পিএইচডির ক্ষেত্রে যেসব বৃত্তি বা অনুদান দেওয়া হয় তাতে অনেকটাই ভাটা পড়েছে অনেকটাই। গবেষণা করার জন্য যে বৃত্তি বা অনুদান দেওয়া হয় সেই অর্থে গবেষণার কাজ তো বটেই, গ্রাম ও শহরতলির বহু গবেষক শহরে এসে পড়াশোনার জন্য বাড়ি ভাড়া করে থাকেন। আবার এই অর্থের উপরে অনেকের সংসারও নির্ভর করে। তাই পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় গবেষণা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব ও গ্রন্থাগার বন্ধ থাকায় গবেষণার বিভিন্ন নথি ও বই পেতেও বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। কলকাতা শহরের সবকটি বড় বিদ্যালয়ের গবেষক পড়ুয়ারাই এই ধরণের সমস্যার মধ্যে পড়েছেন ৷
আরও পড়ুন : Presidency University Student Agitation: কলেজ খোলার দাবিতে আজও চলবে প্রেসিডেন্সির পড়ুয়াদের অবস্থান বিক্ষোভ
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের গবেষক অরুনাভ সেনগুপ্ত এপ্রসঙ্গে বলেন, "আমরা মূলত ড্রাই ল্যাবে কাজ করি। অর্থাৎ গবেষণার কাজের জন্য নানান বই ও জার্নাল পড়তে হয়ে । এইসব জার্নাল যে কোনও কম্পিউটার থেকে ডাউনলোড করা যায় না। এইগুলি শুধুমাত্র কলেজের কম্পিউটার থেকেই ডাউনলোড করতে হয় । তাই কলেজের গ্রন্থাগার ও ড্রাই ল্যাবগুলি বন্ধ থাকায় আমাকে সমস্যা পড়তে হয়েছে। " তিনি আরও বলেন, "তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল যে বহু ফেলশিপের ক্ষেত্রে দের থেকে প্রায় দুই বছর বন্ধ থেকেছে ফান্ডিং। এমনিতেই বেশ কিছু ফেলোশিপ আগেও তেমন একটা নিয়মিত এসে পৌঁছত না। লকডাউনের পর থেকে তো সেই সমস্যা আরও বেড়েছে।"
করোনার জেরে বন্ধ ল্যাবরেটরি ও লাইব্রেরি, বিপাকে গবেষক-শিক্ষার্থীরা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গবেষক এবিষয়ে বলেন, "আমি ওয়েট ল্যাবে কাজ করি। অর্থাৎ বিভিন্ন কেমিক্যাল ও তার সাথে অন্যান্য ক্যামিক্যালের মিশ্রণে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। গবেষণার জন্য প্রয়োজন 'হাই এন্ড' ল্যাব । তাই দীর্ঘদিন ধরে ল্যাবগুলি বন্ধ থাকায় ল্যাবের সব দামি দামি কেমিক্যালগুলি নষ্ট হতে বসেছে। রক্ষণাবেক্ষণের এর অভাবে বেশ কয়েকটি নষ্টও হয়ে গিয়েছে। আবার নতুন করে সমস্ত কেমিক্যাল কিনতে বিশাল অঙ্কের টাকার প্রয়োজন। আর ফান্ড অ্যালোকেশন অর্থাৎ বরাদ্দ অর্থ পেতে গেলে আবেদনের প্রক্রিয়া যেমনই জটিল, তেমনই সময় সাপেক্ষ। এরকম চলতে থাকলে পিছিয়ে যাবে গবেষণা পত্র জমা দেওয়ার কাজও। গবেষণা পত্র জমা দিয়ে চাকরি পাওয়ার সর্বোচ্চ বয়সসীমা 35 বছর। তাই গবেষক পড়ুয়ারা সময় মতো গবেষণা পত্র জমা দিতে না পারলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন ।"
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের গবেষক শিঞ্জিনী সরকার বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার এবং অন্যান্য গ্রন্থাগারগুলি বন্ধ থাকায় গবেষণা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের খুব অসুবিধা হয়েছে । আরওঅসুবিধা হয়েছে যারা আর্কাইভের কাজকর্ম করেন তাঁদের ৷ তাঁদেরকে বিভিন্ন আরকাইভ ও মিউজিয়ামে যেতে হয়। সেগুলি এখন বন্ধ। কবে আবার খুলবে তা নিয়ে পাকাপাকিভাবে এখনও কেউ কিছু বলতে পারছেন না। ডিপার্টমেন্ট এসোও সেভাবে কাজ করা যাছে না। অন্যদিকে প্রায় চার থেকে পাঁচ মাস স্কলারশিপের টাকা আটকে থাকার পর সম্প্রতি এককালীন কিছু টাকা পাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব স্ট্যাক হোল্ডাররা সময় মত টাকা পেলেও গবেষকদের টাকাই শুধু আটকে গেছে। গবেষণার যে সময়টা থাকে তার মধ্যে দু বছর পেরিয়ে গেছে। এখন এই অল্প সময়ের মধ্যে গবেষণার কাজ কি করে তাড়াতাড়ি এগিয়ে নিয়ে গিয়ে শেষ করব সেটাই সবথেকে বড় চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে।" যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে এই বিষয়ে তাঁর বক্তব্য জানতে বেশ কয়েকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।