কলকাতা, 3 জানুয়ারি :বড়দিনের রাত থেকেই আশঙ্কা দানা বাঁধছিল ৷ বর্ষবরণের রাতের পর সেই আশঙ্কাই সত্যি হল ৷ উৎসবের রাতগুলিতে জমায়েতের উপর ঢালাও ছাড় এবং বার, নাইটক্লাব এবং পাবে করোনাবিধির (Relaxation of Covid Restrictions during Festival) তোয়াক্কা না করেই চুটিয়ে খানাপিনা এবং মদ্যপান ৷ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এর ফলেই ফের একবার রাজ্যে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে করোনার গ্রাফ (Covid surge in West Bengal) ৷ এর মধ্যে কলকাতার অবস্থা সবথেকে শোচনীয় ৷
আরও পড়ুন :Local Train Time Changes : লোকালের বিধি বদল, শেষ ট্রেন রাত 10টায়
আর এখানেই উঠছে একাধিক প্রশ্ন ৷ যদি মুম্বই এবং দিল্লির মতো এই শহরেও উৎসবের রাতে প্রশাসন কঠোর হত, তাহলে হয়তো এই দুর্দিন আমাদের দেখতে হত না ৷ এটা প্রশাসনেরও অজানা নয় ৷ তাহলে কেন সেই সাহস দেখতে পারল না পশ্চিমবঙ্গের সরকার ও প্রশাসন ? ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের দাবি, আবগারি সর্বস্ব কোষগারের হাল ফেরাতেই শিয়রে শমন জেনেও কঠোর হতে পারেনি তারা ৷ রাজ্যের অর্থ দফতর ভাল মতো জানে, উৎসবের রাতগুলিতে মদের বিক্রি বহু গুণ বেড়ে যায় ৷ ফলে কম সময়ের মধ্যেই শুল্ক হিসাবে মোটা টাকা আসবে সরকারের ভাঁড়ারে ৷ আর সেই কারণেই ওমিক্রনের সতর্কতা সত্ত্বেও উৎসব পালনে ঢালাও ছাড় দিয়েছে রাজ্য সরকার ৷ উল্লেখ্য, এর আগে গত বছরের অক্টোবর মাসেও পুজো মরশুমে মদের বিক্রি বেড়েছিল ৷
পুজোর মরসুমে রাজ্যে মদ বিক্রির পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যায় ৷ 2021 সালের অক্টোবর মাসে 1 থেকে 12 তারিখের মধ্যে 1.46 কোটি লিটার দেশি মদ দোকানে তুলেছেন বিক্রেতারা ৷ যা গত পাঁচ বছরে সর্বাধিক ৷ ওই একই সময়ে মধ্যে খুচরো বিক্রেতারা 37.93 লক্ষ লিটার ভারতে তৈরি বিদেশি মদ দোকানে তুলেছিলেন ৷ আর দোকানে আনা বিয়ারের পরিমাণ ছিল 43.74 লক্ষ লিটার ৷ এই 12 দিনে সব মিলিয়ে খুচরো বিক্রেতারাই 720 কোটি টাকার মদ কিনেছিলেন ৷ আর রাজ্য় আবগারি দফতরের ঝুলিতে গিয়েছিল 550 কোটি টাকার রাজস্ব ৷ রাজ্য অর্থ দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, যদিও 24 ডিসেম্বর 2021 রাত থেকে 1 জানুয়ারি 2022 রাত পর্যন্ত মদ বিক্রির পুরো হিসাব এখনও পর্যন্ত সারা হয়নি, তবে এর পরিমাণ পুজোর মরশুমের কাছাকাছি বা তার থেকে খানিকটা বেশিও হতে পারে ৷
আবগারি সর্বস্ব কোষাগারের স্বার্থেই কি বড়দিন ও নতুন বছরের উৎসব পালনে ছাড় ? প্রাক্তন সাংবাদিক এবং অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ শান্তনু সান্যাল এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এটা পরিষ্কার যে আবগারি শুল্ক ছাড়া পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উপার্জনের আর কোনও স্থায়ী মাধ্যম নেই ৷ তাই রাজ্য সরকার এই পথে সর্বদাই আয় বাড়ানোর চেষ্টা করে ৷ আবারএটাও ঠিক যে উৎসবের মরশুমে মদের বিক্রি সর্বত্রই বাড়ে ৷ তবে দিল্লি কিংবা মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে আবগারি ছাড়াও অর্থ উপার্জনের অন্য পথ আছে ৷ তাই প্রশাসন সেখানে কঠোর হতে পেরেছে ৷ কিন্তু, কলকাতায় সেটা সম্ভব হয়নি ৷’’
আরও পড়ুন :Gangasagar Mela : গঙ্গাসাগর মেলা বাতিলের দাবিতে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা
প্রায় একই সুর শোনা গিয়েছে অর্থনৈতিক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ, নীলাঞ্জন দে-র গলায় ৷ তিনি বলেন, ‘‘আবগারি শুল্ক পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস ৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার একমাত্র সরকার নয়, যাদের কোষাগার বিশেষভাবে আবগারি শুল্কর উপর নির্ভরশীল ৷ আসন কথা হল সরকারের সদিচ্ছা এবং অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার প্রয়াস ৷’’ অর্থনীতির অধ্যাপক শান্তনু বসু বলেন, ‘‘পানশালাগুলি রাজ্য সরকারের আয়ের অন্যতম পথ ৷ তাই সরকারের পক্ষে সেগুলি বন্ধ রাখা সম্ভব নয় ৷’’