কলকাতা, 19 নভেম্বর : আজ সকালে ভার্চুয়াল সভা করে বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ তবে, তাঁর এই ঘোষণাকে সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেছেন রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল থেকে শুরু করে বিরোধী কংগ্রেস এবং বাম দলগুলি ৷ তাঁদের কথায়, আগামী বছরের শুরুতে উত্তরপ্রদেশ,পঞ্জাব সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে নির্বাচন ৷ এই কৃষি আইন প্রত্যাহার না করলে এই গোবলয়ের রাজ্যগুলিতে হারতে হতে পারে বিজেপিকে ৷ তাই ভোটকে উদ্দেশ্য করেই কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বলে মনে করছে রাজ্যের বিজেপি বিরোধী দলগুলি ৷
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষকদের নিরন্তর আন্দোলনের জয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন ৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেক কৃষককে আমার আন্তরিক অভিনন্দন ৷ যাঁরা বিজেপির নৃশংসতার কাছে মাথা নত না করে প্রতি মুহূর্তে অক্লান্ত লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন ৷ এটা আপনাদের জয় ! আর এই লড়াইয়ে যাঁরা নিজের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন, তাঁদের আমার সমবেদনা জানাই ৷’’
নির্বাচনী অঙ্কেই কৃষি আইন প্রত্যাহার মোদির, একসুর সৌগত-সুজন-মান্নানের আরও পড়ুন :Farm Laws Repeal : সংসদে কৃষি আইন প্রত্যাহার হলেই আন্দোলনে ইতি, জানালেন রাকেশ টিকায়েত
শুধু মমতা নন ৷ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ও কেন্দ্রে এই সিদ্ধান্তকে বিজেপির চক্রান্তের বিরুদ্ধে কৃষকদের জয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন ৷ পাশাপাশি বিজেপি সরকারের কৃষি আইন প্রত্যাহারকে নির্বাচনমুখী পদক্ষেপ বলে কটাক্ষ করেছেন সৌগত রায় ৷ তাঁর কথায়, আগামী বছরের শুরুতেই উত্তর ভারতে 5 রাজ্যের নির্বাচন রয়েছে ৷ সেই নির্বাচনে কৃষকদের ভোট বড় ফ্যাক্টর হতে চলেছে ৷ তাই নির্বাচনে ভরাডুবির হাত থেকে বাঁচতে বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন নরেন্দ্র মোদি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন বলে মনে করেন সৌগত ৷
আরও পড়ুন : Farm Law: জমা পড়া কৃষি আইনের রিপোর্ট প্রকাশের দাবি সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত প্যানেল সদস্যের
অন্যদিকে, সর্বভারতীয় কিষান সভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ৷ কিন্তু, প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণাকে তিনি বিশ্বাস করেন না বলে জানিয়েছেন হান্নান মোল্লা ৷ কারণ হিসেবে তিনি জানান, 2014 সালে নরেন্দ্র মোদি জমি অধিকার আইনের অর্ডিন্যান্স প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ৷ কিন্তু, তা এখনও সংসদে আটকে রয়েছেন ৷ তাই এই কৃষি আইন সংসদে প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর মুখের কথাকে বিশ্বাস করছেন না তিনি ৷
আরও পড়ুন : Priyanka Gandhi Vadra: আসন্ন নির্বাচনে হার নিশ্চিত বুঝেই কৃষি আইন প্রত্যাহার মোদির : প্রিয়াঙ্কা
প্রধানমন্ত্রী আজকের ঘোষণাকে বিজেপির হার এবং কৃষক আন্দোলনের জয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী ৷ তাঁর কথায়, ‘‘এটি ঐতিহাসিক দিন ৷ ভারতের কৃষি আন্দোলনের এটা অন্যতম বড় জয় ৷ কৃষকদের লাগাতার আন্দোলনের সামনে পরাক্রমশালী নরেন্দ্র মোদিকে মাথা নিচু করে ক্ষমা চাইতে হয়েছে ৷’’ কৃষি আইন প্রত্যাহারের পিছনে সর্বভারতীয় কিষান সভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লার অনেক বড় অবদান রয়েছে বলেও এদিন উল্লেখ করেন সুজন চক্রবর্তী ৷
কৃষি আইন প্রত্যাহারের পিছনে আসল উদ্দেশ্য নির্বাচন, মত বিরোধীদের আরও পড়ুন : Mamata Banerjee on Farm Laws : কৃষি আইন প্রত্যাহার কৃষক সমাজের জয়, বললেন মমতা
তবে, এদিন প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা প্রার্থনাকে কটাক্ষ করেছেন সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য ৷ তাঁর মতে, প্রধানমন্ত্রী কৃষি আইন প্রত্যাহারের পর যে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন, তা কৃষকদের কাছে করেননি ৷ প্রধানমন্ত্রীর সেই ক্ষমা প্রার্থনা ছিল কৃষি আইনের সমর্থনকারীদের জন্য ৷ কারণ, তাঁদের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে নরেন্দ্র মোদি সরকার ৷ অন্যদিকে, নরেন্দ্র মোদির এই ঘোষণাকে জনরোষ থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে কটাক্ষ করেছেন কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নান ৷ এতে প্রধানমন্ত্রীর কোনওরকম অনুতাপ নেই বলে অভিযোগ করেন তিনি ৷ উত্তর ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে আগামী কয়েক মাসে নির্বাচন ৷ সেই কারণেই নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপির এই কৌশল বলে মনে করেন মান্নান ৷