পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / city

বল খুঁজতে গিয়ে গ্রিলের ফলায় হাত এফোঁড়-ওফোঁড়, মৃত্যুর মুখ থেকে বাঁচলেন যুবক

পাঁচিল টপকে বল আনতে গিয়ে আচমকা পা পিছলে পাঁচিলের উপরে থাকা লোহার রেলিংয়ে পড়ে যান বেহালার এক যুবক ৷ রেলিংয়ের একটি ফলা তাঁর বাঁ হাতের কনুইয়ের কিছুটা উপর দিয়ে ঢুকে বেরিয়ে যায় কনুইয়ের নীচ দিয়ে । এ ভাবে বিঁধে থাকা অবস্থায় ওই রেলিংয়ের কিছুটা অংশসহ ওই যুবককে নিয়ে আসা হয় SSKM হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে । বিরল এই ঘটনায় ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারে সফল হন SSKM হাসপাতালের চিকিৎসকরা । যার জেরে প্রাণ ফিরে পান ওই যুবক ৷

জখম যুবক

By

Published : Nov 20, 2019, 1:38 AM IST

Updated : Nov 20, 2019, 2:31 AM IST

কলকাতা, 20 নভেম্বর : ক্রিকেট খেলার সময় বল খুঁজতে গিয়ে মৃত্যুর দোরগোড়া থেকে ফিরে এলেন এক যুবক । পাঁচিল টপকে বল আনতে গিয়ে আচমকা পা পিছলে পাঁচিলের উপরে থাকা লোহার রেলিংয়ে পড়ে যান তিনি ৷ রেলিংয়ের একটি ফলা তাঁর বাঁ হাতের কনুইয়ের কিছুটা উপর দিয়ে ঢুকে বেরিয়ে যায় কনুইয়ের একটু নীচ দিয়ে । এ ভাবে বিঁধে থাকা অবস্থায় ওই রেলিংয়ের কিছুটা অংশসহ ওই যুবককে নিয়ে আসা হয় SSKM হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে । রেলিংয়ের ওই অংশটি হাতের মধ্যে বিঁধে থাকায় যে কোনও মুহূর্তে মৃত্যু হতে পারত তাঁর । কিন্তু বিরল এই ঘটনায় ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারে সফল হন SSKM হাসপাতালের চিকিৎসকরা । যার জেরে প্রাণ ফিরে পান তিনি ৷

আরও পড়ুন : অন্য শিশুরা দেখতে পাবে, মৃত সন্তানের কর্নিয়া দান দম্পতির

ওই যুবক বেহালার বাসিন্দা । কলেজ পড়ুয়া । তবে বিষয়টি প্রকাশ্যে আনতে রাজি হননি তাঁর পরিবারের সদস্যরা ৷ যদিও বিরল এই ঘটনা প্রসঙ্গে SSKM হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ ওই যুবককে ট্রমা কেয়ার সেন্টারে নিয়ে আসা হয়েছিল ৷ তখন গ্রিলের একটি অংশ তাঁর হাতের মধ্যে গেঁথে ছিল । বাঁ হাতের একদিক দিয়ে ঢুকে গ্রিলের একটি ফলা হাতের অন্য দিক দিয়ে বের হয়ে ছিল । দ্রুত তাঁর চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া হয়েছিল । গ্রিলের অংশটি এমনভাবে গেঁথে ছিল হাতের মধ্যে যে যে কোনও মুহূর্তে সেখানকার মেজর শিরা, ধমনী বা নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল । তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায় হাতে গেঁথে থাকা গ্রিলের ওই অংশটির জন্য ভিতরে মেজর কোনও ইনজুরি হয়নি ৷

চিকিৎসক রুদ্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, " গ্রিলের একটি অংশ ওই রোগীর হাতের মধ্যে গেঁথে থাকলেও, গেঁথে থাকা ওই অংশের সঙ্গে গ্রিলের আরও অনেকটা অংশসহ রোগীকে আমাদের এখানে নিয়ে আসা হয়েছিল । গ্রিলের গোটা ওই অংশটির ওজন প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন কেজির মতো হবে । আমাদের দু'জন চিকিৎসক রোগীসহ গ্রিলের গোটা ওই অংশটি ধরে নিয়ে দ্রুত অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান । " সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক রুদ্রদীপবাবু আরও জানিয়েছেন, রক্তের জন্য ব্লাডব্যাংক থেকেও তৎপরতা নেওয়া হয় । দ্রুত রক্তের ব্যবস্থাও হয়ে যায় । প্রয়োজনে CTVS-এর চিকিৎসকদের সাহায্যের প্রয়োজন, এ কথা জানানো হলে, CTVS-এর একজন চিকিৎসকও দ্রুত চলে আসেন । এর পরে জেনেরাল অ্যানাসথেশিয়া করে শুরু হয় অস্ত্রোপচার । সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকারের অধীনে রোগীকে ভরতি নেওয়া হয়েছিল । তাঁর তত্ত্বাবধানে সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক রুদ্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, চিকিৎসক মোনালিসা খান, চিকিৎসক সৃজা বসু এবং CTVS-এর চিকিৎসক সৌম্যদর্শন সান্যাল অস্ত্রোপচার করেন ।

অস্ত্রোপচারের সময় চিকিৎসকরা দেখেন, গেঁথে থাকা গ্রিলের ওই অংশটি হাতের মেজর কোনও শিরা, ধমনী বা নার্ভকে ইনজুরি করেনি ঠিকই । তবে শিরা, নার্ভ বা ধমনীর গা ঘেঁষে রয়েছে ৷ রুদ্রদীপবাবু বলেন, "এর জন্য অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে গ্রিলের ওই অংশটি হাতের যেখান দিয়ে গেছে সেই বরাবর হাতের ওই অংশ কেটে গেঁথে থাকা গ্রিলের অংশটিকে বের করা হয় । গ্রিলের ওই অংশটিকে শিরা, ধমনী, নার্ভ বাঁচিয়ে বের করা হয় ।" তিনি আরও বলেন, " রোগী এখন হাত নাড়াতে পারছেন । কিন্তু যেহেতু একটি ফরেন‌ বডি ঢুকে গিয়েছিল ৷ তাই সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হলেও সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে । আমরা আশা করছি, ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে আগামী দিনে রোগীর হাতের অবস্থা আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে ।"

কতটা বিপজ্জনক ছিল অস্ত্রোপচার?

রুদ্রদীপবাবু বলেন, "বিরল এই অস্ত্রোপচার খুবই বিপজ্জনক ছিল । কারণ, এ দিক থেকে ও দিকে একটু নড়লেই হাতের মেজর শিরা, ধমনী, নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেত ৷ তাতে হাত কেটে বাদ দিতে হতো ।" জানান, ওই যুবকের বাড়ির লোকরাও খুব বুদ্ধিমানের মতো কাজ করেছেন । অন্য কোথাও দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন । তিন-সাড়ে তিন কেজির মতো ভারী গ্রিলের ওই গোটা অংশসহ রোগীকে খুব সাবধানে হাসপাতালে এনেছিলেন তাঁরা ৷ তিনি আরও বলেন, " হাসপাতালে নিয়ে আসার সময়ও অত ভারী গ্রিলের ওই অংশটি একটু এ দিক থেকে ও দিকে সরে গেলেই মেজর ইনজুরি হয়ে যেতে পারত । এই অস্ত্রোপচার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল । কারণ গ্রিলের অংশটি হাতের যেখান দিয়ে ঢুকেছে এবং যেখান দিয়ে বেরিয়েছে, হাতের মেজর শিরা, ধমনী, নার্ভ ওই জায়গা দিয়েই যায় । রোগী ভাগ্যবান যে মেজর শিরা, ধমনী বা নার্ভে সরাসরি কোনও ইনজুরি হয়নি ।" এই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হতে দেড় ঘণ্টার মত সময় লেগেছিল । অস্ত্রোপচারের সময় কোনও ভাবে কোনও রকম ইনজুরি যাতে না হয় তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল ৷ পাশাপাশি চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচারের সময় মেজর শিরা, ধমনী, নার্ভ ইনজুরি হলে তা মেরামতের জন্য প্রস্তুত ছিলেন তাঁরা ৷ শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই যুবকের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গেছে ।

Last Updated : Nov 20, 2019, 2:31 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details