কলকাতা, 22 জুলাই : 10 দিনে পড়েছে অনশন কর্মসূচি । পেরিয়ে গেছে 218 ঘণ্টা । এখনও অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (UUPTWA) 18 জন শিক্ষক-শিক্ষিকা । কারণ শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরও কাটেনি জট । আর্থিক কারণেই তাদের বেতন দাবিমতো বাড়ানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ৷ তা নিয়ে অনশনকারীদের বক্তব্য, সরকারের ইগো ও সদিচ্ছার অভাবই দাবিপূরণে প্রধান বাধা । আর্থিক অনটন তাঁদের ন্যায্য বেতনক্রম দেওয়ার পথে কোনও বাধা নয় ।
10 দিনে পড়েছে অনশন কর্মসূচি এদিকে টানা অনশনে একে একে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই। প্রত্যেকেই শারীরিকভাবে কমবেশি অসুস্থ । আজ সকালেও এক শিক্ষিকা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । তার মধ্যে গরমেও কষ্ট হচ্ছে অনশনকারীদের । UUPTWA-র রাজ্য সম্পাদিকা পৃথা বিশ্বাস বলেন, "কমবেশি সকলেই অসুস্থ । আমার নিজেরই পায়ে ক্র্যাম্প ধরেছে । বাকি অনেককেই হাসপাতালে যেতে হচ্ছে । শারীরিকভাবে দুর্বল হয়েছি, মানসিকভাবে নয় ।"
প্রত্যেকেই শারীরিকভাবে কমবেশি অসুস্থ অনশনকারী তন্ময় ঘোড়ুই বলেন, "কষ্ট তো হচ্ছেই । আস্তে আস্তে যখন রোদ বাড়ছে তখন কষ্ট হচ্ছে । আজকেও পারমিতাদি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন । প্রতিদিনই তিন-চারজন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভরতি হচ্ছেন আবার ফিরে এসে অনশনে বসছেন । মাঝেমধ্যে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে ।" অপর এক অনশনকারী রাজীব মণ্ডল বলেন, "শারীরিক কষ্ট তো হচ্ছেই । তার মধ্যেও এতজন শিক্ষকদের যে ভালোবাসা, শুভেচ্ছা রয়েছে, একটা যে মানসিক শক্তি যোগাচ্ছে, সেখানেই আমাদের শারীরিক অসুস্থতা অনেকটা লাঘব হয়ে যাচ্ছে ।"
এক শিক্ষিকা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এতদিনে সরকার কোনও সদুত্তর বা আশ্বাস দিতে পারল না । দাবিপূরণে সরকারের বাধা ঠিক কোথায় বলে মনে করছেন? তন্ময় ঘোড়ুই বলেন, "আসল সমস্যাটা টাকা নয়, আসল সমস্যা হচ্ছে ইগো বা মানসিকতা । সদিচ্ছার অভাব । এটা ওনার বড় সমস্যা ।" কোচবিহারের অরুণ দাস বলেন, "পশ্চিমবঙ্গের থেকে অনেক শোচনীয় পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে থেকেও PRT স্কেল অন্য অনেক রাজ্য মেনে নিয়েছে । সেই পরিস্থিতিতে আমরা বলতেই পারি আর্থিক অবস্থাটাই মুখ্য ব্যাপার নয় । সদিচ্ছার অভাবটাই হচ্ছে বড় কথা ।"
অনশনকারীদের বক্তব্য, সরকারের ইগো ও সদিচ্ছার অভাবই দাবিপূরণে প্রধান বাধা সরকারের প্রতি ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে আন্দোলনকারী আনন্দ দাস বলেন, "ক্লাবকে সাহায্য, বিভিন্ন রকম কার্নিভাল, বিভিন্ন রকম সরকারি প্রচার, ভোটব্যাঙ্ক আদায়ের জন্য অপ্রাসঙ্গিক ব্যয় করছে । সরকার একটা হিসাব হয়তো ভালো করে কষে রেখেছে যে, পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক শিক্ষকদের যদি এই পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয় তাহলে এই কাজগুলো তারা করতে পারবেন না । সরকারের কাছে সদিচ্ছার বড় অভাব ।" তবে, যতই সরকারের সদিচ্ছার অভাব থাকুক বা ইগোর কারণে সরকার তাঁদের দাবি পূরণ না করুক, নিজেদের দাবি আদায়ে আমরণ অনশন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা ।