কলকাতা, 11 নভেম্বর: আজ শিয়ালদা থেকে রাণী রাসমণি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত মহামিছিলের ডাক দিয়েছিল পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চ। 2011 সালে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের দাবিতেই ডাক দেওয়া হয়েছিল এই মহামিছিলের। কিন্তু, আজ সেই মিছিল করতেই পারলেন না রাজ্যের পার্শ্বশিক্ষকরা। তাঁদের অভিযোগ, এদিন শিয়ালদা স্টেশন থেকে বের হতেই মিছিলে অংশগ্রহণের জন্য আসা পার্শ্বশিক্ষকদের জোর করে আটক করে পুলিশ। দেড় শতাধিক পার্শ্বশিক্ষককে এন্টালি থানা ও লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয় পুলিশের গাড়িতে তুলে। পুলিশি বাধায় তাই আজকের কর্মসূচি করতেই পারেননি পার্শ্বশিক্ষকরা।
পার্শ্বশিক্ষকদের মিছিলে বাধা, শতাধিককে আটক করল পুলিশ
স্থায়ীকরণের দাবিতে শিয়ালদা থেকে রাণী রাসমণি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত মহামিছিলের ডাক দিয়েছিল পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চ। কিন্তু শিয়ালদা স্টেশন থেকে বের হতেই মিছিলে অংশগ্রহণের জন্য আসা পার্শ্বশিক্ষকদের জোর করে আটক করে পুলিশ। দেড়শতাধিক পার্শ্বশিক্ষককে এন্টালি থানা ও লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়।
2011 সালে ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী পার্শ্বশিক্ষকদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, 6 মাস থেকে 3 বছরের মধ্যে রাজ্যের সব পার্শ্বশিক্ষকের স্থায়ীকরণ করবেন। কিন্তু, সেই প্রতিশ্রুতি এখনও পূরণ করেননি মুখ্যমন্ত্রী। তাই মুখ্যমন্ত্রী যেন 2011 সালের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখেন, সেই দাবি অনেকদিন ধরেই জানিয়ে আসছেন রাজ্যের পার্শ্বশিক্ষকরা। আজ সেই দাবি জানিয়ে আবারও রাজভবন অভিযানের ডাক দিয়েছিল পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চ। সেই অভিমানের অংশ হিসেবে শিয়ালদহ থেকে রাণী রাসমণি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত মহামিছিলেরও পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। কিন্তু, পুলিশের বাধায় তা করা তো সম্ভব হয়নি। উলটে দেড় শতাধিক পার্শ্বশিক্ষককে পুলিশ জোর করে আটক করে বলে অভিযোগ পার্শ্বশিক্ষকদের।
আজকের ঘটনা নিয়ে পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চের যুগ্ম সম্পাদক ভগীরথ ঘোষ বলেন, "আজ 11 নভেম্বর। পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চের আহ্বানে মুখ্যমন্ত্রী 2011 সালে 3 জুন ঘোষণা করেছিলেন যে, 6 মাস থেকে 3 বছরের মধ্যে পার্শ্বশিক্ষকদের ধাপে ধাপে স্থায়ীকরণ করা হবে। সেই কাজ এখনও চালুই হয়নি, শেষ হওয়া তো দূরের কথা। দীর্ঘ 9 বছর পরেও তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতি, তাঁর দেওয়া ঘোষণা কার্যকর হয়নি। সেই কারণেই আমরা আজকে কলকাতার রাজপথে নামার একটা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলাম। সেই মোতাবেক আমাদের শিয়ালদা থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল ছিল এবং রাজভবন ও মুখ্যমন্ত্রী দপ্তরে আমাদের স্মারকলিপি দেওয়ার কথা ছিল। এই সভাতে আমরা মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীকেও আসার জন্য আহ্বান করেছিলাম। কিন্তু, এই কর্মসূচি শুরু হওয়ার প্রাক মুহূর্তেই নির্বিচারে পুলিশ আমাদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করে এবং আমাদের প্রচুর সঙ্গীকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার করে তাঁদের পুলিশের লকাপের মধ্যে রাখে।"
আজ প্রায় সারাদিন ধরেই আটক হয়ে থাকেন পার্শ্বশিক্ষকরা। পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হলেও আজকের এই অপমান না ভোলার প্রতিজ্ঞা করেছে পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চ। ভগীরথ ঘোষ বলেন, "আজকের এই অপমান বাংলার মানুষ ভুলবে না। আমরা আগামী দিনে আরও বৃহত্তর আন্দোলনে যাব এবং এই অপমানের জবাব কী করে দিতে হয় তা পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চ জানে, পার্শ্বশিক্ষকরা জানে।" এদিন পার্শ্বশিক্ষকদের সঙ্গে পুলিশ যে আচরণ করেছে তার প্রতিবাদ জানিয়েছে একাধিক শিক্ষক সংগঠন। রাইট টু এডুকেশন ফোরামের তরফে একটি বিবৃতিতে বলা হয়, "আজ প্যারাটিচারদের ন্যায্য আন্দোলনের উপর পুলিশের আক্রমণ এবং COVID পরিস্থিতিতে বলপ্রয়োগ করে আন্দোলনের নেতা-নেত্রীদের গ্রেপ্তার করাকে রাইট টু এডুকেশন ফোরাম পশ্চিমবঙ্গ তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছে এবং রাজ্যে গণতন্ত্রের উপর যে লাগাতার আক্রমণ চলছে এই ঘটনা তার আরেকটা প্রমাণ।"
মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির(STEA) সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র বলেন, "পশ্চিমবঙ্গের পার্শ্ব শিক্ষকদের উপর পুলিশি আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা সকলেই জানি দীর্ঘদিন ধরেই এ রাজ্যের পার্শ্বশিক্ষকরা আর্থিক ও সামাজিকভাবে নিদারুণ বঞ্চিত। পার্শ্ব শিক্ষকদের বঞ্চনা নিরসনে সরকারের কাছে বারবার আবেদন জানানোর পরও কোনও রকম সুরাহা না হওয়াতে তাঁরা প্রশাসন, পুলিশ ও সরকারকে অনেক আগে থাকতে জানান দিয়েই আজ মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের কাছে ডেপুটেশন কর্মসূচি রেখেছিলেন। তারই ভিত্তিতে এ রাজ্যের পার্শ্বশিক্ষকরা মিছিলের জন্য রাস্তায় নামার সঙ্গে সঙ্গেই অগণতান্ত্রিকভাবে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয় ও তাঁদের ওপর পুলিশি আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়। আমরা আমাদের সমিতির পক্ষ থেকে এই ধরণের অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।"