কলকাতা, 28 অগাস্ট: কোরোনা নিয়ে জেরবার অবস্থা রাজ্যের । রোজ বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা । এরই মধ্যে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গি । ইতিমধ্যে কলকাতা এবং জেলায় বেশ কয়েকজন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন । গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো টানা বর্ষণে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় তৈরি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি । ত্রিফলা এই আক্রমণ সামলাতে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে এগোতে চাইছে রাজ্য সরকার । প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা মনে করছেন, সঠিকভাবে পরিকল্পনা রূপায়ণ করা গেলে সামলানো যাবে কঠিন পরিস্থিতি ।
কোরোনা পরিস্থিতি ও তার মোকাবিলায় রাজ্য প্রশাসন
রাজ্য সরকারের প্রকাশিত সর্বশেষ বুলেটিন অনুযায়ী, রাজ্যে মোট কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা 1 লাখ 53 হাজার 754 । গতকাল নতুন করে কোরোনায় আক্রান্ত হয়েছেন 2982 জন । কোরোনা পরিস্থিতি সবথেকে খারাপ যে জেলাগুলিতে, তার মধ্যে রয়েছে উত্তর 24 পরগনা । সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর ধমকের মুখে পড়তে হয়েছিল জেলা প্রশাসনকে । প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন এলাকার কোরোনা সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা যাচ্ছে না ? উত্তর 24 পরগনা জেলাটি ভীষণই ঘিঞ্জি, চটকল রয়েছে, জনসংখ্যাও অনেকটা বেশি । তাই এই এলাকাগুলিতে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী । সম্প্রতি লাগাতার বৃষ্টির কারণে ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়া ও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ারও আশঙ্কা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী । একদিকে কোরোনা, অন্যদিকে ডেঙ্গি ও বন্যার কারণে ত্রিফলা সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে বলে আশঙ্কা করেছেন তিনি । এই ত্রিফলাকে বধ করতে রাজ্যকে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোনোর পরামর্শ দেন তিনি ।
কোরোনা মোকাবিলায় একাধিক পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার । কী সেই পরিকল্পনা ?
1. নির্দিষ্ট সময়ে অন্তর সব জেলার স্বাস্থ্যবিভাগ, জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বৈঠক করছেন মুখ্যমন্ত্রী । পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে নির্দিষ্ট সুপারিশ দেওয়া হচ্ছে ।
2. মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক ।
3. কলকাতা-সহ সংক্রমণের দিক থেকে এগিয়ে আছে এমন চার জেলায় নোডাল অফিসার নিয়োগ
4. আক্রান্তদের সঙ্গে স্বাস্থ্য দপ্তরের নিবিড় যোগাযোগের পরিকল্পনা
5. কনটেনমেন্ট জ়োনগুলি চিহ্নিত করে সেখানে সম্পূর্ণ লকডাউনের ব্যবস্থা
6. রাজ্যজুড়ে ফি-সপ্তাহে সম্পূর্ণ লকডাউন
7. মাস্ক ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক প্রচার
8. নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে নীতি নির্ধারণ কমিটি
9. হাসপাতালে উপর চাপ কমাতে সেফ হোম তৈরির পরিকল্পনা
আরও পড়ুন :কী করে বুঝবেন আপনি ডেঙ্গি আক্রান্ত ?
কোরোনার সংক্রমণ ঠেকাতে প্রয়োজন চটজলদি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত । আর সেই কারণে পরিকল্পনামাফিক এবার সংক্রমণের শীর্ষে থাকা চার জেলার জন্য নোডাল অফিসার নিয়োগ করেছে রাজ্য সরকার । সেই চার জেলা হল কলকাতা, উত্তর 24 পরগনা, দক্ষিণ 24 পরগনা এবং হাওড়া । চার জেলার জন্য চার জন অভিজ্ঞ IAS আধিকারিককে দায়িত্ব দেওয়া হয় । রাজ্যের মুখ্যসচিব চার জেলার জন্য চারজন নোডাল অফিসার নিয়োগ করেছেন । কলকাতার জন্য নোডাল অফিসার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে । দক্ষিণ 24 পরগনার জন্য নবীন প্রকাশ, উত্তর 24 পরগনার জন্য মনোজ পন্থ ও হাওড়ার জন্য রাজেশ পাণ্ডেকে নিয়োগ করা হয়েছে ।
সংক্রমণের নিরিখে সবার উপরে রয়েছে শহর কলকাতা । তাই এই শহরকে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে প্রশাসন । দায়িত্ব পাওয়ার পরেই কলকাতা পৌরনিগমে একের পর এক বৈঠক করেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় । সেই সূত্র ধরে চালু করা হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর । কলকাতা পৌরনিগমের সেই নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ করলেই টেস্টের জন্য আবাসনে বা মহল্লায় পৌঁছে যাচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের দল । তাঁরা কোরোনার পরীক্ষা করছেন । বাড়ি বাড়ি গিয়ে চলছে নজরদারি । পালস অক্সিমিটার-থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে করা হচ্ছে নিরবচ্ছিন্ন পরীক্ষা । পাশাপাশি ব্যাপক হারে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট চলছে ।
এদিকে রাজ্য সরকারের তরফে যে সেফ হোম তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল তা বাস্তবায়িত হয়েছে । এই প্রয়াস প্রশংসা কুড়িয়েছে দেশের বিভিন্ন মহলে । পাশাপাশি কেউ কোরোনা পজ়িটিভ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে ফোন যাচ্ছে স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে । উপসর্গহীন হলে বাড়িতেই চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে । সে ক্ষেত্রে টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত বিষয়ে সহায়তা করা হচ্ছে । যদি কারও বাড়িতে আইসোলেশনের সমস্যা থাকে তবে তাঁদের সেফ হোমে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে । যাঁদের উপসর্গ রয়েছে, তাঁদের স্বাস্থ্যের নিয়মিত খোঁজখবর রাখা হচ্ছে । প্রয়োজন হলে অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে রোগীদের নিয়ে আসা হচ্ছে হাসপাতালে । এভাবেই কোরোনা আক্রান্তদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখে পুরো বিষয়টি পরিকল্পনামাফিক রূপদানের চেষ্টা চালাচ্ছে স্বাস্থ্য দপ্তর ।
আরও পড়ুন :বিপদসীমা ছাড়াল গঙ্গা, বানভাসি মানিকচকের প্রায় 5 হাজার মানুষ
সঠিক পরিকল্পনা তৈরি এবং তার বাস্তবায়নের ফলও মিলছে । গত চারদিন ধরে নতুন করে সংক্রমণের থেকে সুস্থতার সংখ্যা বেশি । কার্ভ ফ্ল্যাটার্নের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রকাশিত শেষ বুলেটিন অনুযায়ী নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন 2982 জন । একদিনে সুস্থ হয়েছেন 3286 জন । গতকাল পর্যন্ত রাজ্যে সুস্থতার হার 80.86 শতাংশ । যদিও এতে আত্মতুষ্টি দেখাচ্ছে না প্রশাসনের শীর্ষমহল । শেষ প্রশাসনিক বৈঠকের উত্তর 24 পরগনা, হুগলি জেলার আধিকারিকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী । স্বাস্থ্যদপ্তরের এক আধিকারিক এ প্রসঙ্গে বলেন, "রাজ্য প্রশাসন চাইছে সুস্থতার হার 90 শতাংশে নিয়ে যেতে । সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে ।"
ডেঙ্গির সংক্রমণ মোকাবিলায় রাজ্য প্রশাসন
গত বছর এই সময়টায় রাজ্যের ডেঙ্গি পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছিল । সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যে 10 হাজার 500 জনেরও বেশি আক্রান্ত হয়েছিলেন । আর তাই এবার আগে থেকেই নেওয়া হয়েছে পরিকল্পনা । কোরোনা পরিস্থিতির মধ্যেই ডেঙ্গির প্রকোপ রুখতে এপ্রিল মাসে থেকে সক্রিয় হয়েছে রাজ্য সরকার । নেওয়া হয়েছে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা । এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কী কী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল ।
1. পৌর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের একজন যুগ্মসচিবে নেতৃত্বে ডেঙ্গি মোকাবিলা
2. গত এপ্রিল মাস থেকে শুরু হয়েছে লাগাতার প্রচার
3. ডেঙ্গি মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে পুরো দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পৌরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে
4. কলকাতায় জমা জল নিয়ে নিত্যদিন ড্রোনের নজরদারি
5. অ্যালাইজ়া পদ্ধতিতে ডেঙ্গির নমুনা পরীক্ষার জন্য বাড়তি পরিকাঠামো তৈরি
6. রাজ্যে ব্লকভিত্তিক ডেঙ্গি পরীক্ষা কেন্দ্র
7. বাড়ি বাড়ি স্বাস্থ্য-সমীক্ষা
8. নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখার জন্য খাল সংস্কার
কোরোনা আবহে রাজ্যের বেশিরভাগ ল্যাবরেটরি এখন ব্যস্ত । সেখানে এবার আর ডেঙ্গি পরীক্ষা হচ্ছে না । অথচ গত বছর রাজ্যের 72 টি কেন্দ্রে ডেঙ্গির নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল । কিন্তু কলকাতা মেডিকেল কলেজসহ জেলা হাসপাতালগুলির বেশির ভাগ ল্যাবরেটরি এখন কোরোনা পরীক্ষা কেন্দ্র । কলকাতা শহরেই মেডিকেল কলেজ-সহ একাধিক ল্যাব এই মুহূর্তে ব্যস্ত । সেদিকে নজর রেখে বাঘাযতীন স্টেট জেনেরাল হাসপাতাল, বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নতুন করে ডেঙ্গি পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে । অন্যদিকে জেলাগুলিতেও যেখানে কোরোনা পরীক্ষা হচ্ছে না, সেখানে ডেঙ্গি পরীক্ষা কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে ।
তথ্য বলছে, এখনও পর্যন্ত কলকাতা শহরে এবার ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা 90 । সেই সূত্রে পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষার উপর দেওয়া হচ্ছে গুরুত্ব । এই প্রক্রিয়া আগামী নভেম্বর মাস পর্যন্ত চালানো হবে । এদিকে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, "ডেঙ্গি মোকাবিলার জন্য দায়বদ্ধ পৌরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম । শেষ প্রশাসনিক বৈঠকের শেষে রাজ্য ও পৌর দপ্তরের সমন্বয়ের ঘাটতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । পৌরমন্ত্রীকে হালকা মেজাজে বলেছিলেন, "কোরোনায় বেঁচে গেছ, ডেঙ্গি হলে তোমায় ধরব ।"
তারপরেই এই বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম । তিনি স্বীকার করে নেন, নিয়ম না মেনে অনেক জায়গায় নির্মাণকাজ হওয়ার ফলে বেশকিছু নর্দমা বালি-সিমেন্ট বোঝাই হয়ে গেছে । ফলে, নিকাশের জল জমে যাচ্ছে । কলকাতা টালিনালা থেকে শুরু করে সার্কুলার ক্যানেল, সবকটি খালের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে । সবকটি পৌরসভা এবং পৌরনিগমের নিকাশি ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের ।
পাশাপাশি কলকাতা শহরজুড়ে নিকাশি নালার নতুন ডিজিটাল নকশা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পৌরনিগম । খড়গপুর IIT ও যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকে এই ডিজিটাল নকশা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে । এই নকশা তৈরি হতে এক বছর সময় লাগবে বলে জানা গেছে । খিদিরপুর থেকে শুরু হচ্ছে এই ডিজিটাল নকশা তৈরির কাজ । সেখানে একটি বড় নর্দমা তৈরির কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে । কাজ করতে গিয়ে দেখা যায় এই নিকাশি নালার মধ্যে দিয়েই জলের পাইপ এর লাইন গেছে । গিরিশ পার্ক, মুরারিপুকুর মুক্তারাম বাবু স্ট্রিট সহ বহু জায়গাতেই একই রকম সমস্যা । ডিজিটাল নকশা হলে সেই সমস্যা দূর হবে বলে জানিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম ।
গতবছর ডেঙ্গি সংক্রমণে শীর্ষে ছিল উত্তর 24 পরগনা । এবছর বহু আগে থেকেই পরিকল্পনা মতো কাজ করায় ডেঙ্গির সংক্রমণ অনেকটাই কম । গতবছরের নিরিখে এবছর এখনও পর্যন্ত সংক্রমণ লাগামছাড়া হয়নি বলেই স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রের খবর ।
তবে সম্প্রতি লাগাতার বৃষ্টির কারণে এই সংক্রমণ অনেকটাই বাড়ার আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য দপ্তরের এক শীর্ষ কর্তা । তিনি বলেন, "এই সময়টাই আসল চ্যালেঞ্জ । টানা বৃষ্টিতে শহরতলির অনেক অংশ জলমগ্ন । সেখানে নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক নেই । এই সময়ে বাড়তে পারে ডেঙ্গির প্রকোপ ।"
একদিকে কোরোনা, অন্যদিকে ডেঙ্গির আতঙ্ক । এই পরিস্থিতিতে কতটা তৈরি রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর ? এক নজরে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ।
- রাজ্যে মোট মেডিকেল কলেজ রয়েছে 13 টি । মেডিকেল কলেজগুলিতে মোট বেড সংখ্যা 12641 টি
- মোট জেলা হাসপাতাল রয়েছে 15 টি । মোট বেড রয়েছে 8204 টি ।
- মোট সাব-ডিভিশনাল হাসপাতাল রয়েছে 45 টি । বেড রয়েছে 9901 টি ।
- মোট স্টেট জেনেরাল হাসপাতাল রয়েছে 33 টি । বেড সংখ্যা 4899 টি ।
- অন্যান্য হাসপাতাল রয়েছে 33 টি এবং সেগুলিতে বেড রয়েছে 6504 টি ।
- রাজ্যে মোট গ্রামীণ হাসপাতাল রয়েছে 269 টি । বেড সংখ্যা 8820 টি ।
- ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে 79 টি । মোট বেড রয়েছে 1086 টি ।
- প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে মোট 909 টি । বেড রয়েছে 6492 টি ।
- রাজ্যে মোট উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে 10,335 টি ।
- রাজ্য সরকারের অন্য দপ্তরের অধীনস্থ হাসপাতাল রয়েছে 72 টি, তাতে মোট বেড রয়েছে 6212 টি ।
- স্থানীয় প্রশাসনের হাসপাতাল রয়েছে 31 টি । বেড সংখ্যা 1080 ।
- কেন্দ্রের অধীনস্থ হাসপাতাল রয়েছে 58 টি এবং সেগুলিতে মোট বেড রয়েছে 7126 টি ।
- রাজ্যে মোট বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে 2013 টি । সেগুলিতে মোট বেড রয়েছে 34,281 টি ।
- রাজ্যে বর্তমানে মোট কোরোনা পরীক্ষাকেন্দ্রর মধ্যে সরকারি ল্যাবরেটরি রয়েছে 56 টি ও বেসরকারি ল্যাবরেটরি রয়েছে 24 টি ।
বন্যা পরিস্থিতি ও তার মোকাবিলায় রাজ্য প্রশাসন
টানা বৃষ্টিতে শুধু ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ার সম্ভাবনাই নয়, উত্তরবঙ্গ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় তৈরি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি । টানা বৃষ্টিতে বিহার এবং অসমে বন্যার জল ঢুকে পড়ছে রাজ্যে । বেশকিছু জেলায় তৈরি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি । এদিকে লাগাতার বৃষ্টির কারণে রাজ্যের বেশকিছু নদী ফুঁসতে শুরু করেছে । মালদার ফুলহর এবং মহানন্দা নদীর জলস্তর কিছুদিন আগেও বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছিল । গতবছর ফুলহরের বন্যায় প্লাবিত হয়েছিল উত্তর মালদার বিস্তীর্ণ এলাকা । এবছরও হরিশ্চন্দ্রপুর দু'নম্বর ব্লকের ইসলামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর এবং দক্ষিণ ভাকুরিয়া, কাউয়াডোল, রামায়ণপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জল ঢুকতে শুরু করেছে । পাশাপাশি ফুঁসছে দামোদরও । তার জেরে প্লাবিত হয়েছে শ্যামপুর ব্লকের এইমা এবং আলিপুর গ্রাম । সুবর্ণরেখা নদীতেও বিপদসীমার উপর দিয়ে বইতে শুরু করেছে জল । গতকাল সেখানে বন্যার জল দেখতে গিয়ে তলিয়ে যায় তিন যুবক । তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে । বন্যা পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত হতে শুরু করেছে খানাকুলও । ইতিমধ্যেই এলাকার প্রায় 700 জন জলবন্দী । দাসপুরের বুড়িগাং নদীও ফুঁসছে । পরিস্থিতি মোকাবিলায় নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে চলতে চাইছে রাজ্য সরকার । কি সেই পরিকল্পনা?
1. পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখবে জেলা প্রশাসন
2. পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপ
3. DVC-র সঙ্গে যোগাযোগ
4. সেচ দপ্তরকে অতিরিক্ত সতর্ক থাকার নির্দেশ
5. রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরকে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য দেওয়া হয়েছে মূল দায়িত্ব
6. প্রতিদিন সকাল সাড়ে দশটায় মুখ্যসচিবের সঙ্গে বন্যা মোকাবিলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের বৈঠক
7. বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরকে নোডাল এজেন্সি করে 21 টি দলের সমন্বয়
কোরোনা-ডেঙ্গি-বন্যা মোকাবিলায় কতটা তৈরি রাজ্য প্রশাসন ? এ প্রসঙ্গে বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের মন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, "বন্যা পরিস্থিতি এর আগেও আমরা সামলেছি । আমাদের রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলা বন্যাপ্রবণ । সেদিকটা মাথায় রেখে আমরা নিয়মিত জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি । পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হচ্ছে ।"
সার্বিকভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিটি জেলায় অভিজ্ঞ আধিকারিকদের দায়িত্ব দিতে । তিনি বলেন, " যেমনভাবে ধান কেনার ক্ষেত্রে জেলায় জেলায় অভিজ্ঞ আধিকারিকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, যেমনভাবে কোরোনা নিয়ন্ত্রণে অভিজ্ঞদের নোডাল আধিকারিক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে, সেভাবেই বন্যা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দিতে হবে । কোরোনা নিয়ন্ত্রণে কেউ কেউ খুব ভালো কাজ করেছেন, কেউ কেউ পারেননি । বন্যা নিয়ন্ত্রণে সত্যি সত্যিই যাঁরা ভালো কাজ করতে পারবেন তাঁদের দায়িত্ব দিতে হবে । দরকার হলে এক একজন সিনিয়র অফিসার জেলায় একটু পরিস্থিতি ঘুরে দেখুক । কয়েকদিনের মধ্যে কোথায় জল জমবে, কোথাও জল ছাড়া হবে কি না, তা দেখে আমাদের পরিকল্পনা মাফিক কাজ করতে হবে । এতে ডেঙ্গি মোকাবিলাও সম্ভব হবে । এই যেমন একটু বৃষ্টিতেই হাওড়ায় জল জমে যায় । এ ব্যাপারে নগরোন্নয়ন দপ্তরকে বিস্তৃতভাবে প্ল্যানিং করতে বলা হয়েছে । কিন্তু এখন যেহেতু প্যানডেমিকের জন্য নির্বাচন করা যাচ্ছে না, যেহেতু এই মুহূর্তে কর্পোরেশন নেই, আরবান ডেভলপমেন্টের যিনি আধিকারিক আছেন, তার সঙ্গে জেলাশাসক ও ওয়ার্ডের যে কমিটি আছে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জমা জল দ্রুত সরানোর ব্যবস্থা করতে হবে । অনেক সময় নির্মাণকাজের জিনিসগুলি আমরা এমন ভাবে রেখে দিই যে খালগুলি বন্ধ হয়ে যায় । সেগুলি অবিলম্বে দেখতে হবে । সবাই রাস্তায় চোখ খুলে রাখলেই অনেক কিছু দেখতে পাবেন । আমাদের সমন্বয় রেখে কাজ করতে হবে ।"