কলকাতা, 10 মে: স্বামী-স্ত্রী এক পেশায় থাকলে ব্যক্তিত্বের সংঘাত হয়। বস্তাপচা এমন ধারণার স্থান নেই তাঁদের জীবনে। ডাঃ অমৃতা চক্রবর্তী ও ডাঃ মানস ভট্টাচার্য নিজেদের একে অপরের পরিপূরক বলতেই ভালোবাসেন। তাঁরা মনে করেন, কোরোনা যুদ্ধের মরিয়া লড়াইয়ে এই পার্টনারশিপ বাড়তি অক্সিজেন জোগাচ্ছে। তার চেয়ে বড় কথা, হাসপাতালে দিনরাত এক করে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন যে চিকিৎসক, তিনি একজন দায়িত্বশীল, স্নেহময়ী মা-ও। কোরোনা-আবহে বেলেঘাটা ID হাসপাতালের চিকিৎসক অমৃতা চক্রবর্তী যেন মাতৃদিবসের অনন্য প্রতিচ্ছবি ৷
বেলেঘাটা ID হাসপাতালে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন ডাক্তার অমৃতা চক্রবর্তী। নৈহাটির মেধাবী ছাত্রী চিকিৎসকের পেশাকে স্রেফ দশটা-পাঁচটার ডিউটি বলতে ভালোবাসেন না। তিনি বলেন, "অসুস্থ মানুষের মুখে সুস্থতার হাসি দেখতে ভালোবাসি আমি।" স্বভাবতই কোরোনা প্রকোপের এই দিনে দম ফেলার সময় নেই ডাঃ অমৃতা চক্রবর্তীর। কার্যত নাওয়াখাওয়া ভুলে রোগীর সেবায় অতন্দ্র প্রহরী হয়ে উঠতে হচ্ছে তাঁকে। এরই মধ্যে রয়েছে পরিবারের দায়িত্ব। অমৃতা চক্রবর্তী জানান, পেশা ও পরিবারে ভারসাম্য রক্ষার উৎসস্থল তাঁর স্বামী মানস ভট্টাচার্য এবং মেয়ে আদৃতা।
কোরোনা-আবহে রাজ্যের ব্যস্ততম বেলাঘাটা ID হাসপাতালের চিকিৎসক অমৃতা চক্রবর্তী বলেন, "একই পেশা মানে ব্যক্তিত্বের সংঘাত। আমি কিন্তু বুঝিনি। বরং, প্লাস পয়েন্ট দেখতে পেয়েছি। মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্লান্ত থাকলে সহমর্মিতার হাতটা এগিয়ে এসেছে আমার বেটার হাফের দিক থেকেই।"
এরপরই হাসিমুখে অমৃতা চক্রবর্তী জানান, "আমার যুদ্ধ জয়ের সিক্রেট এনার্জি কিন্তু মেয়ে আদৃতা। সন্তানের বড় হয়ে ওঠা দেখা একটা সুখকর অভিজ্ঞতা। সেই সন্তান যখন পরিণত হয়ে ওঠে তখন আরও ভালো লাগে। যা এই সময় আমি আমার মেয়ের মধ্যে দেখছি।"
গলায় ঝোলানো স্টেথোস্কোপের আড়াল থেকে উঁকি দেয় গর্বিত মা। বেলাঘাটা ID হাসপাতালের ব্যস্ত চিকিৎসক বলেন, "যখন কোরোনা ভাইরাস ডালপালা ছড়াচ্ছে তখন অন্য সকলের মতো আমিও আতঙ্কিত হয়েছিলাম। এখনও আতঙ্ক কেটে গিয়েছে বলব না। সেই সময় ভেবেছিলাম মেয়েকে নৈহাটিতে মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেব। কিন্তু, মেয়েই বলেছিল, এই লড়াই আমাদের সকলের। জয়-পরাজয়, মরি-বাঁচি, যা হবে একসঙ্গে মোকাবিলা করব। মা হিসেবে সন্তানের এই কথাগুলো আমাকে তৃপ্তি দিয়েছে। বলতে পারেন, ডাক্তার হিসেবে আমাকে কোরোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে উদ্বুদ্ধ করেছে আমার মেয়ে।"