কলকাতা, 13 অক্টোবর : বেসরকারি স্কুলগুলিকে 2019-20 শিক্ষাবর্ষে ফি নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তত 20 শতাংশ ছাড় দেওয়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট । বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও মৌসুমি ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিল আজ । আদালতের সাফ নির্দেশ, কোরোনার কারণে ল্যাবরেটরি, ক্রীড়া ইত্যাদির মতো অন্যান্য ফি এবছর নেওয়া যাবে না । আরও বলা হয়েছে, মহামারী পরিস্থিতিতে স্কুলগুলি সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশের বেশি লাভ রাখতে পারবে না । পাশাপাশি কলকাতা হাইকোর্ট তিন সদস্যের একটি কমিটিও তৈরি করে দিয়েছে, যারা পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করবে । সেই কমিটিতে আছেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তিলক বসু, এছাড়াও থাকবেন সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রিন্সিপাল এবং মামলাকারীদের আইনজীবী । যে সমস্ত ছাত্রছাত্রী ফি দিতে পারবে না বলে মনে করছে সেই ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকরা এই কমিটির কাছে তাঁদের আর্জি জানাতে পারবেন । কমিটি পুরো বিষয়টা খতিয়ে দেখে নির্দেশ দেবে । হাইকোর্ট কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছে, 7 ডিসেম্বরের মধ্যে স্কুলগুলি ছাত্রছাত্রীদের ফি ছাড়ের ব্যাপারে কতটা কী পদক্ষেপ নিয়েছে তার রিপোর্ট দিতে হবে ।
2019-'20 শিক্ষাবর্ষে ফি-তে 20 শতাংশ ছাড়, বেসরকারি স্কুলগুলিকে নির্দেশ হাইকোর্টের
বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও মৌসুমি ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিল আজ ।
কোরোনা পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ স্কুলে স্বাভাবিক পড়াশোনা বন্ধ । স্কুলগুলি স্বাভাবিক ভাবে না চলায় অভিভাবকদের দাবি ছিল, স্কুলগুলি যেন ফি-তে ছাড় দেয় ৷ এই বিষয়ে গত 20 জুলাই রাজ্যের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, লকডাউনের মধ্যে কোনও অভিভাবক বেতন দিতে দেরি করলে স্কুলগুলির তরফে কোনওরকম পদক্ষেপ করা যাবে না । বেতন দিতে দেরি হচ্ছে বলে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস বন্ধ করে দেওয়া বা পরীক্ষায় বসার ক্ষেত্রে যেন বাধা না দেওয়া হয়। সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, 2020- '21 শিক্ষাবর্ষে বাড়তি ফি চাপানো যাবে না, যাতে করে অভিভাবকদের উপর যেন বাড়তি চাপ না সৃষ্টি হয় ৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে স্কুল যে পরিষেবাগুলি দিতে পারেনি তার ফি নিতে পারবে না ৷ যেমন, স্কুলের বাস বা গাড়ি ভাড়া, কম্পিউটার, ল্যাবরেটরি ব্য়বহারের ফি ইত্যাদি ৷ 28 সেপ্টেম্বর কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্যের সমস্ত বেসরকারি স্কুলকে রাজ্যের বিজ্ঞপ্তি পর্যালোচনা করে মতামত দিতে নির্দেশ দিয়েছিল। তার আগে 14 সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট ফি কমানোর বিষয়টি স্কুলগুলিকেই ঠিক করতে নির্দেশ দেয় । এছাড়াও প্রত্যেক ক্লাসের জন্য আলাদা করে এবং অভিভাবকদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ফি ছাড়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ । যদিও আদালতের নির্দেশের পরেও সমস্যার সুরাহা হয়নি। বেশিরভাগ স্কুলের বক্তব্য ছিল, যে সমস্ত ছাত্রছাত্রী ফি দিতে পারবে তাদের ছাড় দেওয়ার প্রয়োজন কী ? যারা পারবে না তাদের বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখার নির্দেশ দিক আদালত । এই পরিস্থিতিতে আজ কলকাতা হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ, কোনওরকম ল্যাবরেটরি ফি, স্পোর্টস ফি, পিকনিক ফি চলতি বছরে নেওয়া যাবে না । স্কুলগুলি পাঁচ শতাংশের বেশি লাভ রাখতে পারবে না ।
গোটা রাজ্যের প্রায় 140টির বেশি স্কুলের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয় 7 জুলাই । অভিভাবকদের দাবি ছিল, কোরোনা পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ থাকলেও স্বাভাবিক ফি দাবি করা হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের থেকে । তাঁদের বক্তব্য, কিছু ফি মকুব করুক স্কুলগুলি । এরপর একাধিকবার এই মামলার শুনানি হয় । শেষ পর্যন্ত 18 অগাস্ট কলকাতা হাইকোর্ট ফি-র বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয় । যদিও সেই কমিটিও ফি সংক্রান্ত সমস্যা মেটাতে পারেনি । এরপর আজ 20 শতাংশ ছাড়ের নির্দেশ দিল আদালত ৷ এইসঙ্গে ডিভিশন বেঞ্চ নতুন তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দিল ৷ যারা যে সমস্ত ছাত্রছাত্রী ফি দিতে পারবে না তাদের বিষয়টি খতিয়ে দেখবে । 7 ডিসেম্বর ফের এই মামলার শুনানি হবে ।