কলকাতা ও শান্তিনিকেতন , 5 নভেম্বর : আকাশমনি গাছের ফাঁক দিয়ে দেখা যায় ফুলটুসির ঘর । রাঙামাটির দেওয়ালে আলকাতরার নকশা । সেই ঘরে শুয়ে থেকে দেখা যায় পূর্ণিমার চাঁদ । ওর বাবা রিক্সা চালায় । ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা । কিন্তু ফুলটুসির ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন । শিক্ষক হতে চায় বছর দশের কিশোরী । ফুলটুসির ইচ্ছে একটু একটু করে পূর্ণতা পাচ্ছে শান্তিনিকেতন থানায় । "পুলিশ দিদিমনি"র ক্লাসরুমে ।
শুধু ফুলটুসি নয় । রিয়া, দীপ্তি, কিশোর, ভজাইয়ের মত আরও অনেকের কলতানে মুখরিত হয়ে ওঠে রবি ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতন । ওদের টিউশনি পড়ার আর্থিক সঙ্গতি নেই । বিষয়টি অনুভব করেন বোলপুরের পূর্বতন SDPO অম্লানকুসুম ঘোষ । কেঁদে ওঠে অম্লানবাবুর মন । 2015 সালে গড়ে তোলেন শান্তিনিকেতন থানার ছোটদের পাঠশালা । 18 জন পড়ুয়া নিয়ে শুরু হয় জয়যাত্রা । প্রথমদিকে পুলিশকর্মী উত্তমকুমার দে, মৌসুমী ঘোষ, আশুরা খাতুন, মিঠুন কোনাই শুরু করেন শিক্ষকতার কাজ । সে কাজ এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন তারা । অম্লানবাবুর দেখা স্বপ্নের উপর ভর করেই সংসারী অমাবস্যার মাঝে পূর্ণিমার চাঁদ হয়ে আলো ছড়াচ্ছে ফুলটুসিরা ।
অম্লানবাবুর পোস্টিং হয়েছে অন্যত্র । কিন্তু স্বপ্নের পাঠশালা আজও আলো ছড়াচ্ছে শান্তিনিকেতনের বুকে । সৌজন্যে থানার OC কস্তুরী মুখোপাধ্যায় । তিনিই এখন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেই পাঠশালা । পড়ুয়াদের বই, খাতা ,পেনসিল, পেন থেকে শুরু করে যাবতীয় সামগ্রী জুগিয়ে যাচ্ছেন নিজের চওড়া কাঁধে । সমাজের প্রান্তিক শ্রেণীতে থাকা ফুলটুসিদের দেখাচ্ছেন এভারেস্টে ওঠার স্বপ্ন । আত্মনির্ভর করতে ওদের শেখানো হয় ক্যারাটে । আবার তাঁরাদের মাটিতে নামিয়ে আনার কল্পনাশক্তি তৈরিতে ওদের শেখানো হয় আঁকা । সব মিলিয়ে এক ব্যতিক্রমী কর্মকাণ্ড । যার এই মুহূর্তে প্রত্যক্ষ সাক্ষী 120 জন শিশু, কিশোর-কিশোরী।
"পুলিশ দিদিমনি"র ক্লাসরুমের পড়ুয়ারা দিন কয়েক আগের ঘটনা । মল্লারপুর থানায় এক নাবালকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় । বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক হইচই হয় । প্রশ্ন উঠে যায় জেলা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে । তখন কে বা ভেবেছিল রাজ্যের সেরা চাইল্ড ফ্রেন্ডলি পুলিশ পার্সোনাল অ্যাওয়ার্ড পেতে চলেছে বীরভূম জেলা । সব সমালোচনাকে পিছনে ফেলে বীরভূম জেলা জিতে নিল সেই পুরস্কার । সৌজন্যে কস্তুরী মুখোপাধ্যায় । রাজ্যের সেরা চাইল্ড ফ্রেন্ডলি পুলিশ পার্সোনাল অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন তিনি ।
সবটা জানার পর বীরভূম জেলা পুলিশ কর্তাদের বহু মেসেজ গিয়েছে কস্তুরীর ফোনে । তার বেশিরভাগেই একটাই বার্তা । চরৈবেতি ।