কলকাতা, 6 নভেম্বর : পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে 10 অক্টোবর। ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে 31 অক্টোবর। কিন্তু, অসম্পূর্ণ সেই ফলাফল। নেই সম্পূর্ণ মার্কশিট। তাই অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর কোর্সে ভরতির জন্য আবেদন করতে পারছেন না পড়ুয়ারা। এই অভিযোগ জানিয়ে ও দ্রুত সম্পূর্ণ মার্কশিট প্রকাশের দাবিতে আজ গোলপার্কে পরীক্ষা নিয়ামকের অফিসের বাইরে অবস্থান-বিক্ষোভ করলেন নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (NSOU) ছাত্র-ছাত্রীরা।
ঠিক কী সমস্যা দেখা দিয়েছে? বারুইপুর থেকে আসা নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা অনার্সের ছাত্র রঞ্জিত নস্কর জানান, তাঁদের চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর যখন তা চেক করা হয়, সেখানে 2019-এর একটা অপশন রয়েছে, তাতে ক্লিক করলে 17টা বিষয়ের বদলে 14টা বিষয় দেখাচ্ছে। আর তারপরে 2020-র লিঙ্কে ক্লিক করলে পরীক্ষার্থীদের মোট প্রাপ্ত নম্বর ও গ্রেড দেখাচ্ছে। আবার অন্য কারও ফলাফল দেখতে চাইলে অনেক ক্ষেত্রেই 'রেজাল্ট নট ফাউন্ড' দেখাচ্ছে। আর রেগুলার বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে স্নাতকোত্তর কোর্সে আবেদন করার শেষ তারিখ 10 নভেম্বর। পডুয়ারা সেখানে আবেদন করতে পারছেন না। কারণ, প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁদের অনার্স ও পাস বিষয়ের প্রত্যেকটিতে পাওয়া নম্বর চাইছে।
সম্পূর্ণ মার্কশিটের দাবিতে বিক্ষোভ নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের
একই অবস্থা এই বছর স্নাতকের এগজিট ব্যাচের অধিকাংশেরই। গত 3 নভেম্বর থেকে একদিন সল্টলেকে নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান অফিসে, কখনও গোলপার্কে পরীক্ষা নিয়ামকের অফিসে গিয়ে সম্পূর্ণ মার্কশিট প্রকাশের আবেদন জানানোর চেষ্টা করছেন ছাত্র-ছাত্রীরা। কিন্তু, সদুত্তর অধরাই ছিল তাঁদের কাছে।
মার্কশিটের সমস্যা নিয়ে বিজয়কৃষ্ণ গার্লস কলেজ স্টাডি সেন্টারের ভূগোলের ছাত্রী জানান, মোট নম্বর দিয়েছে, কিন্তু ইন্ডিভিজুয়ালি কোনও নম্বর দেয়নি। তিনটে বিষয়ের নম্বর কম দিয়েছে। যার জন্য তাঁরা M.A, M.Sc কোর্সে ভরতির জন্য আবেদন করতে পারছেন না। স্টেট ইউনিভার্সিটি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কোথাও ভর্তির আবেদন করা যাচ্ছে না ৷ এই মুহূর্তে তাঁরা চাইছেন বিষয়ভিত্তিক নম্বর দিয়ে দেওয়া হোক। তা না হলে পড়ুয়াদের একটা বছর পুরো নষ্ট হবে।
একই অবস্থা এই বছর স্নাতকের এগজিট ব্যাচের অধিকাংশেরই। গত 3 নভেম্বর থেকে একদিন সল্টলেকে নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান অফিসে, কখনও গোলপার্কে পরীক্ষা নিয়ামকের অফিসে গিয়ে সম্পূর্ণ মার্কশিট প্রকাশের আবেদন জানানোর চেষ্টা করছেন ছাত্র-ছাত্রীরা। কিন্তু, সদুত্তর অধরাই ছিল তাঁদের কাছে। এই পরিস্থিতিতে আজ বেলা 1টা নাগাদ আবারও গোলপার্কে পরীক্ষা নিয়ামকের অফিসের বাইরে জমায়েত করেন তাঁরা। প্রথমদিকে তাঁদের অভিযোগ ছিল, নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া আধিকারিক কেউ তাঁদের সঙ্গে কথা বলছেন না। ঘণ্টাখানেক পর বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করেন NSOU-এর পরীক্ষা নিয়ামক। প্রায় 1 ঘন্টা ধরে তার সঙ্গে কথা বলেন প্রতিনিধি ছাত্র-ছাত্রীরা। আর বাইরে চলতে থাকে অবস্থান-বিক্ষোভ।
বিক্ষোভ চলাকালীন সম্পূর্ণ মার্কশিটের দাবি নিয়ে কথা বলতে নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শুভশংকর সরকারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ETV BHARAT-এর প্রতিনিধিকে বলেন, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কনভেনশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটু পার্থক্য আছে। যাঁরা UG-র পড়ুয়ারা তাঁরা 2014-15 শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়। তাঁদের নিয়ম অনুযায়ী, পডুয়ারা 6 বছর নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের থাকতে পারেন। একটা সেশনের পরীক্ষা না দিয়ে পরবর্তী সেশনে উন্নিত হতে পারে এবং পরে ব্যাকলগ ক্লিয়ার করতে পারে। সেখানে ফ্রি-ফ্লোয়িং ব্যবস্থাটা রয়েছে। সেখানে এগজিট পরীক্ষার পড়ুয়ারা হয়ত ফার্স্ট ইয়ারের পরীক্ষাও দেয়, আবার থার্ড ইয়ারের পরীক্ষাও দেয়। নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের 2019-এর টার্ম এন্ড পরীক্ষা এবং 2020-র জানুয়ারির সেশনের পরীক্ষা অক্টোবরে একসঙ্গে হয়। তাই দুটো লিঙ্ক দেওয়া হয়েছে। আর আগে যে পেপারগুলিতে পড়ুয়ারা পাশ করেছে, সেগুলির প্রোগ্রেস রিপোর্ট তাঁদের কাছে আছে। তার সঙ্গে এবারের দুটো রেজাল্ট দেখলে তাঁরা সম্পূর্ণ রেজাল্টটা পাবেন। কিন্তু, অনেকবার তা পড়ুয়াদেরা বলা সত্ত্বেও অনেকে বুঝতে পারছে না।"
তবে, এই জটিল উপায় বুঝতে না পেরে ছাত্র-ছাত্রীরা চাইছেন, সব বিষয়ের নম্বর আলাদা আলাদাভাবে দিয়ে একটি মার্কশিট তাঁদের দেওয়া হোক। সে প্রসঙ্গে শুভশংকরবাবু বলেন, "গত পরশু থেকে সেন্টারগুলোর কাছে কম্পোজিট মার্কশিটের হার্ডকপি পৌঁছে যাচ্ছে। ওদের স্টাডি সেন্টার থেকে মার্কশিটগুলো সংগ্রহ করতে হবে। অনেকেই এখন যেতে পারছে না, সেন্টারগুলো বন্ধ আছে। পাশাপাশি, ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য আজকে বিকেল থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের কম্পোজিট স্টেটমেন্ট অফ মার্কস অনলাইনে আপলোড করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। গতকাল থেকেই বিশ্ববিদ্য়ালয় কর্তৃপক্ষ তা প্রকাশ করার কাজ শুরু করে দিয়েছে । এবছর পরীক্ষা, ভর্তি সবকিছুতেই দেরি হয়ে গেছে। ফলে এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে ৷ তিনি এও জানান, পড়ুয়াদের তরফে দাবি তোলায় কোনও অন্যায় নেই। যেহেতু, তাঁরা স্নাতকোত্তরে কনভেনশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতি হতে চায়। কিন্তু, তাঁদের একটু সময় লাগছে এই ব্যবস্থার সঙ্গে নতুনভাবে পরিচিত হতে।
উপাচার্যের কথার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একই আশ্বাস ছাত্র-ছাত্রীদের দেন পরীক্ষা নিয়ামকও। তাঁর সঙ্গে কথা বলে এসে বিজয়কৃষ্ণ গার্লস কলেজ স্টাডি সেন্টারের ছাত্রী স্বরলিপি ঘোষ জানান, কন্ট্রোলার জানিয়েছেন, আজকে বিকেল 5টার মধ্যে কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করবে অনলাইনে রেজাল্ট পাবলিশ করার। এই আশ্বাস পাওয়ার পর আজকের মতো বিক্ষোভ কর্মসূচি তুলে নেয় ছাত্র-ছাত্রীরা।