কলকাতা, 10 মার্চ : এই এলাকা কিছুটা উত্তেজনাপ্রবণ। কখনও বস্তি দখল, কখনও বা ক্লাবের দখলদারিকে কেন্দ্র করে চলে বোমাবাজি। এভাবে মাঝেমধ্যেই উত্তপ্ত হয় কলকাতার 107 নম্বর ওয়ার্ড। প্রকাশ্যে আসে শাসক-বিরোধী রাজনৈতিক দলাদলি ৷ সেসব ঘটনায় বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বিক্ষোভও দেখিয়েছেন স্থানীয়রা। পৌর পরিষেবার ক্ষেত্রেও রয়েছে কিছু অভিযোগ। যেমন, নিয়মিত জঞ্জাল সাফাই হয় না। পানীয় জলের সমস্যা আছে। তারপরেও 107 নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের মোটের উপর পছন্দের স্থানীয় কাউন্সিলর। এলাকায় কান পাতলে শোনা যায়, সুশান্ত কাজের মানুষ, কাছের মানুষও।
এক প্রান্তে পিকনিক গার্ডেন, তিলজলা। অন্যপ্রান্তে গরফা। সায়েন্স সিটি পার হলেই বাইপাসের পশ্চিম দিকে শুরু 107 নম্বর ওয়ার্ড । যা বিস্তৃত সেই হালতু পর্যন্ত। কলকাতা পৌরনিগমের অন্যতম বড় ওয়ার্ড এটি। মিশ্র বসতি। একদিকে রয়েছে ঝাঁ-চকচকে আবাসন। যেখানে উচ্চবিত্তের বাস। অন্যদিকে আছে বস্তি।
জঞ্জাল সাফাই নিয়ে অভিযোগ আছে স্থানীয় বাসিন্দাদের৷ বাম আমলে এলাকার উন্নয়নের দায়িত্বে ছিল কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি। গত পৌর নির্বাচনের পর KMDA সেই দায়িত্ব তুলে দেয় কর্পোরেশনের হাতে। শোনা যায়, সেই সঙ্গে দেওয়া হয় 300 কোটি টাকার আনুদান। বলতে গেলে গত পাঁচ বছরে এই ওয়ার্ডে সবথেকে বেশি খরচের অনুমোদন দেওয়া হয়। সেই অর্থেই গড়ে তোলা হয়েছে অনেকগুলি ছোটো পার্ক। সৌন্দর্যায়নে স্থানীয় পুকুরগুলিকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছে অবসর যাপনের জায়গা। যদিও ETV ভারতের ক্যামেরায় অন্য চিত্রও উঠে এসেছে৷ দেখা গেল, ওয়ার্ডের বহু জায়গায় জমে আছে আবর্জনার স্তূপ। যে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় স্থানীয়দের থেকে। কেউ কেউ স্বীকার করেন নিজেদের দোষ। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “সপ্তাহে একবার ঝাঁট দিতে আসেন সাফাই কর্মীরা। জঞ্জাল সাফাইও হয়। ভ্যাটও আছে। কিন্তু স্থানীয় মানুষ অনভ্যাসে নিয়মিতভাবে ভ্যাট ব্যবহার করেন না। তবে কাউন্সিলর খবর নেন।" 107 নম্বর ওয়ার্ডেরই অন্য একজনের বক্তব্য আলাদা৷ তিনি বলেন, “জঞ্জাল সাফাই ঠিকমতো হয় না। গাফিলতি রয়েছে।" তাঁর মতে, এতে ভুগতে হয় এলাকার মানুষকে। এছাড়াও ডেঙ্গি নিয়ে অভিযোগ রয়েছে এলাকায়৷ প্রতিবছরই ডেঙ্গি থাবা বসায় এখানে। অতীতে সচেতনতামূলক প্রচার অভিযানের নেমেছিল CPIM। সে সময় ওয়ার্ডে নিয়মিত ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হয়েছিল। পরে অবশ্য একাধিক অভিযোগ ওঠে বাম প্রতিনিধির বিরুদ্ধে৷
ঘুরতে ঘুরতে ETV ভারতের ক্যামেরা পৌঁছেছিল রাজডাঙার চক্রবর্তী পাড়ায়। সেখানকার মানুষ বলেন, “মাত্র আধ ঘণ্টা পানীয় জল আসে। জলের বেগও খুব কম। ফলে, স্থানীয়দের জল কিনে খেতে হয়।" তবে, এই বাসিন্দার মুখেও নেই কাউন্সিলর সম্পর্কে বড়সড় অভিযোগ। মহানগরের 107 নম্বর ওয়ার্ডের CPIM-এর ইলেকশন কমিটির কনভেনার রমেন সরকার এলাকায় বিরোধী নেতা হিসেবে পরিচিত। তাঁর বক্তব্য, “যতটা কাজ হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। বাম আমলে এই এলাকা কলকাতা মেট্রোপলিটন অথরিটির অন্তর্গত ছিল। ফলে উন্নয়নের দায়িত্ব ছিল কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির হাতেই। কিছুদিন আগে তারা সেই দায়িত্ব ছেড়ে দেয় কর্পোরেশনের হাতে। এরপরই 300 কোটিই অনুদান থেকে সৌন্দর্যায়ন হয়েছে। কিন্তু ভিতরের চেহারাটা আলাদা। এলাকায় ঠিকমতো জঞ্জাল পরিষ্কার হয় না। জল সমস্যার সমাধান আজও হয়নি। বলা যায় কাউন্সিলর ব্যর্থ।"
যাকে প্রশংসা, যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, শেষ পর্যন্ত ETV ভারত সেই 107 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষের মুখোমুখি হয়। আত্মবিশ্বাসী সুশান্তবাবু রীতিমতো তাঁর কাজের ফিরিস্তি দেন৷ বলেন, “পৌর পরিষেবার দিক থেকে যা যা দরকার ছিল একশো শতাংশ করা হয়ে গেছে। স্বাধীনতার পর থেকেই এই অঞ্চলে জলের অভাব ছিল৷ সেই অভাব পূরণ হয়েছে। চারটে পাম্পিং স্টেশন তৈরি করা হয়েছে। একটা আন্ডারগ্রাউন্ড বুস্টিং স্টেশন তৈরি হয়েছে। একটা ফুটবল খেলার মাঠ তৈরি করা হয়েছে৷ যেখানে ওপেন এয়ার জিম আছে। ছোটো-বড় মিলিয়ে 17টি নতুন পার্ক তৈরি করা হয়েছে গত পাঁচ বছরে। বয়স্কদের কথা ভেবে আলাদাভাবে তৈরি হয়েছে একটি পার্ক। যেখানে ওপেন এয়ার লাইব্রেরি রয়েছে। এলাকার স্বার্থে পুকুর সংস্কার করা হয়েছে।"
যদিও মাননীয় কাউন্সিলর যেমন বললেন পুকুরের চিত্রটা ETV ভারতের ক্যামেরায় তেমনটা উঠল না কিন্তু৷ দেখা গেল, পুকুর সংস্কার হলেও সেখানে আবর্জনার স্তূপ জমে রয়েছে। অথচ পুকুরের চারপাশে সৌন্দর্যায়ন হয়েছে! এদিকে ওই পুকুরের জল কোনওরকম ব্যবহারের অযোগ্য।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, আসন্ন পৌর নির্বাচনে 107 নম্বর ওয়ার্ডটি তপশিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত হয়েছে। ফলে এখান থেকে আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না সুশান্ত ঘোষ। অন্যদিকে গত লোকসভা নির্বাচনে এই ওয়ার্ডে 799 ভোটে BJP-র থেকে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। যা নিয়ে ভিতরে ভিতরে চিন্তায় রয়েছেন স্থানীয় নেতৃত্ব। পানীয় জল ও জঞ্জাল সমস্যা আগামী পৌরসভা নির্বাচনে শাসক দল তৃণমূলকে সমস্যায় ফেলে কি না সেটাই এখন দেখার।