কলকাতা, 27 জানুয়ারি : বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন 28 বছরের চিনা যুবতির শরীরে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সন্দেহজনক কোনও উপসর্গ খুঁজে পাওয়া যাইনি । যে কারণে, করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য তাঁর নমুনা পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজিতে পাঠানোর প্রয়োজন পড়ছে না । আজ বিকেলে এই কথা জানাল বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, যুবতির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ।
বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক তপন বিশ্বাস বলেন, "করোনা ভাইরাসের যে উপসর্গ প্রধানত শ্বাসনালীতে সংক্রমণ, এই রোগীর ক্ষেত্রে এই ধরনের কোনও সংক্রমণ পাওয়া যায়নি । করোনা ভাইরাসের কোনও উপসর্গ নেই । সুতরাং, আমরা এটাকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ভাবছি না । এই রোগীর শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল ।"
তবে, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রোগীকে আইসোলেশন ওয়ার্ডেই রাখা হয়েছে । এই রোগীর বিষয়টি নিয়ে পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । চিকিৎসক তপন বিশ্বাস বলেন, "পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে কেস ডিটেলস আমরা পাঠিয়েছি । ওখান থেকে যদি বলা হয় স্যাম্পেল পাঠানোর জন্য, তাহলে আমরা পাঠিয়ে দেখব করোনা ভাইরাস নেগেটিভ আছে কি না ।" এরপর এই রোগীর চিকিৎসার বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন ।
বর্তমানে রোগীর উপসর্গ ভিত্তিক চিকিৎসা চলছে । তবে, এই রোগীর শারীরিক অবস্থার বিষয়ে আজ বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিন্টেনডেন্ট কাম ভাইস প্রিন্সিপাল (MSVP) বলেন, "করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কি না, তা পরীক্ষার জন্য এই রোগীর নমুনা পাঠানোর প্রয়োজন হবে না বলে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি থেকে জানানো হয়েছে । ওখান থেকে আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, ক্লিনিক্যালি করোনা ভাইরাসের জন্য ভাবনা-চিন্তা নেই । এটা সাসপেক্টেড করোনা ভাইরাসের ইনফেকশনও নয় । যে কারণে নমুনা পাঠানোর প্রয়োজন পড়ছে না ।" MSVP বলেন, "এই রোগীর জন্য প্যারাসিটামল বাদে অন্য ওষুধ খুব একটা তেমন লাগেনি ।"
কোন ধরনের উপসর্গ নিয়ে এই রোগী এসেছিলেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, "গা বমি-বমি ভাব, পেটে ব্যথা, মাথার যন্ত্রণা, গা-হাত-পা ব্যথা, এই ধরনের সমস্যা নিয়ে এসেছিলেন ।" চিকিৎসক তপন বিশ্বাস বলেন, "জ্বর এবং শরীরে র্যাশ নিয়ে এই রোগী রবিবার রাতে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে এসেছেন ।" এই রোগীর ফুড পয়জনিং হয়েছিল বলে শোনা যাচ্ছে । এই বিষয়ে চিকিৎসক তপন বিশ্বাস বলেন, "রোগীর বক্তব্য অনুযায়ী তার পেটের সংক্রমণ হয়েছিল । রোগী এখন ভালো আছেন । তিনি হাসপাতালে থাকতে চাইছেন না । কিন্তু নিয়ম মেনে রোগীকে এখানে থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে ।"
ভাষাগত একটু সমস্যা শুরুর দিকে হচ্ছিল । এর জন্য রোগীর কথা বুঝতে একটু অসুবিধা হচ্ছিল । এই কথা জানিয়ে MSVP বলেন, "অনেকটাই সমস্যার সমাধান করা গিয়েছে । আমরা রোগীর পাসপোর্টের কপি সংগ্রহের চেষ্টা করছি । যাতে এই রোগীর পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আমরা জানতে পারি ।"
এ'দিকে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ সন্দেহে রবিবার রাতে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে এই চিনা যুবতিকে ভর্তি করানোর পর থেকে তৎপরতা বেড়ে যায় স্বাস্থ্য দপ্তরের । স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সচিব বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে এই চিনা যুবতির চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন । হাসপাতালের পরিকাঠামোর বিষয়টিও তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জেনেছেন । রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য সহ স্বাস্থ্য দপ্তরের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা আজ বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে আসেন । এই চিনা যুবতির বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি কোরোনা ভাইরাস মোকাবিলায় এই হাসপাতালের পরিকাঠামো খতিয়ে দেখেন । হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, চিনা এই যুবতি বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করছেন । মাস ছয় আগে তিনি চিন ছেড়েছেন । বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে গত 24 জানুয়ারি তিনি ভারতে এসেছেন ।