কলকাতা, 3 মার্চ: পাইকারি হারে ফৌজদারি মামলা প্রত্য়াহার করে বেকায়দায় রাজ্য সরকার ৷ সরকারের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ কলকাতা হাইকোর্ট ৷ ফৌজদারি মামলা এভাবে কখনই প্রত্য়াহার করা যায় না ৷ আদালতে রুজু হওয়া একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে বুধবার একথা সাফ জানিয়ে দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিবি রাধাকৃষ্ণণ ৷
শাসকদলের কর্মী বা সরকারপন্থী ব্য়ক্তিদের বিরুদ্ধে চলতে থাকা ফৌজদারি মামলা প্রত্য়াহার করে নেওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয় ৷ বিশেষ করে ভোট মরশুমে রাজনীতির সুবিধা, অসুবিধা মেপে এমন ঘটনা আকছারই ঘটে ৷
সূত্রের খবর, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগেই এমন বেশ কিছু মামলা প্রত্য়াহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য়ের তৃণমূল সরকার ৷ এর মধ্যে খুন, অপহরণ, খুনের উদ্দেশে অপহরণের মতো একাধিক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে ৷ এই ইস্য়ুতেই কলকাতা হাইকোর্টে রুজু হয়েছে একটি জনস্বার্থ মামলা ৷
বুধবার মামলাকারীর তরফে আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ৷ তিনি জানান, 2007 সালে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় বহু তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধেই ফৌজদারি মামলা রুজু করা হয় ৷ সূত্রের খবর, ভোটের আগেই এমন অন্তত 13টি মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার ৷
এভাবে ফৌজদারি মামলা প্রত্য়াহার করা যায় কিনা, আদালতের কাছে সেই প্রশ্নই রেখেছেন মামলাকারী ৷ আদালতের কাছে দ্রুত শুনানির আবেদনও করেছেন তিনি ৷ যা শুনে রীতিমতো ক্ষুব্ধ প্রধান বিচারপতি টিবি রাধাকৃষ্ণণ ৷ তাঁর পর্ষবেক্ষণ, ফৌজদারি মামলা কখনই এভাবে প্রত্যাহার করা যায় না ৷
প্রসঙ্গত, কোরবান শা হত্যা মামলায় ঠিক এভাবেই আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে ঝুলে থাকা মামলা প্রত্য়াহারের চেষ্টা করা হয়েছিল ৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর সম্ভব হয়নি ৷ মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় ৷
আরও পড়ুন:হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ, ডিভিশন বেঞ্চে আনিসুর রহমান
উল্লেখ্য, প্রায় তিনবছর অন্তরালে থাকার পর সম্প্রতি প্রকাশ্য়ে এসেই রাজ্য় সরকারের স্তূতি শুরু করেন গোর্খা নেতা বিমল গুরুং ৷ আগামী ভোটে খোলাখুলি মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ও তাঁর দলকে ফের একবার রাজ্যের ক্ষমতায় আনার পক্ষে সওয়াল করেন তিনি ৷ এরপরই তাঁর বিরুদ্ধে চলা প্রায় 70টি মামলা প্রত্য়াহার করে নেওয়ার তোড়জোড় শুরু করে রাজ্য ৷ তবে এর মধ্যে ইউএপিএ ও খুনের মামলাগুলি ছিল না ৷ রাজ্য়ের এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেন বিরোধীরা ৷ অভিযোগ ওঠে ভোটের ময়দানে স্বার্থ সিদ্ধি করতেই বিমলকে কাজে লাগাতে চাইছে রাজ্যের শাসকদল ৷ আর সেই কারণেই হঠাৎ তাঁর উপর সদয় হয়েছে রাজ্য সরকার ৷
এমন একটা প্রেক্ষাপটে কলকাতা হাইকোর্টে রুজু হওয়া এই মামলা এবং সেই প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতির মন্তব্য নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ ৷ ভোটের আগে বিরোধীরা এটাকে তাঁদের প্রচারের অস্ত্র করতেই পারেন ৷ আর তাতে মানুষের কাছে জবাবদিহির দায় বেড়ে যাবে সরকার পক্ষের ৷ পাশাপাশি, যে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্য়াহারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা যদি এর থেকে মুক্তি না পান, তাহলে দলের অন্দরেও নতুন করে কোন্দল বাড়বে ৷
এই প্রেক্ষাপটে আগামী শুক্রবার সংশ্লিষ্ট জনস্বার্থ মামলাটির ফের শুনানি হবে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির এজলাসে ৷