কলকাতা, 29 জুন: বর্তমান যুগে দেশের শ্রম আইনের অনেকগুলি ধারাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে (New Labour Law)। সেই কারণেই সংসদের 2019-2020 সেশনে চারটি লেবার কোড পাশ হয়েছে । শ্রম আইনের অন্তর্গত 44টি শ্রম আইনকে 'অপ্রাসঙ্গিক' বলে চিহ্নিত করা হয় । এরপর মোট 44টি আইনের মধ্যে 15টি বাতিল করা হয় এবং বাকি 29টিকে একত্রিত করে এবং সংস্কার করে চারটি শ্রম কোড তৈরি করা হয়েছে (New labour law implementation sparks debate)। এই চারটি শ্রম কোড -
1. দ্য কোড অফ ওয়েজেস 2019
2. দ্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশনস কোড 2020
3. দ্য কোড অন সোশ্যাল সিকিওরিটি 2020
4. দ্য অকুপেশনাল সেফটি হেল্থ অ্যান্ড ওয়ার্কিং কন্ডিশন কোড 2020
নতুন যে কোডগুলি আনা হচ্ছে তার কী প্রতিক্রিয়া পড়বে মানুষের মধ্যে,
- নয়া নিয়মে কর্মীদের সপ্তাহে 5 দিনের পরিবর্তে 4 দিন কাজ করার অনুমতি দিতে পারবে কোম্পানিগুলি
- কোম্পানিগুলি যদি সপ্তাহে 5 দিনের পরিবর্তে 4 দিন কাজ করতে বলে, তাহলে কর্মীদের দিনে 8 ঘণ্টার পরিবর্তে 12 ঘণ্টা কাজ করতে হবে, যাতে মোট কাজের সময়ের উপর কোনও প্রভাব না পড়ে
- কর্মীদের বেসিক বেতন গ্রস বেতনের 50 শতাংশ হতে হবে (Take home salary)৷ কর্মী ও কোম্পানিগুলির পিএফ কন্ট্রিবিউশনের পরিমাণ বাড়বে, ফলে টেক-হোম বেতন কমবে অর্থাৎ হাতে যে বেতন আসে তার পরিমাণ কমবে
- কোভিড পরিস্থিতিতে যে ওয়ার্ক-ফ্রম-হোমের কর্মসংস্কৃতি চালু হয়েছে নয়া নিয়মে তাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে
- কর্মী কাজে যোগ দেওয়ার 240 দিন পর ছুটির জন্য আবেদন করতে পারবেন
আগামী 1 জুলাই থেকে দেশজুড়ে কেন্দ্রীয় সরকার এই নতুন শ্রম আইন চালু করতে চলেছে ৷ তবে ইতিমধ্যেই বিরোধী শিবিরে নয়া আইন প্রণয়নের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ।
আরও পড়ুন:INTTUC Protest : নয়া শ্রম-নীতি নিয়ে কেন্দ্রের বিরোধিতায় সরব আইএনটিটিইউসি
আইএনটিটিইউসি'র রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এ ব্যাপারে বলেছেন, "এই নয়া লেবার কোড পুরোপুরি শ্রম ও শ্রমিক বিরোধী । আমাদের দেশের শ্রম আইনের মধ্যে 44টি আইন পেনের এক খোঁচায় বাতিল করে দিয়ে নতুন লেবার কোড আনা হয়েছে, যা পুরোপুরি শ্রম এবং শ্রমিকদের পরিপন্থী । 8 ঘণ্টা কাজের অধিকার কেড়ে নিয়ে তার পরিবর্তে 12 ঘণ্টা করে দেওয়া হচ্ছে ও সমস্ত ক্ষমতা মালিক পক্ষের হাতে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে । গোটাটাই একেবারে 'অ্যান্টি পিপল' এবং 'আন্টি লেবার'। এর আমরা তীব্র বিরোধিতা করছি । যদিও ইতিমধ্যেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন এই সর্বনাশা লেবার কোড চালু হবে না । তাই আমাদের রাজ্যে শ্রমিকদের চিন্তা করার কোনও কারণ নেই । সারা বিশ্বে 8 ঘণ্টা কাজের অধিকার দেওয়া হয়েছে, যা বিজ্ঞানসম্মত । পুরো পৃথিবী এই আইনকে স্বীকৃতি দিয়েছে । কাজেই কোনও রাজনৈতিক দল এই আইনকে প্রাসঙ্গিক মনে করল কি না তাতে সাধারণ মানুষের কিছু আসে যায় না ।"
এই একই কথা বলেছেন, সিআইটিইউ রাজ্য সম্পাদক ও রাজ্যের প্রাক্তন শ্রমমন্ত্রী অনাদিচরণ সাহু ৷ তিনি জানিয়েছেন, এই আইন একেবারেই যুক্তিসঙ্গত নয় এবং এই আইনের ঘোর বিরোধিতা করছেন তাঁরা । তিনি বলেন, "আমরা আগেও এই নয়া আইনের বিরোধিতা করেছি আবারও করব । এমনকী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানিয়েছেন যে, এই আইন রাজ্যে চালু হবে না । বামেদের সমস্ত শ্রমিক সংগঠন এর বিরোধিতা করছে । এই নিয়ে দিল্লিতে যে বৈঠক ডাকা হয়েছিল, সেই বৈঠকে আমরা সাফ আমাদের এই আইনের সম্বন্ধে বিরোধী মনোভাবের কথা ব্যক্ত করেছি ।"
অন্যদিকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, "আগে অনেকগুলো আইন নিয়ে লেবার ল ছিল । এই সমস্ত আইনকে একটা কোডের মধ্যে আনা হয়েছে, যাতে ভারতের শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হয় এবং শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষা করা যায় । এই কোড তৈরি করার আগে আমরা বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করেই লেবার কোড তৈরি করেছি । আগে আইন আসুক, তারপর মুখ্যমন্ত্রী এবং তার দল কী ধরনের বিরোধিতা করছেন সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমরা দেওয়ার জন্য তৈরি আছি ।"