কলকাতা, 1 জুলাই : ভদ্রলোক গ্রামের মানুষ ৷ পুকুরে স্নান রোজকার অভ্যাস ৷ সেদিন স্নান সেরে জল থেকে ওঠার আধঘণ্টা পরে গোল বাধল ৷ শুরু হল অসহ্য কানের যন্ত্রণা ৷ মাঝে মাঝে থামে ৷ যখন শুরু হয়... ত্রিভূবন অন্ধকার ৷ সবাই বলল, কানে জল ঢুকেছে ৷ কিন্তু, টোটকায় সারল না ৷ স্থানীয় ডাক্তার ফেল ৷ বাধ্য হয়ে পরিবার শুধ্দু কলকাতা পাড়ি ৷ 'ভগবান ডাক্তার'ই বাঁচাতে পারেন ৷ ততদিনে 'ভগবান ডাক্তার' রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও ৷ তথাপি, অতি ব্যস্ততার মাঝেও তিনি সকালে বিনা পয়সায় রোগী দেখেন ৷ তবে নির্দিষ্ট ৷ দিনে 16 জন ৷ তারপর হন্তদন্ত হয়ে রাইটার্স ৷
কানের যন্ত্রণার রোগী ও তাঁর পরিবার দেরিতে ঢুকে 17 নম্বরে ৷ 'ভগবান ডাক্তারে'র সহযোগী বললেন, হবে না ৷ এদিকে সহযোগীর সামনেই রোগী থেকে থেকেই যন্ত্রণায় অজ্ঞান ৷ মায়া হল সহযোগীর ৷ তিনি সবটা গিয়ে জানালেন 'ভগবান ডাক্তার'কে ৷ 'ভগবান ডাক্তার' বিরক্ত হলেন ৷ কী মনে করে ফিরে এলেন চেম্বারে ৷ দেখলেন রোগীকে ৷ রোগীর কিছু বলার সাধ্য নেই ৷ পরিবারই জানাল কবে থেকে যন্ত্রণা, কিভাবে ৷ 'ভগবান ডাক্তার' মিনিট পাঁচেক রোগীকে পর্যবেক্ষণ করে সহযোগীকে যা বললেন সহযোগী তাই করলেন ৷
যন্ত্রণায় কাতর রোগীকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে চেম্বারের বেঞ্চে শুইয়ে দেওয়া হল ৷ এর পর তাঁর দুই কানের পাশে দুটি প্লেটে বেশ কয়েকটি পাঁকা কাঠালের কোয়া রাখা হল ৷ ঘণ্টা তিনেক পর দেখা গেল আশ্চর্য ৷ রোগীর কানের ফুটো থেকে পিল পিল করে বেরিয়ে আসছে পিঁপড়ের লাইন ৷ ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে দুই কানের পাশে রাখা দুই প্লেটের কাঠালের কোয়ায় পিঁপড়ের ভিড় ৷ আসলে কোনওভাবে পানা পুকুরের পিঁপড়ে ঢুকেছিল রোগীর কানে ৷ তারা পাকা কাঁঠালের মিষ্টি গন্ধে বাইরে বেরিয়ে আসতেই বাঁচলেন রোগী ৷
'ভগবান ডাক্তার', ওরফে 'ধন্বন্তরী', ওরফে ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়কে নিয়ে এমন হাজারও বাস্তব অথবা মিথ ছড়িয়ে আছে বাংলা ছাড়িয়ে ভারতজুড়ে ৷ যিনি না-কি রোগীকে দেখেই বলে দিতে পারতেন শরীরের ভিতরে বাসা বেঁধেছে কোন রোগ ৷ হাজারও পরীক্ষা-নিরীক্ষা নির্ভর আজকের চিকিৎসকদের চিকিৎসা পদ্ধতির পাশে তাঁকে বাস্তবিক স্বর্গ থেকে নেমে আসা ভগবান বলেই মনে হয় ৷ যে কারণে মৃত্যুর 59 বছর পরেও ট্রেন-বাসে আমলকি, বেলের গুড়ো বেচা হকারদের বিজ্ঞাপনী কথনেও তিনি ৷ ডাক্তার বিধান রায় বলতেন যে দেশে বেল গাছ জন্মায়, সে দেশের মানুষ পেটের রোগে ভুগবে কেন, এমন অমুক তুমুক ৷
1 জুলাই যে জাতীয় চিকিৎসক দিবস ৷ তা কিংবদন্তি চিকিৎসক ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম ও মৃত্যুদিনকে স্মরণ করেই ৷ 1 জুলাই, 1882 সালে পাটনার বাঁকিপুরে জন্ম এই কৃতি বাঙালির । বাবার প্রকাশচন্দ্র রায়, মা অঘোর কামিনী দেবীর ছয় সন্তানের সর্বকনিষ্ঠ তিনি ৷ শোনা যায়, ব্রাহ্মনেতা ও 'নববিধান' ব্রাহ্ম সমাজের প্রতিষ্ঠাতা কেশবচন্দ্র সেন তাঁর নামকরণ করেন 'বিধান'। ছোট থেকেই মেধাবী ছাত্র বিধান রায় ৷ 1901-এ পাটনা কলেজ থেকে গণিতে সাম্মানিকসহ বিএ পাস করে কলকাতায় আসেন । কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে 1906 সালে এলএমএস এবং দু‘বছর পর মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সে এমডি ডিগ্রি লাভ করেন । এরপর 1909 সালে ইংল্যান্ড গিয়ে লন্ডনের বার্থোলোমিউ হাসপাতালে উচ্চশিক্ষার আবেদন করেন । এশিয়া মহাদেশের ছাত্র বলে প্রথমে তাঁর আবেদন গ্রাহ্য হয়নি । জানা যায়, নাছোড়বান্দা বিধানচন্দ্র 30 বার আবেদন করে সাফল্য পান । এরপর আরেক মিথ ৷ 1911 সালে মাত্র দু-বছর তিন মাস সময়কালে একসঙ্গে এমআরসিপি (লন্ডন) এবং এফআরসিএস (ইংল্যান্ড) পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হন ৷