কলকাতা, 21 মে :কিংবদন্তীদের পদাঙ্ক অনুসরণ নতুন কিছু নয় ৷ আমরা যারা খুব সাধারণ, তারা নানা সময়, নানাভাবেই তাঁদের অনুসরণ করার চেষ্টা করি ৷ এই প্রচেষ্টা একেবারেই নিজেদের উন্নীত করে আরও ভাল মানুষ হিসাবে প্রমাণ করার উদ্যোগ মাত্র ৷ কিন্তু কখনও কখনও এমন কিছু ঘটনাও ঘটে যায়, যা অনভিপ্রেত হওয়া সত্ত্বেও অতীতের কোনও স্মৃতিকে উসকে দেয় ৷ যার সঙ্গে হয়তো জড়িয়ে রয়েছে কোনও কিংবদন্তীর নাম ৷ যিনি নিজে অনন্য, অতুলনীয়, তেমনই কোনও সেরার সেরা মানুষের সঙ্গে হঠাৎ করেই জড়িয়ে যায় বর্তমানের কোনও ঘটনা প্রবাহ ৷
করোনা আবহে রাজ্যের উত্তাপ বাড়াচ্ছে পাঁচ বছর আগের এক অনভিপ্রেত ঘটনা ৷ 2016-এ সামনে আসে নারদ স্টিং অপারেশনের ফুটেজ ৷ অভিযোগ ওঠে, ঘুষ নেওয়ার ৷ কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের তৎকালীন কয়েকজন নেতা ও মন্ত্রীকে ৷
একুশের ভোটের পালা মিটতেই রাজ্যজুড়ে কার্যত লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার ৷ আর ঠিক তখনই শীতঘুম ছেড়ে ফের ময়দানে হাজির সিবিআই ৷ নারদ কাণ্ডে জালে তুলেছে চার হেভিওয়েটকে ৷ যাঁদের মধ্যে তিনজনই কলকাতা পৌরনিগমের প্রাক্তন মেয়র ৷ এঁরা হলেন, সুব্রত মুখোপাধ্য়ায়, শোভন চট্টোপাধ্য়ায় এবং ফিরহাদ হাকিম ৷
প্রথমে গ্রেফতারি, পরে অন্তর্বর্তী জামিন, তারপর তাতে স্থগিতাদেশ এবং সব শেষে গৃহবন্দি থাকার নির্দেশ ৷ সব মিলিয়ে ঘন ঘন বদলে যাচ্ছে নারদ কাণ্ডের লেটেস্ট আপডেট ৷ আর এই ঘটনাই মনে করিয়ে দিচ্ছে অতীতের এক লড়াইয়ের স্মৃতি ৷ যে স্মৃতি বাঙালির গর্বের, হয়তো বা কিছুটা অহংকারেরও ৷ কারণ, সেই ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে গোটা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ৷ জড়িয়ে রয়েছে বাঙালির দক্ষ নেতৃত্বের প্রামাণ্য দলিল ৷
1940 সালের জুলাই মাস ৷ পরাধীন ভারতে ইংরেজ শাসকের হাতে গ্রেফতার হন দেশনায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ৷ তবে কারাগারের বদলে তাঁর ঠাঁই হয় নিজের বাড়িতে ৷ বলা হয়, বাড়িতেই ‘বন্দি’ থাকতে হবে তাঁকে ৷ উদ্দেশ্য, ব্রিটিশ বিরোধী শক্তি বিশেষত জার্মানির সঙ্গে নেতাজির সখ্য বানচাল করা ৷ যদিও ইংরেজেদের সেই ফন্দি কাজে আসেনি ৷ তাদের চোখকে ফাঁকি দিয়েই গৃহবন্দি দশা থেকে নিজেকে মুক্ত করেন সুভাষচন্দ্র ৷ 1941 সালের 16 জানুয়ারি লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান তিনি ৷ তার পরের ঘটনা সকলেরই জানা ৷
প্রশ্ন উঠতেই পারে, রাজ্য়ের বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে এর সম্পর্ক কী ? আসলে গৃহবন্দি সুভাষচন্দ্রও কিন্তু ছিলেন শহর কলকাতার তৎকালীন প্রাক্তন মেয়র ৷ 1930 সালের 22 অগাস্ট থেকে 1931 সালের 15 এপ্রিল পর্যন্ত এই দায়িত্ব সামলেছিলেন তিনি ৷