কলকাতা, 13 জুলাই : সুরের সাক্ষী সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় । যন্ত্রশিল্পী নীরদবরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোট ছেলে । বাস হুগলির শ্রীরামপুরে । বাবা ছিলেন তাঁর সময়ের নামজাদা মানুষ । দেশে-বিদেশে তদানীন্তন গুণী শিল্পীদের সঙ্গে নিয়মিত ওঠাবসা ছিল তাঁর । ত্রিপুরার ব্রজেন বিশ্বাসের ব্রজতরঙ্গের কথা সুরকার শচিন দেব বর্মনের সৌজন্যে বিখ্যাত । বাংলাতেও নীরদবরণের কাষ্ঠতরঙ্গ সেই সময় একইভাবে সাড়া ফেলেছিল । আসলে তিনি পাশ্চাত্যের জ়াইলোফোনের (Xylophone) ভারতীয় সংস্করণ তৈরি করতে চেয়েছিলেন । সেটা যে ব্যর্থ ছিল না তা নীরদবরণের কাষ্ঠতরঙ্গে প্রমাণিত । তাঁর দীর্ঘ সফল সাঙ্গীতিক জীবনে তা ধরা পড়ে ।
1948 সালে সরোদ শিল্পী তিমিরবরণ ভট্টাচার্যের (Timir Baran) সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত করা ছাড়াও নীরদবরণ পণ্ডিত রবিশংকরের (Ravi Shankar) সফরসঙ্গী হয়েছিলেন একাধিকবার । বাবার সাড়া ফেলা দেওয়া যন্ত্রটি ছোটবেলায় নাড়াচড়া করতেন সোমনাথ এবং তাঁর দাদা নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় । উত্তরপুরুষের আগ্রহী মন দেখে তাঁদের জন্য বাঁশ দিয়ে বাঁশতরঙ্গ তৈরি করেছিলেন নীরদবরণ । "বাজার থেকে বিশেষ ধরনের তলতা বাঁশ জোগাড় করে তা মাস ছয়েক রোদে জলে পোক্ত করে যন্ত্রটি বানিয়ে দিয়েছিলেন বাবা । কীভাবে বাজাতে হবে তার তালিম দিয়েছিলেন", স্মৃতিচারণ সোমনাথের । এই পর্যন্ত দেখে মনে হতে পারে বাবার দেখানো পথে ছেলেরা পা বাড়াবে । ঢেউ উঠবে বাঁশতরঙ্গে । কিন্তু জীবন অঙ্ক মেপে চলে না । মাঝের সময়ে পারিবারিক ঝড়ঝাপটায় কাষ্ঠ এবং বাঁশতরঙ্গ দু'টো যন্ত্রই বাড়ির এক কোণে পড়েছিল ।
সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কলেজ জীবনে নবীনবরণ অনুষ্ঠানে এই যন্ত্র বাজিয়েছিলেন । স্বাভাবিক ভাবেই কাঠ এবং বাঁশের তৈরি যন্ত্রের সুরেলা শব্দ শ্রোতাদের আগ্রহী করেছিল । শ্রোতারা আগ্রহী হলেও সোমনাথ নিজে আর বিষয়টি নিয়ে উৎসাহী হননি । বরং জীবন সংগ্রামে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেই চেয়েছিলেন । কিন্তু সুরের সাক্ষী যে একবার হয়েছে সে আটকে থাকে কীভাবে ? এই কাজে সোমনাথবাবুর সূত্রধর স্ত্রী গীতা । পেশায় স্কুল শিক্ষিকা গীতা 2010 সালে নীরদবরণের সম্মানে সঙ্গীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করার পরিকল্পনা দেন সোমনাথবাবুকে । সেখানে বাঁশতরঙ্গ বাজিয়ে সোমনাথ ফের চমকে দেন শ্রোতাদের । এরপর থেকে প্রতি বছর এই অনুষ্ঠান হয়ে আসছে, যা শ্রীরামপুরের একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠানও বটে ।