কলকাতা, 26 সেপ্টেম্বর : তখন BJP-তে সদ্য পা রেখেছেন মমতার "কানন" শোভন চট্টোপাধ্য়ায় ৷ শোনা যায়, একদিন 'অসহিষ্ণু' শোভনকে নতুন দলে এসে ধৈর্য রাখার উপদেশ দিয়েছিলেন মুকুল রায় ৷ নিজের উদাহরণও শোভনকে তুলে ধরেন মুকুল ৷ শোভন সেই পরামর্শ গ্রাহ্য করেছিলেন কি-না জানা না গেলেও মুকুল রায় তাঁর ধৈর্যের পুরস্কার পেলেন এতদিনে ৷ 2021-এর বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে মুকুল রায়কে BJP-র সর্বভারতীয় সহসভাপতির দায়িত্ব দিল BJP-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
আজ দিল্লি থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে BJP-র কেন্দ্রীয় কমিটির তালিকা ঘোষণা হল। শুধু মুকুল-ই নন, রাজ্য় BJP এই তালিকায় গুরুত্ব পেল ৷ জাতীয় মুখপাত্র হলেন দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তা ৷ অন্য়দিকে গত লোকসভা ভোটে যাদবপুরে মিমির কাছে ভোটে হারলেও নতুন কেন্দ্রীয় সম্পাদক হলেন অনুপম হাজরা। অনুপমের এই পদোন্নতিতে রাজ্য় BJP-র অনেক নেতাই অবাক হয়েছেন ৷ চতুর্থ দফা লোকসভা ভোটের দিন আচমকা বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চলে যান অনুপম হাজরা। শুধু দেখাই নয়, অনুব্রতের সঙ্গে বসে জমিয়ে মাছ-ভাতে মধ্যাহ্ন আহারও করেন যাদবপুরের BJP প্রার্থী। মুকুলের হাত ধরে BJP-তে আসেন অনুপম ৷ তাই তাঁর এই আচরণে দলের মধ্যে অস্বস্তি বাড়িয়েছিল মুকুলেরও ৷ অস্বস্তি কাটাতে সাততাড়াতাড়ি মুকুল রায় অনুপমকে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকও করেন ৷ এরপরও নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন অনুপম ৷
BJP-তে নতুন পদ পাওয়ার পর মুকুল রায় বলেন, "আমি দলের একজন একনিষ্ঠ সৈনিক । দল আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে, সেই দায়িত্ব নিয়ে কাজ শুরু করব। " আজ BJP-র সর্বভারতীয় জেপি নাড্ডাকেও ধন্যবাদও জানান তিনি ।
2017 সালের 3 নভেম্বর ৷ মুকুলের পদ্মে অভিষেক ঘটে ৷ দিল্লির অশোক রোডে BJP-র সদর কার্যালয়ে এসে অমিত শাহের সঙ্গে মিনিট তিনেক সাক্ষাৎ ৷ আর তারপরই মুকুলের BJP-তে যোগদান ৷ মাঝে কেটে গিয়েছে প্রায় আড়াই বছর ৷ রাজ্য় BJP-তে এক প্রকার ব্রাত্য়ই থেকে গিয়েছিলেন একসময় তৃণমূলের সেকেন্ড কমান্ড ৷ মাঝে বলার মতো, পৌরভোট ও লোকসভা নির্বাচনে দলের নির্বাচনী আহ্বায়ক হন ৷ কখনও শোনা গিয়েছে, তিনি কেন্দ্রে পূর্ণমন্ত্রী হচ্ছেন, কখনও আবার রাজ্যসভা থেকে সাংসদ হওয়া নিয়েও জল্পনা ছড়িয়েছে ৷ কিন্তু জল্পনা বাস্তবে ডানা মেলেনি ৷ মুকুল রায়কে যখনই এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, তিনি বলেন, "আমার কাছে এরকম কোনও খবর নেই ৷ আমার একটাই লক্ষ্য রাজ্য থেকে তৃণমূলকে সরানো ৷"
নতুন প্রকাশিত কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে এবার বাদ পড়লেন রাহুল সিনহা ৷ তিনি যে এবার বাদ পড়বেন তা আগেই BJP-তে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল অনেক দিন আগে থেকে ৷ উত্তর কলকাতায় লোকসভা ভোটে অমিত শাহের প্রচারের পরেও ভাগ্যে শিকে না ছেঁড়ায় তখনই প্রায় ব্রাত্য হয়ে গিয়েছিলেন রাহুল ৷ ICCR-এ BJP-র সাংগঠনিক বৈঠকের সময় তাঁর এই পরাজয়কে নিজের বক্তব্যে হাসি-মসকরাও করেন রাজ্যের প্রধান কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় ৷
তবে, মুকুলের এই পদপ্রাপ্তি রাজ্য দলের মধ্য়ে তাঁর গুরুত্ব যে বহুগুণ বেড়ে যাবে তা বলাই বাহুল্য ৷ বিশেষ করে বিধানসভা নির্বাচনে BJP-র প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মুকুল রায় আগের থেকে অনেক বেশিই গুরুত্ব পাবেন ৷ বাস্তবিক, নতুন কমিটিতে মুকুলের পদের গুরুত্ব এখন তাঁর ফ্রেন্ড ও গাইড কৈলাস বিজয়বর্গীয়র থেকেও বেশি ৷ লোকসভা ভোটের আগে বেশ কিছু জায়গায় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মুকুলের কথা শোনেননি দিলীপ ঘোষের শিবির ৷ শোনা যায়, ঘনিষ্ঠ মহলে এজন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাজ্য রাজনীতির এই চাণক্য ৷ তাঁর বিশ্বাস, তাঁর কথা আরও একটু শোনা হলে লোকসভাতে BJP-র আসন আরও বাড়ত ৷ মুকুল-কৈলাস জোটের সঙ্গে দিলীপ-সুব্রত চট্টোপাধ্যায়রা এখন কেমনভাবে মানিয়ে নেবেন এখন সেই প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে ৷
জে পি নাড্ডা BJP-র সবর্ভারতীয় সভাপতি পদের দায়িত্ব পান জানুয়ারি মাসে ৷ প্রায় সাত-আট মাস পর তিনি নতুন কমিটি প্রকাশ করলেন ৷ নতুন কমিটিতে মুকুলের সঙ্গে সহসভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন ছত্তিশগড়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রমন সিং, রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া, ওড়িশার জয় পান্ডাও। দার্জিলিংকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যে আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছে তা রাজু বিস্তার মতো একেবারে নতুন মুখকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিয়ে আসা প্রমাণ করে ৷ সূত্রের খবর, BJP-তে মুকুলের এতদিন ব্রাত্য থাকায় তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতাই না-কি BJP-তে য়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা তুলে রাখেন ৷ এখন প্রশ্ন, মুকুলের পদ্মে এই গুরুত্ব তাঁদের কি নতুন করে BJP-তে আসার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করবে ? এই বিষয়ে এখনও কোনও পক্ষ থেকেই কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি ৷