কলকাতা, 2 সেপ্টেম্বর: কেটে গেল একটা বছর। 1 সেপ্টেম্বর, 2019-এ ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর খনন কাজের সময় ধস নামে বউবাজার এলাকায়। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে একের পর এক বাড়ি। বহু বাড়িতে দেখা দেয় বিশাল ফাঁটল। সেদিন রাতারাতি যাঁরা ভিটেহারা হয়েছিলেন আজও তাঁরা দিন গুনছেন ঘোর অনিশ্চয়তায়।
হুড়মুড় করে ভেঙে পড়েছিল বউবাজার এলাকার পুরোনো বাড়িগুলো। চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল দুর্গা পিতুরি লেন, গৌরী দে লেন, স্যাকরা পাড়া লেন সহ সংলগ্ন অঞ্চল। বউবাজার এলাকার দুর্গা পিতুরি লেনের বাসিন্দা প্রবীণ স্বপন বড়াল৷ স্বপনবাবুর পরিবারকে রাখা হয়েছিল সেন্ট্রাল গেস্ট হাউজ়ে। বর্তমানে উত্তর কলকাতার একটি ভাড়াবাড়িতে রয়েছেন তিনি। বলেন, "খুব অসুবিধার মধ্যে রয়েছি। কবে বাড়ি ফিরতে পারব সে অনিশ্চয়তা তো রয়েছেই৷ ভাড়া বাড়ি সংক্রান্ত সমস্যাও রয়েছে। এই বাড়ির 11 মাসের এগ্রিমেন্টে অগাস্ট মাসে শেষ হয়েছে। বাড়ির মালিক এখন ভাড়া বাড়াতে চাপ দিচ্ছেন৷ আমরা বিষয়টি কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেড (KMRCL) কতৃপক্ষকে জানিয়েছি। এখনও সদুত্তর পাইনি।"
দুর্গা পিতুরি লেনেরই আরেক বাসিন্দা চিকিৎসক প্রদীপ লাহা বলেন, "আমাদের বাড়িটি এখনও কোনওভাবে দাড়িয়ে। তবে দেয়ালে চওড়া ফাঁটল। আজও তাজা সে দিনের স্মৃতি। গত বছর আজকের দিনে ভোর পাঁচটার সময় বাড়ির বেল বাজিয়ে মেট্রো রেলের ইঞ্জিনিয়াররা ও স্থানীয় পুলিশ ঘুম ভাঙায়৷ আধ ঘণ্টার মধ্যে জিনিসপত্র নিয়ে বাড়ি খালি করে দিতে বলেন ওঁরা। এরপর চার কী পাঁচবার নিজের বাড়িতে ঢুকেছি। তাও পুলিশ ও মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষর অনুমতি নিয়ে। যা আমাদের কাছে খুবই অসম্মানজনক। এলাকায় আবার কাজ শুরু হয়েছে। বড় বড় পাইপ বসানো থেকে শুরু করে TBM মেশিনগুলো বের করে আনার জন্য চৌবাচ্চা তৈরি হবে। সেগুলি আমার বাড়ি ঘেঁষে। এই ধরনের কাজ দুর্বল বাড়িগুলো সহ্য করতে পারবে কি না জানি না। আমার বাড়ির ভিত ফেটে গেছে। দেওয়াল বাঁচাতে মেরামত করা গেলেও ভিত কী করে মেরামত করা যাবে, তা ইঞ্জিনিয়াররাও বলতে পারছেন না।" প্রদীপবাবু আরও বলেন, "KMRCL-এর তরফে যে বাড়িগুলো ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে দেওয়া হয়েছে সেগুলির মান সমান নয়। আমাকে মানিকতলার কাছে একটি ভাড়া বাড়ি দেওয়া হয়েছে যার এগ্রিমেন্ট হয়েছে KMRCL ও বাড়িওয়ালার মধ্যে। আমার কাছে লিখিত নথি নেই। বাড়িওয়ালা যদি মনে করেন তাহলে কালকেই বাড়ি ছাড়তে বলতে পারেন। ইতিমধ্যে গভীর দুশ্চিন্তায় বেশ কয়েকজন প্রবীণ বাসিন্দা মারা গিয়েছেন!"
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার আরেক বাসিন্দা সোনালি শিল বলেন, "সর্বস্ব হারিয়েছে৷ এক কাপড়ে সেদিন বেরিয়ে আসতে হয়েছিল। ভাগ্যের জোরে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো বাঁচাতে পেরেছি। আসবাবপত্র ও অন্য মূল্যবান জিনিস সঙ্গে আনতে পারিনি। সবকিছুই ধসে নয়তো বৃষ্টির জলে নষ্ট হয়েছে। কতদিন এভাবে দিন কাটাতে হবে জানি না। কবে আবার আমাদের বাড়ি তৈরি হবে তা নিয়ে কোনও নির্দিষ্ঠ সময়ও দেয়নি কতৃপক্ষ।"
দুর্গা পিতুরি লেন, গৌরী দে লেন, স্যাকরা পাড়া লেন সহ সংলগ্ন অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্তদের অভাব, অভিযোগ জানাতে KMRCL-এর আধিকারিকদের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা হলেও তাঁরা ফোন ধরেননি।