কলকাতা, 8 নভেম্বর : প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের স্মরণসভা সোমবার অনুষ্ঠিত হল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ৷ সেখানে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিরোধী দল বিজেপি, সব পক্ষের বিধায়করাই তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানালেন ৷
তাঁকে স্মরণ করতে গিয়ে কারও চোখ থেকে ঝরল জল, কারও গলা ভারী হয়ে এল, আবার কেউ আবেগের স্মৃতির অতলে ডুব দিলেন । সুব্রত মুখোপাধ্যায় বাংলার রাজনীতির এমন একটা নাম, যিনি মৃত্যুর পরেও দুই প্রান্তে থাকা শাসক-বিরোধীদের স্মৃতির আসরে মিলিয়ে দিয়ে গেলেন ।
আরও পড়ুন :Agnidev on Subrata Mukherjee : সত্যজিৎ রায় সিরিয়ালটি দেখতেন সুব্রতদার অভিনয় দেখার জন্য : অগ্নিদেব
এদিন বিধানসভায় সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ ঠিক যেমন তিনি প্রয়াত ওই নেতার শেষ যাত্রায় অংশ নেননি ৷ তৃণমূলের নেতারা বলছেন, দাদা সুব্রতর চলে যাওয়াটা এখনও মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না মমতা । আর সেই কারণেই নবান্নের ফাইলের ভিড়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখলেন তিনি ।
এদিন প্রয়াত বন্ধু সুব্রতর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় । তিনি বলেন, ‘‘সেই 1967 সাল থেকে ওঁর সঙ্গে আমার পরিচয় । তারপর ছাত্র আন্দোলন থেকে পথ চলতে চলতে এতগুলো বছর কেটেছে । কত ঝগড়া করেছি তার হিসেব নেই । আবার কত নিবিড় বন্ধুত্বও ছিল । আজ যে সুব্রত নেই ভাবতেই পারছি না ।’’
আরও পড়ুন :Moonmoon Sen-Subrata Mukherjee : পায়ে মাথা ঠেকিয়ে সুব্রতকে শেষ শ্রদ্ধা মুনমুন সেনের
এরপর আর স্থির হয়ে কথা বলতে পারেননি তিনি । বিধানসভা অধিবেশন কক্ষেই কেঁদে ফেলেন । তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন একসঙ্গে রাজনীতি করেছে । ঝগড়াও হয়েছে । ওর পৈতে আমাকে তৈরি করে দিতে হত । এমন একজন বন্ধুকে হারানো যে কতটা দুঃখের, তা বলে বোঝানো যাবে না ।’’
এদিন সুব্রত মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে বলতে গিয়ে গলা ধরে এসেছিল পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়েরও । তিনি বলেন, ‘‘আমার ডানদিকের আসনটা ফাঁকা ! ওঁর মৃত্যু আমাদের অনাথ করে গেল । আমার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে ওঁর অবদান আছে । তিনি শুধু আমার রাজনৈতিক গুরু নন, আমার বড় দাদা ছিলেন ।’’
আরও পড়ুন :Sudipa on Subrata Mukherjee: নাম একই, বাবার মৃত্যুর পর সুব্রতদা বলেছিলেন, আমি তো আছি : সুদীপা
বিরোধীদলের পক্ষ থেকে বলতে উঠে নওশাদ সিদ্দিকি পঞ্চায়েত মন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন । তিনি বলেন, ‘‘সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে বাংলা রাজনীতির অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে । উনি আমাকে সৌজন্যের রাজনীতির পাঠ পড়িয়েছিলেন ।’’ পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ‘‘সুব্রতদা নেই, সেটা ভাবতে পারছি না । তাঁর স্মৃতি আমরা ভুলতে পারব না । আমরা সবাই সুব্রতদাকে স্মরণ করে বাকি জীবন কাটাব ।’’
তৃণমূলের প্রাক্তনী ও বর্তমান বিজেপি বিধায়ক মিহির গোস্বামী বলেন, ‘‘সুব্রতবাবুর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি । বিধানসভায় এসে সুব্রত মুখ্যপাধ্যায়কে দেখতে পাচ্ছি না । এটা আমার কাছে যন্ত্রণা ।’’
আরও পড়ুন :Subrata Mukherjee: হাসপাতালেই অফিস, চিরঘুমে যাওয়ার আগেও কাজ করে গিয়েছেন সুব্রত
এদিন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে স্মরণ করতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন । অতীতের স্মৃতি আউড়ে তিনি বলেন, ‘‘সন্তানতুল্য মনে করতেন আমাকে । সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার ও আমার পরিবারের আত্মিক সম্পর্ক ছিল । মনে হচ্ছে পরিবারেরই এক সদস্যকে হারালাম । রাজনীতির বাইরেও আমাদের সম্পর্ক ছিল । আমার এবং আমার পরিবারের সম্পর্ক ছিল । অনেক ছোট বয়সে আমি তাঁকে দেখেছি । মেদিনীপুরের বাড়িতে তিনি শতাধিকবার এসেছেন, থেকেছেন । তাঁর সঙ্গে রাজনীতির মত আলাদা হলেও কোনও দিন সেই সম্পর্কে প্রভাব পড়েনি । বাংলার রাজনীতিতে সুব্রত মুখ্যপাধ্যায় প্রাসঙ্গিক থাকবেন ।’’
আরও পড়ুন :Subrata Mukherjee : "আমার প্রিয় সুব্রতদা...", একদা সতীর্থের প্রয়াণে শোকবার্তা অধীরের