পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / city

কোরোনা আবহে মেডিকেল এডুকেশন বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় ক্ষতি হচ্ছে মানুষের ; মত চিকিৎসকদের - West Bengal

কোরোনা আবহে শুধু স্কুল বা কলেজ নয়, বাধার মুখে মেডিকেল এডুকেশনও ৷ সব মিলিয়ে এই বাধার ফলে ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষকেই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা ।

ছবিটি প্রতীকী
ছবিটি প্রতীকী

By

Published : Jul 25, 2020, 9:38 PM IST

Updated : Jul 26, 2020, 5:14 AM IST

কলকাতা, 25 জুলাই : কোরোনা আবহে দফায় দফায় চলছে লকডাউন ৷ মোকাবিলায় জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব কিছুতেই জারি বিধিনিষেধ ৷ তাই বিগত চার মাস ধরে বন্ধ পঠনপাঠন ৷ শুধু স্কুল বা কলেজ নয়, বাধার মুখে মেডিকেল এডুকেশনও ৷ অনলাইনে থিওরি ক্লাস হলেও কোরোনার জেরে বন্ধ প্র্যাকটিকাল ক্লাস, ওয়ার্ডে ডিউটি ৷ প্রশ্নের মুখে বিভিন্ন স্ট্রিমের পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎও ৷ সব মিলিয়ে এই বাধার ফলে ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষকেই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা । তবে, একই সঙ্গে তাঁরা মনে করছেন, সব থেকে আগে কোরোনার হাত থেকে উদ্ধার হওয়া প্রয়োজন ।

মেডিকেল এডুকেশনকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে বিভিন্ন সময় সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছে চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন । স্নাতক কোর্সের পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে যেমন থিওরি, প্র্যাকটিক্যাল এবং ক্লিনিকাল ক্লাসের প্রয়োজন, স্নাতকোত্তর পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে তেমন প্রশিক্ষণের প্রয়োজন । অথচ, এই দুই ক্ষেত্রে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পড়ুয়া এবং জুনিয়র চিকিৎসকরা । কারণ, ওই সব মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালকে কোরোনা হাসপাতাল হিসাবে চালু করেছে স্বাস্থ্য দপ্তর । যার জেরে, কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ইতিমধ্যেই বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন সেখানকার মেডিকেল পড়ুয়া ও জুনিয়র চিকিৎসকরা ।

অন্যান্য পড়াশোনার থেকে ডাক্তারি পড়াশোনা অনেকটাই আলাদা । এখানে লেকচার, প্র্যাকটিকাল ক্লাস এবং ক্লিনিকাল পোস্টিং, প্রতিটি বিষয় একই রকম গুরুত্বপূর্ণ । প্রতিদিন বেশ কয়েক ঘণ্টার লেকচার, প্রাক্টিকাল ক্লাস হয় । এটা কখনও কোরোনার এই সময় দিনে একটি বা দুটি লেকচারের মাধ্যমে সমান হতে পারে না । সাধারণ যে ট্রেনিং হয়, এই লেকচার তার সমান হয় না । কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ফাইনাল ইয়ারের পড়ুয়া প্রীতি গোস্বামী বলেন, "লেকচার, প্রাক্টিকাল, ওয়ার্ডে ক্লিনিকাল ট্রেনিং, এইশিক্ষা যদি সঠিকভাবে না হয়, তা হলে কীভাবে রোগ নির্ণয় করা হবে, কীভাবে চিকিৎসা হবে, সেটা জানা সম্ভব হবে না । মেডিকেল এডুকেশনে এই তিন ধরনের পদ্ধতি চলে আসছে এই কারণে যে, এই তিন ধরনের শিক্ষা পাওয়া সম্ভব হলে ভালোভাবে চিকিৎসা করা যায় । ই-লার্নিংয়ের মাধ্যমে আমাদের এখন ক্লাস হচ্ছে । অথচ, আমাদের পড়াশোনার বিকল্প কখনও ই-লার্নিং হতে পারে না । ই-লার্নিংয়ের সমস্যা হচ্ছে প্রথমত, এর মাধ্যমে খুব কম ক্লাস হচ্ছে । দ্বিতীয়ত, যাঁরা অনেক দূরে থাকেন বা যাঁদের অনেকে ইন্টারনেটের সিগনাল পান না, তাঁদের লাইভ আটকে যায় । এভাবে পড়াশোনা হতে পারে না ।"

কামারহাটিতে অবস্থিত কলেজ অব মেডিসিন অ্যান্ড সাগর দত্ত হাসপাতালের এক ইন্টার্ন চিকিৎসক নয়ন পাঠক বলেন, "কোরোনার এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো মেডিকেল এডুকেশনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । কোরোনা ব্যাপ্তির ফলে মেডিকেল কলেজগুলিতে ক্লাস নেওয়া, পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না ।" তাঁদের দাবি, এই সময় কোনও বর্ষের পরীক্ষা নেওয়া চলবে না । কারণ, মেডিকেল এডুকেশন এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে অনলাইন ক্লাস যথেষ্ট নয় । প্র্যাকটিকাল বিষয়টি এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । আবার, কোনও রকম পরীক্ষা না নিয়ে যদি ডাক্তারি পড়ুয়ারা অন্য বর্ষে উত্তীর্ণ হয়ে যান, তা হলে মেডিকেল এডুকেশন এবং জনস্বাস্থ্যের পক্ষে তা অত্যন্ত ক্ষতিকারক । কারণ, মেডিকেল এডুকেশন জীবনের সঙ্গে জড়িত । নয়ন পাঠক বলেন, "কোরোনা সংক্রমণ যখন কমতে থাকবে, তখন পরীক্ষা নিতে হবে ‌। তার জন্য প্রয়োজনীয় থিওরি এবং প্র্যাকটিকাল ক্লাস করাতে হবে । এর জন্য যদি সেশন এক্সটেনশন করার প্রয়োজন হয়, তা হলে সেটা করতে হবে । এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের এন্ট্রান্স পরীক্ষাগুলিকে রিশিডিউল করতে হবে যাতে কোনও পড়ুয়া বঞ্চিত না হন । কোনও মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালকে সম্পূর্ণরূপে কোরোনা হাসপাতাল করে দেওয়া চলবে না । কারণ, এর ফলে মেডিকেল কলেজগুলিতে অনেক ইন্টার্ন, হাউজ়স্টাফ, স্নাতকোত্তর ট্রেনি (PGT) চিকিৎসকরা প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত হবেন । কোরোনা আক্রান্ত ও কোরোনা আক্রান্ত নন এমন রোগীদের পাশাপাশি রাখতে হবে । এর জন্য নতুন পরিকাঠামো তৈরি যদি করতে হয় তাহলে এই মহামারী সময় এটা করতে হবে ।"

কোরোনায় আবহে বাধা মেডিকেল এডুকেশনেও

কোরোনা সংক্রমণ এবং লকডাউন ঘোষণার কারণে অন্যান্য শিক্ষার মতো মেডিকেল এডুকেশনও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে । MBBS, নার্সিং, প্যারামেডিকেল, ডেন্টাল, আয়ুর্বেদ, হোমিওপ্যাথি-সহ মেডিকেল এডুকেশনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই চার মাস ধরে ক্লাস বন্ধ হয়ে রয়েছে । এই পর্বে বিভিন্ন সেমেস্টার, পরীক্ষাগুলি হওয়ার কথা ছিল, সেগুলি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে । যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল, সেগুলি নিয়েও এখন অনিশ্চিত অবস্থা । যখন এ রকম অচলাবস্থা চলছে, তখন স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং গাইডলাইন পাচ্ছেন না ছাত্র-ছাত্রীরা । ছাত্রসংগঠন অল ইন্ডিয়া ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্টস অর্গ্যানাইজ়েশন (AIDSO)-র সর্বভারতীয় স্তরের ভাইস প্রেসিডেন্ট, চিকিৎসক মৃদুল সরকার বলেন, "কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ । এ ক্ষেত্রে, অনলাইনে ক্লাস অনিয়মিত হচ্ছে । কোরোনার এই পরিস্থিতির মধ্যে কোনও মতেই পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয় । যত দিন না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, তত দিন পরীক্ষা স্থগিত রাখতে হবে, এটা আমরা মনে করছি । পরীক্ষা ছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের যেভাবে পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ করে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তা অবৈজ্ঞানিক । থিওরি, প্র্যাকটিকাল, ক্লিনিকাল ক্লাস ছাড়া মেডিকেলের ছাত্র-ছাত্রীদের যদি পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ করে দেওয়া হয়, তাহলে তাঁরা কোনও কিছু শিখতে পারবেন না । যদি কিছু না শিখে পরের ক্লাসে উত্তীর্ণ হন, তা হলে তাঁরা চিকিৎসক হিসাবে তৈরি হতে পারবেন না । প্রতি বছর এ রাজ্যে আড়াই হাজারের মতো মেডিকেল পড়ুয়া MBBS পাশ করে চিকিৎসক হয়ে ওঠেন । তাঁদের শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ যথাযথ না হলে, এর ফলে আখেরে আগামী দিনে সমস্যায় পড়বে সাধারণ মানুষ । সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন নেই । ক্লাস এবং পরীক্ষার বিষয়ে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে সুনির্দিষ্ট প্রোটোকল ঘোষণা করা দরকার । যখন সংক্রমণ কমতে শুরু করবে, তখন উপযুক্ত প্রোটেকশনের ব্যবস্থা করে ক্লাসগুলি শুরু করা উচিত । পড়ুয়ারা যাতে সংক্রমিত হয়ে পড়তে না পারেন, তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার । পরীক্ষা এমন সময় দেওয়া উচিত যখন ছাত্রছাত্রীরা শেষ করতে পারবেন । এর জন্য যদি অ্যাকাডেমিক সেশন এক্সটেন্ড করতে হয়, তাহলে এ বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়কে ।"

কলকাতার বেসরকারি একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ, অশোককুমার ভদ্র বলেন, "2020 বছরকে ইয়ার অফ সারভাইভাল হিসাবে আমাদের ধরতে হবে । মানুষকে সুস্থ করে তোলা, মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা, এটাই এখন মেডিকেল সিস্টেমের প্রধান কাজ । এর পাশাপাশি মেডিকেল এডুকেশন সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন । অনলাইন ক্লাসের উপর আমরা জোর দিয়েছি । তবে, শুধুমাত্র অনলাইন ক্লাস হলে চলবে না । মেডিকেল এডুকেশনে হাতে-কলমে শিক্ষা দরকারি বিষয় । এর জন্য নন-COVID-19 উইংয়ে মাস গ্যাদারিং না করে পর্যায়ক্রমে ক্লাস হচ্ছে । তবে, যে রকম আগে হত, হয়তো সে রকম হচ্ছে না । কোরোনা প্রতিরোধের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে স্বাস্থ্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে । মেডিকেল এডুকেশন বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো বিষয় হচ্ছে না ।" কোরোনার জেরে সার্বিকভাবে রাজ্যের মেডিকেল এডুকেশন কি ক্ষতিগ্রস্থ? তিনি বলেন, "সাময়িক একটু ক্ষতিগ্রস্ত তো হবেই । এত জনসংখ্যা এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার যে অভাব রয়েছে, এর ফলে সব মেডিকেল কলেজে COVID-19 সেকশন করতে হচ্ছে । যতক্ষণ না কোরোনা সংক্রমণ বন্ধ হবে, ততক্ষণ তো একটু ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ‌। এ ছাড়া আর কোনও উপায় নেই, এটা তো মেনে নিতেই হবে ।‌"

কোরোনার এই পরিস্থিতি মেডিকেল এডুকেশনের উপর কি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে? রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যর বক্তব্য জানতে চেয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় । তবে, তাঁকে বহুবার ফোন করা হলেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি । এই বিষয়ে, রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্তকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "সব কিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মেডিকেল এডুকেশনও । পড়ুয়ারা বাড়িতে চলে গিয়েছেন । ক্লাস করতে পারছেন না । মেডিকেল পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষাদান যথার্থ নয় । প্র্যাকটিকাল ক্লাসের পাশাপাশি ওয়ার্ডে রোগীদের দেখার বিষয়টিও রয়েছে । এদিক থেকে মেডিকেল এডুকেশনের যথেষ্ট ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে । হাসপাতালগুলিতে রোগীদের সংখ্যাও কম । এর ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুতর রোগীদের বিষয়টি দেখে শিখতে পারছেন না পড়ুয়ারা । এ দিক থেকেও নিঃসন্দেহে ক্ষতি হচ্ছে ।" এই সব খামতি পূরণের জন্য আগামী দিনে যাঁরা শিখে নিতে পারবেন, তাঁরা শিখবেন । যাঁরা শিখে নিতে পারবেন না, বা চাইবেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে সমস্যা হবে । তা হলে কি কোর্সের সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়ার উপায় রয়েছে? অথবা, বিকল্প কিছু? প্রাক্তন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা বলেন, "বিকল্প বলতে অনলাইনে ডেমো দেখানো যেতে পারে । সবই ভার্চুয়াল করতে হবে । রোগীকে দেখিয়ে কী অসুখ-বিসুখ তাঁর রয়েছে, কোন ধরনের উপসর্গ রয়েছে, কোন রোগের ক্ষেত্রে রোগীকে কেমন দেখতে হয়, এ সব বিষয়ে অনলাইনে পড়ুয়াদের দেখিয়ে শেখানোর ব্যবস্থা করতে হবে । এই খামতি মেকআপ করার জন্য কোর্সের যে সময় রয়েছে, তার থেকে কিছুটা বেশি সময়ের ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে করতে হবে । এই বিষয়টি করা উচিত । কারণ, শুধুমাত্র কোর্স শেষ করার নয়, হাতে-কলমে শেখার বিষয়টি থেকেই যাচ্ছে । এটা একটা বড় সমস্যা । যাঁরা এখন রয়েছেন, তাঁদের ভাবনা-চিন্তা করা উচিত তো বটেই এ ক্ষেত্রে কীভাবে কী করা যায়, না হলে তো পড়ুয়াদের ক্ষতি, যাঁরা ডাক্তার হবেন তাদের ক্ষতি । কোনও সন্দেহই নেই, শেষকালে মানুষেরই ক্ষতি ।"

রাজ্যের স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ হেলথ সায়েন্সেজ়ের উপাচার্য রাজেন্দ্র পান্ডে বলেন, "আমরা তো কোনও অ্যাসেসমেন্ট করিনি কিন্তু শিক্ষক এবং পড়ুয়ারা বলছেন তাঁদের অনলাইন ক্লাস মোটামুটি হচ্ছে । পড়ুয়ারা যেহেতু বাড়িতে রয়েছেন, তাঁদের প্র্যাকটিকাল ক্লাস হচ্ছে না । তাঁরা হস্টেলে ফিরে এলে প্র‍্যাকটিকাল ক্লাস শুরু হবে । এখন যদি 31 জুলাইয়ের পরে অনুমতি দেওয়া হয়, তা হলে আশা করা যায় পড়ুয়ারা চলে এলে, ক্লাসও শুরু হলে প্র‍্যাকটিকাল ক্লাসের যেটুকু ঘাটতি থাকবে, তাতে শিক্ষকদের অনুমান মাস দুয়েকের মধ্যে সেটা ওভারকাম করিয়ে দেওয়া যাবে ।"

পশ্চিমবঙ্গ আয়ুর্বেদ পরিষদের সহ-সভাপতি প্রদ্যোৎবিকাশ কর মহাপাত্র বলেন, "প্রতি বছর 160জন পড়ুয়া আয়ুর্বেদে ভরতি হন । কোরোনার জেরে পরীক্ষা পিছিয়ে গিয়েছে । ক্লাস বলতে অনলাইনে হচ্ছে । প্র্যাকটিকাল ক্লাস না হওয়ার জন্য সমস্যা হচ্ছে । রোগীদের সংখ্যা এখন যেহেতু কম, সেই জন্য পড়ুয়ারা সেভাবে প্র্যাকটিকাল শিখতে পারছেন না । অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে । তবে সকলের বাড়িতে ইন্টারনেট কানেকশন ঠিকমতো থাকে না । আমফান ঘূর্ণিঝড়ের পরও ইন্টারনেটে সমস্যা দেখা দিয়েছিল । অনলাইনে ক্লাস হলেও আপ টু দ্য মার্ক হচ্ছে না । প্র্যাকটিকাল ক্লাস হচ্ছে না । পরীক্ষা পিছিয়ে গিয়েছে । সার্বিকভাবে বলতে গেলে, যে সব শিক্ষার ক্ষেত্রে প্র্যাকটিকাল রয়েছে, কোরোনার জেরে সেই সব শিক্ষা বিধ্বস্ত হল । শুধু মেডিকেল এডুকেশন নয়, প্র্যাকটিকাল রয়েছে এমন সব কোর্সের ক্ষেত্রে ম্যাসিভ ক্ষতি হচ্ছে ।"

ডি এন দে হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ শ্যামলকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, "হোমিওপ্যাথিকের প্রভাব পড়েছে । যতটা স্বাভাবিক রাখা যায়, আমরা তার চেষ্টা করছি । অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে । অনলাইনে ডেমোর মাধ্যমে প্র্যাকটিকাল ক্লাসও হচ্ছে । পরীক্ষা পিছিয়ে গিয়েছে । তবে, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে পরীক্ষা শুরু করা হবে ।" প্রতি বছর 550-600জন পড়ুয়া ভরতি হন । কোর্স শুরু করার পরে অনেক পড়ুয়া অন্য স্ট্রিমে চলে যান, অনেক পড়ুয়া ছেড়ে দেন । ফলে প্রতি বছর 300-350জন পড়ুয়া কোর্স শেষ করে হোমিওপ্যাথি ডাক্তার হয়ে ওঠেন । ইন্ডিয়ান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য শাখার সম্পাদক, রাজু বিশ্বাস বলেন, "অনলাইনে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে । পড়ুয়ারাও এভাবে ক্লাস করে কম-বেশি সন্তুষ্ট । কারণ তাঁরা বুঝতে পারছেন, এই পরিস্থিতিতে বাড়িতে গিয়ে তাঁরা আটকে পড়েছেন, কিন্তু তাঁরা অনলাইনে ক্লাস করতে পারছেন । অনলাইনে সিলেবাস কম-বেশি শেষ করা হচ্ছে । প্র্যাকটিকাল ক্লাসের ক্ষেত্রে অ্যাডজাস্ট করে নেওয়া ছাড়া এই মুহূর্তে করার আর কিছু নেই । এখনও পর্যন্ত আমরা এই পরিস্থিতিকে যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি বলে মনে হয়। কোনও পড়ুয়ার যদি কোনও ক্লাসের বিষয়ে খামতি থাকে, আমরা চেষ্টা করব যাতে সেই খামতি পূরণ করে দেওয়া যায় । তবে আমরা জানি না, কখন এটা সম্ভব হবে ।"

Last Updated : Jul 26, 2020, 5:14 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details