পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / city

ত্রিস্তরীয় মাস্ক তৈরি করছেন যাদবপুরের পড়ুয়া-গবেষকরা - মাস্ক

এবার মাস্ক তৈরি করছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী, বর্তমান পড়ুয়া, অধ্যাপক ও গবেষকরা । যা সার্জিকাল মাস্কের থেকে বেশি কার্যকরী হবে বলে তাঁদের আশা ।

Mask
মাস্ক

By

Published : Apr 6, 2020, 6:12 PM IST


কলকাতা, 6 এপ্রিল: বাজারের ব্যাগ, গামছা, কাপড়ের মতো সহজলভ্য জিনিস দিয়ে ত্রিস্তরীয় মাস্ক বানানোর যৌথ উদ্যোগ নিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী, বর্তমান পড়ুয়া, অধ্যাপক ও গবেষকরা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাপ্রোপ্রিয়েট টেকনোলজির (CAST) ডিজ়াইন করা এই মাস্ক তৈরি করছেন তাঁরা। তাঁদের কথায়, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে এই ত্রিস্তরীয় মাস্ক সার্জিকাল মাস্কের থেকে ড্রপলেট প্রতিরোধে তিনগুণ কার্যকরী। পাশাপাশি, সহজলভ্য জিনিস দিয়ে বানানোর কারণে খুবই সস্তা হবে এই মাস্ক।

কোরোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে । প্রতিষেধক না থাকায় প্রতিরোধই কোরোনা ভাইরাসের সঙ্গে মোকাবিলার একমাত্র উপায়। যার জন্য প্রয়োজনীয় হল স্যানিটাইজ়ার ও মাস্ক। রাজ্যজুড়েই স্যানিটাইজ়ার ও মাস্কের চাহিদা তুঙ্গে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী জোগান নেই। ফলে, এগুলি দাম বাড়ছে। একটা সার্জিক্যাল মাস্ক বা সাধারণ কাপড়ের মাস্কের দামও আকাশছোঁয়া। তাও আবার সব জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে সস্তায় মাস্ক তৈরির চিন্তাভাবনা শুরু করেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী, বর্তমান পড়ুয়া, অধ্যাপক ও গবেষকরা । "জনতা প্রযুক্তি উদ্যোগ" নামে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে তাঁরা এটি তৈরি করছেন।

মাস্ক তৈরির উদ্যোগ নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রাক্তনী কমলেশ রায় বলেন, "যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস, সংস্কৃতির পড়ুয়ারা সবসময় সমাজের জন্য কিছু করার কথা ভেবেছে । নানাভাবে সমাজের জন্য কিছু করেছে। সেটা রাজনৈতিকভাবে হোক বা অন্য প্রেক্ষাপটে। এখন যে লকডাউন চলছে, সারা দেশে স্বাস্থ্য পরিষেবার যে বেহাল অবস্থা, সেই পরিস্থিতিতে আমরা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তির ছাত্র-ছাত্রীরা চিন্তা করি যে আমরা কীভাবে মানুষের কাজে আসতে পারি। বৈজ্ঞানিকভাবে এবং ক্ষমতার মধ্যে থেকে আমরা কী করতে পারি। সেই ভাবনা থেকেই এই মাস্ক তৈরির ভাবনা উঠে আসে।"


সেন্টার ফর অ্যাপ্রোপিয়েট টেকনোলজি


মাস্কের প্রাথমিক ডিজ়াইন করেন সেন্টার ফর অ্যাপ্রোপিয়েট টেকনোলজির (CAST) একদল গবেষক। CAST-এর একজন অধ্যাপক সৌরভ সরকারের সঙ্গে জনতার প্রযুক্তি উদ্যোগের কথা হয়। তারপর CAST থেকে মাস্কের ডিজ়াইন নিয়ে সেটাকে আরও উন্নত করে তার উপর কাজ শুরু করে দেন যাদবপুরের প্রাক্তনী, পড়ুয়া ও গবেষকরা। বেশ কিছু বিষয় মাথায় রেখে মাস্কের ডিজ়াইন করেন তাঁরা। এই বিষয়ে কমলেশ রায় বলেন, "ভারতের মতো দেশে স্বাস্থ্য সচেতনতার মাত্রা খুব কম। ইতিমধ্যেই সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, হংকংয়ের কিছু জায়গার মডেলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, মাস্ক দিয়ে ইনফেকশনকে প্রায় 50 শতাংশ কমিয়ে আনা যাচ্ছে। শুধুমাত্র যদি প্রত্যেকে একটা করে মাস্ক পরে। কিন্তু, প্রথমত, সেই অর্থনৈতিক অবস্থা আমাদের দেশে প্রত্যেকের নেই। দ্বিতীয়ত, মাস্কের ডিমান্ড এবং সাপ্লাইয়ের মধ্যে বিরাট পার্থক্য থেকে গেছে। যা সাপ্লাই, ডিমান্ড তার থেকে বহুগুণ বেশি। স্বাভাবিকভাবেই দাম বেড়ে যাচ্ছে। যে মাস্কগুলো পাওয়া যাচ্ছে কম দামে, সেগুলো আসলে ওয়ান টাইম ইউজ়। সার্জিকাল মাস্ক একবার ব্যবহার করে ফেলে দিতে হয়। এই অসুবিধাগুলোকে মাথায় রেখে আমরা মাস্কটা ডিজ়াইন করেছি।"

ত্রিস্তরীয় মাস্ক

এই মাস্কের তিনটি স্তর থাকছে। প্রথম ও শেষের স্তরটি এমন সামগ্রী দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে যা জল আটকাতে সক্ষম। আর মাঝখানের স্তরটি তৈরি করা হচ্ছে এমন সামগ্রী দিয়ে যা জলকে শুষে নিতে পারে। মাস্কের গঠন ও তাতে ব্যবহৃত সামগ্রী নিয়ে কমলেশ রায় বলেন, "আমাদের মাস্কের তিনটি স্তর রয়েছে। প্রথম ও শেষ স্তরটা হাইড্রোফোবিকের। অর্থাৎ, সেটা জলকে রিপেল করে। কোরোনাভাইরাস প্রতিরোধের ক্ষেত্রে প্রথম কাজ, হাঁচি কাশির সঙ্গে যে ড্রপলেটটা আসে সেটাকে আটকে দেওয়া। সেটাই এই হাইড্রোফোবিক স্তর করবে। মাঝখানের স্তরটা হাইড্রোফিলিক স্তর। অর্থাৎ, যে স্তরটা জলকে শুষে নেবে। অর্থাৎ, প্রথম স্তর থেকে ড্রপলেট ভিতরে প্রবেশ করলেও তা দ্বিতীয় তথা মাঝের স্তর শুষে নেবে এবং বাইরে স্তরটা হাইড্রোফোবিক হওয়ায় সেটা বাইরে বেরোনোর কোনও সুযোগ থাকবে না। আমরা এমন সব সামগ্রী এই মাস্ক তৈরিতে ব্যবহার করেছি যেগুলো মানুষ সহজেই পেতে পারে। হাইড্রোফোবিক স্তর দুটোর জন্য বাজারের নতুন যেসব পলিপ্রোপাইলিনের ব্যাগ এসেছে তার ব্যবহার করেছি এবং হাইড্রোফিলিক স্তরের জন্য আমরা ডাস্ট ক্লথ ব্যবহার করছি। এই ডাস্ট ক্লথের দুটি দিক দেখতে হবে। প্রথমত, এর শোষণ ক্ষমতা থাকতে হবে এবং মানুষ এর মধ্য দিয়ে যেন শ্বাস নিতে পারে সেটাও দেখতে হবে।"

ত্রিস্তরীয় মাস্ক সার্জিকাল মাস্কের থেকে তিনগুণ বেশি কার্যকরী

এই ত্রিস্তরীয় মাস্ক সার্জিকাল মাস্কের থেকে তিনগুণ বেশি কার্যকরী ও পুনরায় ব্যবহারযোগ্য বলে দাবি উদ্যোক্তাদের। কমলেশ রায় বলেন, "আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি সাধারণ সার্জিকাল মাস্কের থেকে তিনগুণ বেশি কার্যকরী আমাদের এই মাস্ক। যেহেতু আমাদের দেশের গরিব মানুষদের রোজদিন একটা করে মাস্ক কেনার মতো পয়সা নেই। তাই আমরা এই মাস্কটা এমন সামগ্রী দিয়ে তৈরি করছি যেটাকে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিয়ে, ৬০-৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ফুটিয়ে নিয়ে, ডেটল জলে ধুয়ে আবার ব্যবহার করা যাবে।" ইতিমধ্যেই WHO-এর গাইডলাইন মেনে আজই 200টি মাস্ক তৈরি করা হচ্ছে। তবে, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেই নিজ নিজ উদ্যোগে মাস্ক বানানোর কাজ চলছে। কমলেশ রায় বলেন, "আমরা প্রাথমিকভাবে এই মাস্ক স্বাস্থ্য কর্মীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য রাখছি। আমরা এই মাস্কটা সম্পূর্ণ নন-প্রফিটের জায়গা থেকে দেব। কিন্তু, তা সবার কাছে রাজ্যের সব জায়গায় পৌঁছে দিতে পারব না। কারণ যোগাযোগ বন্ধ। সেক্ষেত্রে আমরা যেটা তৈরি করব, সেটা মূলত জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত রয়েছেন তাঁদের এটা দেওয়ার পরিকল্পনা করছি। আমরা চেষ্টা করছি শ্রমজীবী অংশকে প্রথমে দেওয়ার যাঁরা এখনও কাজ করছেন। যেমন, সাফাই কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী। আমরা খুবই কম দাম রাখব এই মাস্কের। চেষ্টা করছি এর মূল্য ৫-১০ টাকা মধ্যে রাখার।"

আরও বেশি করে উৎপাদনের জন্য সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছেন যাদবপুরের পড়ুয়া-গবেষকরা। কমলেশবাবু বলেন, "সরকারের থেকে আমরা যদি একটা ফান্ডিং পাই তাহলে আমরা বড় স্কেলে এর প্রোডাকশন করতে পারব। বড় স্কেলের প্রোডাকশন হলে এর দামটাও কম রাখতে পারব। আমরা যদি ১৫-২০ হাজার তৈরি করতে পারি তাহলে আমরা এক টাকার কমে একটা মাস্ক দিতে পারব। তবে সরকারের সাহায্য ছাড়া এটা সম্ভব নয়। প্রশাসনিক এবং আর্থিক দুটো দিক থেকেই সাহায্য করলে আমরা এটাকে বড় স্তরে নিয়ে যেতে পারব।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details