পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / city

Mamun Akhtar: সংঘাতের আবহে মানবিক মুখ, সমাজ গঠনে ব্রতী মামুন আখতার

নূপুর শর্মার বিতর্কিত (Nupur Sharma) মন্তব্যের পর সংঘাতের আবহে মানবিক মুখ সমাজ গঠনে ব্রতী মামুন আখতার ৷ দুঃস্থ পরিবারের বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলছেন তিনি (secular picture amid unrest)৷

By

Published : Jun 16, 2022, 4:53 PM IST

mamun-akhtar-paints-a-secular-picture-amid-unrest
সংঘাতের আবহে মানবিক মুখ সমাজ গঠনে ব্রতী মামুন আখতার

কলকাতা, 16 জুন:নূপুর শর্মার (Nupur Sharma) বিতর্কিত মন্তব্যের পরইরাজ্যের বিভিন্ন অংশে দেখা গিয়েছে বিক্ষিপ্ত অশান্তির ছবি ৷ সংঘাত অনেক ক্ষেত্রে চরমেও উঠেছে ৷ নদিয়া, মুর্শিদাবাদে বিক্ষোভ থাকলেও উত্তেজনার নিউক্লিয়াস ছিল হাওড়া ৷ তবে এই সংঘাত, হানাহানির মধ্যেও সম্পূর্ণ বিপরীত এক ছবি সামনে এল সেই হাওড়াতেই ৷ সেখানে সমাজ গঠনের কাজে ব্রতী মামুন আখতার ৷ হাওড়ার টিকিয়াপাড়ার বাসিন্দা ৷দুঃস্থ পরিবারের সন্তান মামুনের হাতেই একে একে গড়ে উঠছে দেশের ভবিষ্যৎ ৷

ছোট থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন অর্থাভাব (Bengal unrest)৷ কোনওক্রমে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন ৷ তাই একটু বড় হতেই ঠিক করে ফেলেছিলেন ৷ অনটনের কারণে তাঁর মতো যেন আর কোনও শিশুর পড়াশোনায় বাধা না পড়ে ৷ কেউ যেন স্কুলছুট না হয়, আপ্রাণ সেই চেষ্টা চালাবেন ৷ নিজের এলাকাতেই শুরু হয় তাঁর কর্মযজ্ঞ ৷

মামুনের স্কুলের ছাত্রীরা

কথায় আছে ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয় (secular picture amid unrest)৷ নিজের স্বল্প পুঁজি নিয়েই আত্মবিশ্বাসে ভর করে যাত্রা শুরু করেছিলেন ৷ ছোট্ট একটা ঘরে 2001 সালে এলাকার দুঃস্থ কিছু বাচ্চাদের পড়াতে শুরু করেন তিনি। মামুন আখতারের কথায়, "আমি যখন সপ্তম শ্রেণিতে ছিলাম, তখন পারিবারিক অর্থাভাবে পড়াশোনা চালাতে পারিনি । তবে পরে টিউশন করে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত নিজেই নিজের পড়াশোনা চালাই । তখনই ঠিক করি যে, অর্থাভাবে আমার মতো যেন কোনও শিশুকে স্কুলছুট না হতে হয় । এরপর 2001 সালে ছোট্ট একটি ঘরেই 6টি দুঃস্থ শিশুকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াতে শুরু করি । তখন মাসে 5 টাকা মাইনে দিয়ে বাচ্চারা পড়ত । আর যাঁরা পড়াতেন তাঁদের মাস মাইনে ছিল 100 টাকা । এরপর 2003 সালে তখনকার ইউএস কাউন্সিল জেনারেলের পত্নী লি অ্যালিসনের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করি । তিনি আমাদের স্কুলে এসে কীভাবে আমরা এই বাচ্চাদের পড়াশোনা করাচ্ছি সব দেখে খুবই খুশি হন । স্কুলের উন্নতির জন্য তিনি আমাদের হাতে 10,000 টাকা তুলে দেন । এরপর আমাদের স্কুলের কথা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে । ধীরে ধীরে বিভিন্ন সংস্থা ও মানুষজন আমাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন ।"

সমাজ গঠনে ব্রতী মামুন আখতার

তাঁর স্কুলের নাম সামারিটন মিশন স্কুল । এলাকার দুঃস্থ পরিবারের বাচ্চারা, যারা সারাদিন বিভিন্ন অসামাজিক কাজকর্মে জড়িয়ে পড়েছিল, মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিল, মামুন নিজে তাদের খুঁজে খুঁজে নিয়ে আসতেন নিজের স্কুলে । তবে তখনই তিনি বুঝেছিলেন যে, সারাদিন এখানে পড়াশোনা করলেও রাতে বাড়িতে ফিরে তারা আবারও নানা অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়ে ৷ তাই এই ধরনের বহু বাচ্চাকে নিজের কাছে রেখে তাদের পড়াশোনা করানো ছাড়াও সমাজের মূল স্রোতে ফেরানোর চেষ্টা করে চলেছেন তিনি ৷ তাদের সার্বিক উন্নতি ও স্বাস্থ্যের কথা ভেবে তিনি ছোট একটি ক্লিনিকও তৈরি করলেন ।

আরও পড়ুন:Prophet Remarks Row : স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে হাওড়া, শেষ চব্বিশ ঘণ্টায় নেই অশান্তির খবর

শুধু বাচ্চাদের শিক্ষিত করে তোলাই নয়, বাচ্চাদের পাশাপাশি তাদের পুরো পরিবারকেও স্বাবলম্বী করে তুলতে নিরলস কাজ করে চলেছে মামুন আখতারের সংস্থা । হাতের কাজ, সেলাই থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তাঁদের । যাতে পরে তারা উপার্জন করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে সেই সুযোগও করে দেওয়া হয় তাদের ।

পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধূলার ব্যবস্থা

টিকিয়াপাড়ার একটি পরিত্যক্ত জমি, যেখানে নানা রকম অসামাজিক কার্যকলাপ চলত, সেই জমিতে তাঁর স্কুলটি স্থানান্তরিত করা হয় । এখন তিনি গড়ে তুলছেন আরও বড় স্কুল, ব্যাংকের কিয়স্ক, ক্লিনিক, মহিলাদের ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র । এমনকী এখানে অনুন্নত এবং দুঃস্থ পরিবারের বাচ্চাদের জন্য একটি স্পোর্টস অ্যাকাডেমিও খোলা হয়েছে । শুধু তাই নয়, এখানেই তিনি গড়ে তুলছেন 23 বেডের একটি হাসপাতাল ।

মামুন ও তাঁর সংস্থার বাকি সদস্যদের আদরে বাবা-মায়ের স্নেহ-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত শিশুরা নতুন জীবন পেয়েছে ৷ এ ছাড়াও রয়েছে বহু পথশিশু । আজ তিনটি স্কুলই মধ্যশিক্ষা পর্ষদ দ্বারা অনুমোদিত । দুঃস্থ পরিবারের শিশুদের কম খরচে ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা লাভের সুযোগ করে দিয়েছে এই সংস্থা । যাদের যতটুকু সাধ্য ততটুকু দিয়েই তারা এখানে পড়াশোনা করে । এক কথায় এই স্কুলে পড়ার সুযোগ পাবে সবাই । মামুন বলেন, "আমার লক্ষ্য হল যাতে পথশিশুরা ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত না হয় এবং মাদকাসক্ত না হয় । আমরা সবসময় চেয়েছি শিশুরা মূল ধারার শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে বড় হয়ে উঠুক ।’’

সংঘাতের আবহে মানবিক মুখ

একদিন যেই ছোট ঘর থেকে শুরু হয়েছিল পথ চলা, আজ সেই স্কুলের তিনটি শাখা । সব মিলিয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার । মামুন আখতারের কথায়, "আসলে সদিচ্ছা থাকলে বাকিটা উপরওয়ালাই সহজ করে দেবেন ।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details