কলকাতা, 16 জুন:নূপুর শর্মার (Nupur Sharma) বিতর্কিত মন্তব্যের পরইরাজ্যের বিভিন্ন অংশে দেখা গিয়েছে বিক্ষিপ্ত অশান্তির ছবি ৷ সংঘাত অনেক ক্ষেত্রে চরমেও উঠেছে ৷ নদিয়া, মুর্শিদাবাদে বিক্ষোভ থাকলেও উত্তেজনার নিউক্লিয়াস ছিল হাওড়া ৷ তবে এই সংঘাত, হানাহানির মধ্যেও সম্পূর্ণ বিপরীত এক ছবি সামনে এল সেই হাওড়াতেই ৷ সেখানে সমাজ গঠনের কাজে ব্রতী মামুন আখতার ৷ হাওড়ার টিকিয়াপাড়ার বাসিন্দা ৷দুঃস্থ পরিবারের সন্তান মামুনের হাতেই একে একে গড়ে উঠছে দেশের ভবিষ্যৎ ৷
ছোট থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন অর্থাভাব (Bengal unrest)৷ কোনওক্রমে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন ৷ তাই একটু বড় হতেই ঠিক করে ফেলেছিলেন ৷ অনটনের কারণে তাঁর মতো যেন আর কোনও শিশুর পড়াশোনায় বাধা না পড়ে ৷ কেউ যেন স্কুলছুট না হয়, আপ্রাণ সেই চেষ্টা চালাবেন ৷ নিজের এলাকাতেই শুরু হয় তাঁর কর্মযজ্ঞ ৷
কথায় আছে ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয় (secular picture amid unrest)৷ নিজের স্বল্প পুঁজি নিয়েই আত্মবিশ্বাসে ভর করে যাত্রা শুরু করেছিলেন ৷ ছোট্ট একটা ঘরে 2001 সালে এলাকার দুঃস্থ কিছু বাচ্চাদের পড়াতে শুরু করেন তিনি। মামুন আখতারের কথায়, "আমি যখন সপ্তম শ্রেণিতে ছিলাম, তখন পারিবারিক অর্থাভাবে পড়াশোনা চালাতে পারিনি । তবে পরে টিউশন করে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত নিজেই নিজের পড়াশোনা চালাই । তখনই ঠিক করি যে, অর্থাভাবে আমার মতো যেন কোনও শিশুকে স্কুলছুট না হতে হয় । এরপর 2001 সালে ছোট্ট একটি ঘরেই 6টি দুঃস্থ শিশুকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াতে শুরু করি । তখন মাসে 5 টাকা মাইনে দিয়ে বাচ্চারা পড়ত । আর যাঁরা পড়াতেন তাঁদের মাস মাইনে ছিল 100 টাকা । এরপর 2003 সালে তখনকার ইউএস কাউন্সিল জেনারেলের পত্নী লি অ্যালিসনের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করি । তিনি আমাদের স্কুলে এসে কীভাবে আমরা এই বাচ্চাদের পড়াশোনা করাচ্ছি সব দেখে খুবই খুশি হন । স্কুলের উন্নতির জন্য তিনি আমাদের হাতে 10,000 টাকা তুলে দেন । এরপর আমাদের স্কুলের কথা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে । ধীরে ধীরে বিভিন্ন সংস্থা ও মানুষজন আমাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন ।"
তাঁর স্কুলের নাম সামারিটন মিশন স্কুল । এলাকার দুঃস্থ পরিবারের বাচ্চারা, যারা সারাদিন বিভিন্ন অসামাজিক কাজকর্মে জড়িয়ে পড়েছিল, মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিল, মামুন নিজে তাদের খুঁজে খুঁজে নিয়ে আসতেন নিজের স্কুলে । তবে তখনই তিনি বুঝেছিলেন যে, সারাদিন এখানে পড়াশোনা করলেও রাতে বাড়িতে ফিরে তারা আবারও নানা অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়ে ৷ তাই এই ধরনের বহু বাচ্চাকে নিজের কাছে রেখে তাদের পড়াশোনা করানো ছাড়াও সমাজের মূল স্রোতে ফেরানোর চেষ্টা করে চলেছেন তিনি ৷ তাদের সার্বিক উন্নতি ও স্বাস্থ্যের কথা ভেবে তিনি ছোট একটি ক্লিনিকও তৈরি করলেন ।