কলকাতা, 9 মার্চ : তৃণমূলে শুরু হল ভারসাম্যের খেলা ৷ আর তার প্রথম ধাপে শ্যামও রাখলেন কূলও রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee Trying to Balance Between Old and New Generation of TMC) ৷ একদিকে পুরানোদের তৃণমূলে গুরুদায়িত্ব পালনের ভার দিয়ে বার্তা দিলেন, তাঁরা দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ৷ অন্যদিকে, একই মঞ্চে প্রশান্ত কিশোরকে এনে ভারসাম্য রক্ষা করলেন তিনি ৷ আসলে, অতীতে যেভাবে নবীন-প্রবীণদের মধ্যে তৃণমূলে একটা দূরত্বের ছবি দেখা গিয়েছে ৷ সেই দূরত্বই কমানোর চেষ্টা শুরু করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো ৷
সাম্প্রতিক অতীতে যেভাবে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব এবং যুব নেতৃত্বের মধ্যে বিভাজন লক্ষ্য করা গিয়েছে ৷ তা সামাল দেওয়াই ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে প্রবল চিন্তার বিষয় ৷ বিশেষ করে বিদ্রোহ যখন তাঁর পরিবারের ভেতর থেকে উঠে আসছিল ৷ সেই সময় কাজটা আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছিল মমতার জন্য ৷ সেই সময় গোটা বিষয়টির রাশ নিজের হাতে নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তৃণমূলের একটা অংশ রীতিমত প্রকাশ্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা করতে শুরু করে ৷ এমনকি তৃণমূলের একটা অংশে অভিষেকের প্রভাব বাড়ছিল, যা অনেক ক্ষেত্রেই ভাল চোখে নেননি তৃণমূল নেত্রী ৷
আরও পড়ুন : TMC-PK Relation : ফের একমঞ্চে মমতা-প্রশান্ত কিশোর, সংঘাত শেষে সন্ধির ইঙ্গিত
রাজনৈতিকমহলের মতে, অপ্রিয় হলেও সত্যি এই অবস্থার সামাল দিতে গেলে কঠিন সিদ্ধান্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিতে হত ৷ তাঁর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ হয়তো পরিবারের ভিতর থেকেই উঠে আসত ৷ কিন্তু, সতর্ক মমতা প্রথমে ক্যামাক স্ট্রিটকে কিছুটা নিষ্ক্রিয় করে, দলের যাবতীয় নিয়ন্ত্রণ যে তারই হাতে সেই বার্তা দেন ৷ এর পর অভিষেককে ফিরিয়ে আনেন তার পুরনো পদে ৷ তবে, অভিষেকের পারিষদ হিসাবে মমতা চারপাশে রেখে দেন তাঁর পুরনো ঘনিষ্ঠ নেতাদের ৷ এই বলয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যখন নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে রাখছেন, ঠিক তখন প্রশান্ত কিশোরকে আবার বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে তৃণমূলের মঞ্চে হাজির করে ভারসাম্য বজায় রাখলেন মমতা ৷ ফলে একদিকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে পুরনোদের রেখে, তাঁর পুরনো স্লোগান ‘ওল্ড ইজ গোল্ড’ বজায় রাখলেন ৷ অন্যদিকে, জনসংযোগ সহ অন্যান্য কর্মসূচির দায়িত্ব অভিষেক আর পিকের হাতে ছেড়ে দিয়ে, নিচুতলার সংগঠনকে সক্রিয় করার চেষ্টা করলেন মমতা ৷
আরও পড়ুন : Reshuffle in Mamata Cabinet : স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা, পুর-নগরোন্নয়নে ফের ফিরহাদ
আর তৃণমূল সুপ্রিমোর এই পদক্ষেপ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন রেজিস্টার রাজা গোপাল ধর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেসে বিদ্রোহ খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে ৷ কারণ এই দলের চালিকাশক্তি একমাত্র মমতা ৷ মমতার নামে দল ৷ মানুষের সমর্থনও একমাত্র মমতার প্রতি ৷ সে কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া তার পক্ষে সহজ হচ্ছে ৷ সাম্প্রতিক অতীতে দলের অন্দরে যে ফাটলের চিত্র প্রকাশ্যে চলে এসেছিল, তা যত তাড়াতাড়ি মেরামত করা যাবে ততই তৃণমূল কংগ্রেসের লাভ ৷ এক্ষেত্রে মমতা বন্দোপাধ্যায় যদি পুরনো এবং নতুনের মধ্যে বাস্তবিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন ৷ তার দলের জন্য অবশ্যই বাড়তি অক্সিজেন নিয়ে আসবে ৷’’