কলকাতা, 5 সেপ্টেম্বর : শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি (Bengal Recruitment Scam) নিয়ে গত কয়েকমাস ধরে তোলপাড়া রাজ্য রাজনীতি ৷ দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) ৷ ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) ৷ ঠিক এই পরিস্থিতিতেই সোমবার শিক্ষক দিবসের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Bengal CM Mamata Banerjee) বললেন, ‘‘মানুষ খারাপ হয় সঙ্গদোষ ও অবসাদে ৷’’
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে যে কেন একথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ? সঙ্গদোষ ও অবসাদে কার খারাপ হওয়ার কথা বললেন তিনি ? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনুমান, এক্ষেত্রে মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথা বলতে চেয়েছেন ৷
প্রসঙ্গত, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁকে তৃণমূল কংগ্রেসের সব পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ এমনকী, নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করেই সক্রিয় রাজনীতিতে পার্থকে ফিরতে হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ঘাসফুল শিবিরের তরফে ৷
অন্যদিকে তৃণমূলের আরেক হেভিওয়েট নেতা অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal) গ্রেফতার হয়েছেন গরুপাচার কাণ্ডে (Cattle Smuggling Case) জড়িত সন্দেহে ৷ প্রকাশ্যে তাঁর পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে মমতাকে ৷ কিন্তু বারবার মমতা বুঝিয়েছেন যে পার্থর দুর্নীতির দায় তৃণমূল কংগ্রেস নেবে না ৷ স্বাভাবিক তাই প্রশ্ন উঠছে, কেন এমন মন্তব্য করলেন তিনি ৷
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজনীতিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায় হলেন মমতার দীর্ঘদিনের সঙ্গী ৷ বহু আন্দোলনে তাঁরা একসঙ্গে থেকেছেন ৷ তৃণমূলেও মমতার পরই কার্যত স্থান ছিল পার্থর ৷ তিনি ছিলেন মহাসচিব ৷ অন্যদিকে সরকারেও শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতর বারবার সামলেছেন ৷ সেই কারণেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতি কিছুটা হলেই নরম হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন মমতা ৷
সেই কারণেই সম্ভবত তিনি বলেছেন, ‘‘কখনও কখনও ভালো মানুষও বিপথে পরিচালিত হয়ে যায় । সঙ্গদোষে এবং নানা রকম অবসাদে ভুগলে, তাঁদের আমাদের ভালো করতে হবে । ভালবাসতে হবে । তাঁদের ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে । এরকম কত মানুষ আছেন ।’’
রাজনৈতিক মহলের মতে, পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিপত্নীক ৷ যা তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে অবসাদ তৈরি করে থাকতে পারে ৷ তাছাড়া তাঁর একাধিক বান্ধবী ছিল ৷ সেই কারণে তিনি বিপথে চালিত হয়ে থাকতে পারেন ৷ সেই বিষয়টিই কার্যত বোঝানোর চেষ্টা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ একই সঙ্গে বুঝিয়েছেন, পার্থকে তৃণমূল থেকে একেবারে ব্রাত্য করে দেওয়া হবে না ৷ তাঁকে মূলস্রোত ফেরার সুযোগ দেওয়া হবে ৷
যদিও মুখ্যমন্ত্রী কারও নাম করেননি ৷ তাই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অন্য একটি অংশের মতে, তিনি পার্থ চট্টোপাধ্যায় কথা বলেননি ৷ বরং তিনি সামগ্রিকভাবে সমাজের কথাই তুলে ধরেছেন ৷ শিক্ষক দিবসে আসলে শিক্ষকদের কথাই বলেছেন ৷ নিজেদের বক্তব্যের সমর্থনে তাঁরা মমতার এদিনের মন্তব্যের একটি অংশ তুলে ধরেছেন ৷ যেখানে তিনি বলেছেন, ‘‘একটা শিক্ষক ভুল করলেই হইহই হচ্ছে । তাঁকে বাড়িতে গিয়েও খাতা দেখতে হয়, কত পরিশ্রম করতে হয় । সেটা আমরা মনে রাখি না ।’’
আরও পড়ুন :আমি কতটা লোভী হব, নির্ভর করবে আমার উপর, মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর