Mamata on Nupur Comment Row : সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের সমর্থন নয়, বিধানসভায় বললেন মমতা

নূপুর শর্মা বিতর্কে সোমবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় নিন্দা প্রস্তাব আনা হয় ৷ সেখানে বক্তৃতা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Mamata Banerjee Reaction on Nupur Sharma Comment Row) ৷ তিনি সেখানে বলেন, ‘‘সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের সমর্থন নয় ৷’’

কলকাতা, 20 জুন : সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের সমর্থন নয় । সোমবার রাজ্য বিধানসভায় স্পষ্টভাবে একথা জানিয়ে দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Bengal CM Mamata Banerjee) । সোমবার নূপুর শর্মা ইস্যু উঠল রাজ্য বিধানসভায় (Bengal Assembly) ।

বিজেপি থেকে বহিষ্কৃত ওই নেত্রীর বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে । কিন্তু বাংলা সবসময়ে শান্তির পক্ষে, শান্তি বজায় রেখেছে । এই মর্মে সোমবার রাজ্য বিধানসভায় নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে নিন্দাপ্রস্তাব পেশ করে রাজ্যের শাসক দল । এদিন বিধানসভায় এই প্রস্তাব পেশ করেন রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Bengal Minister Partha Chatterjee) ।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই প্রস্তাবের উপর নিজের বক্তব্য রাখেন (Mamata Banerjee Reaction on Nupur Sharma Comment Row) । সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে সওয়াল করেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও (Bengal Assembly Speaker Biman Banerjee) । তবে এই প্রস্তাব পাস হওয়া পর্যন্ত বিধানসভায় ছিল না বিরোধী দল বিজেপি (BJP) । তারা মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য রাখার সময় বিধানসভা ছেড়ে ওয়াকআউট করেন । বিধানসভায় উপস্থিত একমাত্র বিরোধী দলের প্রতিনিধি আব্বাস সিদ্দিকী এই প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছেন ।

এদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে প্রস্তাব নিয়ে আসেন, সেখানে বলা হয় যে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে সম্প্রীতি বজায় রাখার লক্ষ্যে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে রাজ্য সরকার । তবে সারা দেশে যেভাবে সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা হয়েছে, তা আসলে মূল বিষয়, কর্মসংস্থান ও উন্নয়ন থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা । ধর্মের নামে, বিজেপির এক মুখপাত্র মন্তব্যের জেরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা চলাচ্ছে । এই ধরনের মন্তব্য করা এবং তাকে ঘিরে উস্কানি দেওয়ার চেষ্টার বিরুদ্ধে অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক ।

এরপরই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কারও নাম করে আমি বলব না, তাহলে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে বলা হয়ে যাবে । এ ধরনের ঘটনায় নাম নিয়ে আক্রমণ সংসদীয় রীতি-নীতির পরিপন্থী । যে বিষয়টি পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিধানসভার তুলেছেন, সেটি না রাখলে ভুল হত । আজকে ঘৃণার রাজনীতি, বিদ্বেষমূলক রাজনীতি, উস্কানি ও প্ররোচনার রাজনীতি চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে । এই ধরনের রাজনীতি ভবিষ্যতকে কি পথ দেখাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে ।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা কে কী খাব, আমি মনে করি না এটা ধর্ম । কেউ যদি স্বামী বিবেকানন্দের, রামকৃষ্ণ দেবের কথা বলেন আমি তাঁকে স্যালুট জানাব । কেউ যদি শিক্ষা নিয়ে কথা বলেন, আমি তাঁকে স্যালুট জানাব । ভুলে গেলে চলবে না ধর্মের সঙ্গে ইতিহাসের একটা যোগ থাকে । আমাদের ভারতবর্ষের ইতিহাস বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধর্মের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে । এক-এক টা সময় আমাদের দেশে এক-এক জন রাজত্ব করেছেন । সে সময় একেকটি ধর্মের প্রচার এবং প্রসার হয়েছে । কিন্তু এরপরেও আমাদের দেশ ধর্মনিরপেক্ষ ভাবনা থেকেই পরিচালিত হয়েছে । কিন্তু এখন সেই পথ থেকে সরে আসার চেষ্টা হচ্ছে ।’’

মুখ্যমন্ত্রী এদিন আরও অভিযোগ করেছেন, এই মুহূর্তে দেশে একটা আগুন নিয়ে খেলার চেষ্টা হচ্ছে । একটা জিনিসকে ঢাকার জন্য আরেকটা জিনিস সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে । এদিন একই সঙ্গে রাজ্যের সংখ্যালঘু মানুষজনের প্রতি আবেদন করেন মুখ্যমন্ত্রী । তিনি বলেন, ‘‘আমি আমার সংখ্যালঘু ভাই-বোনেদের কাছে আবেদন করব, বিজেপির কেউ একটা প্ররোচনা দিল তাই নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে আপনারা রাস্তায় নেমে রাস্তা অবরোধ করবেন না ঘণ্টার পর ঘণ্টা । এটা বিজেপিকে অ্যাডভান্টেজ দেওয়া হচ্ছে । বিজেপিকে অ্যাডভান্টেজ দেবেন না ।’’

এরপর হাওড়ায় হিংসার প্রসঙ্গ টেনে আনেন মুখ্যমন্ত্রী । তিনি বলেন, ‘‘হাওড়ায় যে ঘটনা ঘটেছে, আমি সেটা বারবার বলেছি প্রত্যাহার করতে । কারণ, এগুলি আসল মুসলিমরা করেনি ৷ আমার রাজ্যে সাড়ে তিন কোটি মুসলমান আছে । অন্য কোনও জায়গায় হয়নি, মাত্র তিন-চারটি জায়গায় হয়েছে । একটা হাওড়ায়, একটা রেজিনগর, একটা দমকলে হয়েছে একটা নবদ্বীপে ঘটানোর চেষ্টা হয়েছে । হাওড়ায় তিন চার জনের দোকান ভাঙার চেষ্টা হয়েছে। এটা করা উচিত হয়নি ।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি সব ধর্মের মানুষকে বলব, সকলের সহনশীলতা দেখানো উচিত । এবং আমি মনে করি যা ঘটছে এবং যা ঘটেছে ইমিডিয়েট তাদের গ্রেফতার করা উচিত ছিল । তারা গ্রেফাতার করেনি । বাংলার পুলিশ করেছে । আমরা চিঠিও পাঠিয়েছি, আজ তার জবাবও এসেছে । চার মাস সময় চেয়েছে একজন । এদের বিরুদ্ধে আরও অনেক কেস আছে ।’’