কলকাতা, 9 জুন :দিল্লির সীমানায় সাত মাস ধরে চলা কৃষক আন্দোলনকে সামনে রেখে কার্যত মোদি বিরোধী ঘুঁটি সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু করে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ৷ সাফ জানালেন, তাঁর উদ্দেশ্য কোনও আন্দোলন বা জোটের নেতৃত্ব দেওয়া নয় ৷ তাঁর উদ্দেশ্য, কেন্দ্রের ক্ষমতা থেকে নরেন্দ্র মোদিকে হঠানো ৷
বুধবার নবান্নে কৃষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ৷ উপস্থিত ছিলেন কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েত ৷ ছিলেন বিজেপি ছেড়ে সদ্য তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়া যশবন্ত সিনহাও ৷ বৈঠকে সরাসরি কেন্দ্রের কৃষক নীতি এবং নয়া তিন কৃষি আইন প্রসঙ্গে সমালোচনা করেন কৃষক নেতারা ৷
কৃষক আন্দোলনকে সামনে রেখে আদতে কেন্দ্রবিরোধী শক্তিকে পোক্ত করাই যে এই বৈঠকের অন্যতম উদ্দেশ্য় ছিল, তা কৃষক নেতাদের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট ৷ তাঁরা সাফ জানান, কেন্দ্রের কৃষক বিরোধী অবস্থানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে ৷ আর এই লড়াইয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কেই সামনের সারিতে দেখতে চান তাঁরা ৷
আরও পড়ুন :করোনার টিকা নীতিতে বদল এনে মমতার কথাই কি মানলেন মোদি ?
কৃষক নেতাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন মমতাও ৷ তিনি জানিয়েছেন, যত দিন পর্যন্ত না কৃষকদের দাবি-দাওয়া পূরণ হচ্ছে, তত দিন আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে ৷ এবং আন্দোলনে তৃণমূল কংগ্রেস কৃষকদের পাশে থাকবে ৷ একই সঙ্গে, কৃষকদের দাবি মতো মমতাও প্রত্যেক কৃষিজ পণ্য়ের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিশ্চিত করার পক্ষে সওয়াল করেন ৷ প্রয়োজনে এই বিষয়ে আইন আনা যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি ৷
ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ বলছে, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা দখলে হ্য়াটট্রিক করার পর মমতার পরবর্তী লক্ষ্য দিল্লির মসনদ ৷ মমতা নিজেও প্রকাশ্য়ে সেকথা মেনে নিয়েছেন ৷ আর তাই চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে জাতীয়স্তরে নিজের ভিত আরও পোক্ত করতে চাইছেন মমতা ৷ কৃষক আন্দোলন এক্ষেত্রে মমতার বড় হাতিয়ার হতে পারে ৷ কারণ, বাংলাতেও মমতার উত্থান হয়েছিল কৃষক আন্দোলনকে পাথেয় করেই ৷
এদিনের বৈঠকে কৃষক নেতারা সাফ জানান, তাঁদের বিশ্বাস, কৃষক আন্দোলন আগামী দিনে কেন্দ্রের পালাবদলেও বড় ভূমিকা নিতে পারে ৷ আর তাতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হতে পারেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ৷ তবে কি মোদির বদলে দিদিকেই দেশের প্রশাসনিক প্রধানের পদে দেখতে চাইছেন কৃষকরা ?
না, এর কোনও উত্তর এদিনের বৈঠকে পাওয়া যায়নি ৷ তবে ইঙ্গিত একেবারেই স্পষ্ট ৷ মমতার বার্তা, কৃষকদের দাবি মেনেই অন্য়ান্য রাজ্যের ‘বন্ধু’ মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি ৷ প্রয়োজনে রাজ্য সরকারগুলিরও একটা ‘ইউনিয়ন’ থাকা উচিত বলে জানান মমতা ৷ যাতে কোনও একটি রাজ্য় কেন্দ্রের বঞ্চনার শিকার হলে বাকিরা তার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে পারে ৷
আরও পড়ুন :বিজেপিকে ভাঙাতে চাইলে ফল ভালো হবে না, তৃণমূলকে হুঁশিয়ারি শুভেন্দুর
প্রশ্ন উঠছে, তবে মোদি বিরোধী জোটের (ইউপিএ) নেতৃত্ব দেবেন মমতা ? নেতৃত্ব দেবেন কৃষক আন্দোলনের ? সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মমতার উত্তর হল, না ৷ কারণ, তিনি কোনও জোট বা আন্দোলনের নেত্রী হতে চান না ৷ চান শুধুই ভারতের ক্ষমতা থেকে মোদিকে হটাতে ৷
ক’দিন আগে সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেছিলেন, তাঁদের লক্ষ্য ভারতকে বাঁচানো ৷ এদিন সেই একই কথা শোনা গেল মমতার গলাতেও ৷ এমনকী, তাঁর এই ভারত বাঁচাও কর্মসূচিতে বিজেপির আদি ঘরানার এবং একেবারে তরুণ নেতাদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন মমতা ৷