কলকাতা, 28 জানুয়ারি: হেমন্ত সেতু ৷ নামটা কি অচেনা লাগছে? একদমই না, উত্তর কলকাতার ব্যস্ততম ব্রিজ হল "টালা ব্রিজ" ৷ যার পোশাকি নাম হেমন্ত সেতু ৷ BT রোডের সঙ্গে শহরতলির যোগাযোগের এক অন্যতম মাধ্যম ৷ বর্তমানে এই ব্রিজের মেয়াদ কমছে ৷ 2019 সালের দুর্গাপুজোর সময় বিষয়টি নজরে আসে প্রশাসনের ৷ নেওয়া হয় বিশেষজ্ঞদের মতামত ৷ তৎপরতার সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয় বড় গাড়ির চলাচল ৷ ব্রিজের গুণগতমান কমে আসায় প্রথম থেকেই স্থির হয়েছিল ব্রিজ ভাঙার দিন ৷ 1 ফেব্রুয়ারি ভাঙা হবে ইতিহাস বিজড়িত এই হেমন্ত সেতু ৷ তারই মাঝে স্মৃতিচারণায় টালাবাসীরা ৷ তবে সকলেই একমত, ভালো কাজের জন্য কিছু না কিছু হারাতে হয় ৷ পাশাপাশি তাঁরা প্রবল যানজট তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ৷ তবুও তাঁরা প্রস্তুত ৷
সে এক ইতিহাস । গঙ্গায় ব্যারাকপুরে তখন রমরমিয়ে চলছে পাটশিল্প । শিল্পাঞ্চলের কাঁচামাল এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চটজলদি সরবরাহ করতে তৈরি হয় সার্কুলার রেললাইন । এই রেললাইনের জন্য সড়কপথে সেইসময় BT রোড়ের সঙ্গে উত্তর শহরতলির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ৷ এমতাবস্থায় পরিস্থিতি সামলাতে তৈরি হয় ছোটো একখানি ব্রিজ । সেই ব্রিজ যে চলবে না, বুঝতে পারে মহাকরণের কংগ্রেস সরকার । ভবিষ্যতের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নতুন বড় মাপের সেতু তৈরিতে । নামকরণ করা হয় হেমন্ত সেতু ৷ বাংলার রূপকার বিধানচন্দ্র রায় করেছিলেন পরিকল্পনা। তার দূরদর্শিতা বলে দিয়েছিল চওড়া ব্রিজ তৈরি না করা হলে ভবিষ্যতে BT রোডের সঙ্গে APC রোডের যোগাযোগে সমস্যা হবে । যানজট হয়ে উঠবে মূল সমস্যা। সেই সূত্রে যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রেল মন্ত্রকের সঙ্গে সমন্বয়ে তৈরি হয় নতুন ব্রিজ। কাজ শুরু হয় ছয়ের দশকের শুরুতেই। 1963-1964 সালে শেষ হয় ব্রিজ তৈরির কাজ। দুর্ভাগ্যের বিষয় ব্রিজ দেখে যেতে পারেননি বিধানচন্দ্র রায়। 1962 সালের 1 জুলাই মৃত্যু হয় তাঁর। ব্রিজের উদ্বোধন করেন প্রফুল্ল চন্দ্র সেন। ব্রিজটির নামকরণ করা হয় হেমন্ত সেতু ৷ তারপর থেকে প্রায় ছয় দশক ধরে উত্তর কলকাতার সঙ্গে দক্ষিণ কলকাতার মেলবন্ধন করে ব্রিজটি ৷ অনেক ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে ব্রিজটির সঙ্গে ৷