কলকাতা, 19 অক্টোবর : কোরোনা পরিস্থিতিতে রাজস্ব বাড়াতে মদের উপর 30 শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক বসিয়েছিল রাজ্য সরকার । প্রাথমিকভাবে তাতে রাজস্ব আদায় বেড়েছিল কিছুটা । কিন্তু ক্রমশই কমছে রাজস্ব আদায় । আবগারি দপ্তর সূত্রে খবর এমনই । আর তাই দিল্লি, হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশের পথে হেঁটে বিয়ার ওয়াইন এবং দেশি মদের দাম কমিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ । কিন্তু তাতেও ব্যবসায় মন্দা । এই পরিস্থিতিতে এবার বারে নাচ-গানের অনুমতি দিয়ে মন্দা কাটাতে চাইছে রাজ্যের আবগারি দপ্তর । অন্তত বার মালিকদের ধারণা তেমনই । তাঁদের আশা, ক্রেতাদের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করলে কিছুটা হলেও লাভের আশা দেখবে ধুঁকতে থাকা রেস্তরাঁ ও বারের ব্যবসা । সরকারের রেভিনিউ ঘাটতিও কমবে ।
অগাস্টে মদ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির শীর্ষ সংগঠন কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান অ্যালকোহলিক বেভারেজ কোম্পানিজ় (CIABC) চিঠি দেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে । সেখানে মদের উপর শুল্ক কমানোর আবেদন জানানো হয় । সেই চিঠিতে সংগঠনের তরফে বলা হয়, 9 এপ্রিল থেকে রাজ্য সরকার মদের উপর 30 শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করার পর থেকেই বিক্রিতে ভাটা পড়েছে । কারণ মদ্যপায়ীরা কম দামের মদের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন । এতে চোলাইয়ের মতো মদের কারবার বাড়ছে । যা যথেষ্ট ঝুঁকির । মদের বিক্রি কমায় রাজস্ব আদায়ও কমেছে । লকডাউনে মদের দোকান খোলার পরে পশ্চিমবঙ্গের বিয়ারের বিক্রি 80 শতাংশের বেশি কমে গেছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন কনফিগারেশনের ডিরেক্টর জেনেরাল বিনোন গিরি । সেখানে তিনি দিল্লির উদাহরণ টেনে বলেছেন, দিল্লি সরকার একটা সময় শুল্ক 70 শতাংশ পর্যন্ত নির্ধারিত করেছিল । তখন সেই রাজ্য সরকারের রাজস্ব আদায় তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল । এখন দিল্লির সরকার শুল্ক 5 শতাংশে নামিয়ে এনেছে । যার ফলে বিক্রি ফের ঊর্ধ্বমুখী । সেই পথে হেঁটে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিয়ার, দেশি মদ এবং ওয়াইনের দাম কিছুটা কমিয়েছে । তাতে সামান্য বিক্রি বেড়েছে । কিন্তু ঘাটতি মিটছে না ।
পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে রাজ্যে বারগুলি খোলার অনুমতি দেওয়া হয় । তবে শর্তসাপেক্ষে বার চালু করার অনুমতি দেয় রাজ্য সরকার । বলা হয়, কনটেনমেন্ট জ়োনগুলির বাইরে থাকা বারগুলি খোলা যাবে । কিন্তু মানতে হবে বেশ কিছু নিয়ম । 50 শতাংশের বেশি ক্রেতা নিয়ে বার খোলা যাবে না । বার এবং রেস্তরাঁয় অবশ্যই সোশাল ডিসটেন্স মানতে হবে । মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি । বারগুলিতে নিয়মিত স্যানিটাইজ়েশনের ব্যবস্থা করতে হবে । সেই মতো পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে খুলে যায় বারগুলি । কিন্তু 31 অগাস্ট জারি করা নির্দেশিকায় বলা হয়, বারের ডান্স ফ্লোরগুলি বন্ধ রাখতে হবে । চলবে না লাইভ পারফরম্যান্স । অনশপগুলি চালু করা যাবে না । এমন নির্দেশিকার পর রাজ্যের বারগুলিতে প্রায় মাছি তাড়ানোর অবস্থা হয় ।
তথ্য বলছে, 2020-'21 অর্থবর্ষে আবগারি খাতে কর বাবদ 12,731 কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছিল রাজ্য সরকার । যা 2019-'20 অর্থবর্ষের তুলনায় অনেকটাই বেশি । গত অর্থবছরে রাজ্য সরকার আবগারি কর আদায় করে 11,626 কোটি টাকা । বছর গড়াতে চললেও চলতি অর্থ বছরের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো দূরস্থান, গত অর্থবছরের সমান কর আদায় করা যাবে কি-না সে বিষয়ে সন্দিহান আবগারি কর্তারা ।