কলকাতা, 7 এপ্রিল: কোরোনার জেরে টানা লকডাউন। আর তার জেরে ব্যাপক ক্ষতির মুখে রাজ্য সরকার। ভাঁড়ারে রীতিমতো টান পড়েছে। এরমধ্যে সাড়ে 4 কোটি মানুষকে আগামী ছয় মাস বিনামূল্যে রেশনে খাদ্য সামগ্রী বণ্টনের কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। সঙ্গে আপতকালীন পরিস্থিতিতে চিকিৎসা খাতে ব্যাপক বরাদ্দ তো রয়েছেই। অন্যদিকে কেন্দ্রের কাছ থেকে রাজ্যের দাবি মতো টাকা আসেনি। বাজার থেকে ঋণ তোলার জন্য যে কেন্দ্রীয় ছাড়পত্র চাওয়া হয়েছিল তারও পুরোটা মঞ্জুর হয়নি বলে অভিযোগ। সবমিলিয়ে রীতিমতো দিশেহারা অবস্থা রাজ্য অর্থ দপ্তরের। আর তাই এবার রাজ্যে বিভিন্ন প্রকল্পে যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল তার অব্যবহৃত অংশ দ্রুত ফেরানোর নির্দেশ দিল নবান্ন।
অর্থদপ্তর সূত্রে খবর, রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও জেলা পরিষদগুলিকে চিঠি দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্যে দেওয়া অর্থের অব্যবহৃত অংশ ও গত অর্থ বছরের পড়ে থাকা তহবিলের অর্থ দ্রুত ফেরত চাওয়া হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে এই অর্থ আবশ্যিকভাবে ফেরত দিতে হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
লকডাউনের জেরে ক্ষতির মুখে পড়ে খরচে লাগাম টানতে ইতিমধ্যে একগুচ্ছ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার । একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এই নির্দেশিকা কার্যকরী থাকবে বলেও জানানো হয়েছে। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সরকারি বৈঠকের ক্ষেত্রে খাওয়াদাওয়া যতটা সম্ভব কমাতে হবে। বিমানে যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে ইকনমি ক্লাস ব্যবহার করতে হবে। এগজিকিউটিভ বা বিজনেস ক্লাস ব্যবহার করা যাবে না। পূর্ত, জনস্বাস্থ্য কারিগরির মতো কিছু দপ্তর অর্থ দপ্তরের অনুমতি ছাড়া ১ কোটি টাকার বেশি অর্থ খরচ করতে পারবে না। অন্যান্য দপ্তরের ক্ষেত্রে যা বেঁধে দেওয়া হয়েছে 10 লাখে। নবান্ন সূত্রে খবর, কোরোনার জেরে এভাবেই সরকারি খরচে রাশ টানার কথা জানিয়েছে অর্থ দপ্তর।
পাশাপাশি এই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, নতুন করে কোনও প্রকল্প নেওয়া চলবে না। এমনকি পরিকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও কিছু্ বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। খুব প্রয়োজন না হলে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মেরামতির কাজ করা চলবে না। শুধুমাত্র জরুরি ভিত্তিতে জনস্বার্থের প্রয়োজনে কিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রেও অর্থ দপ্তরের অনুমতি নিতে হবে। যে সব প্রকল্পের কাজ চলছে সেগুলির ক্ষেত্রেও নতুন করে আর কোনও অর্থ বরাদ্দ করা হবে না। এই মুহুর্তে গাড়ি, কম্পিউটার, আসবাবপত্র, তথ্যপ্রযুক্তি সহায়ক যন্ত্রপাতি, AC মেশিন, ওয়াটারকুলার, টিভি ইত্যাদি অফিসের প্রয়োজনে কেনা যাবে না। যদি স্কুল, কলেজ, লাইব্রেরি, হাসপাতাল অথবা এধরনের কোনও সংস্থার জন্য নতুন বাড়ি তৈরি করা হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে নতুন সামগ্রী কিনতে হলে অর্থদপ্তরের অনুমতি প্রয়োজন। কোনও আধিকারিক তাঁর চেম্বার অথবা তাঁর অফিস বিল্ডিং সাজানো বা মেরামতির কাজ করতে পারবেন না। অর্থ দপ্তরের বিশেষ অনুমতি ছাড়া কোনও দপ্তর অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া নিতে পারবে না। অর্থদপ্তরের বিনা অনুমতিতে কর্মী নিয়োগ করা যাবে না। সরকারি বৈঠকের ক্ষেত্রে খাওয়াদাওয়া যতটা সম্ভব কমাতে হবে। IAS, IPS এবং IFS-দের বাড়ি তৈরির জন্য অগ্রিম অর্থ দেওয়া হবে না। চিকিৎসা, শিক্ষা অথবা বিয়ে ছাড়া অন্য কোনও কারণে কর্মীদের GPF থেকে টাকা তুলতে দেওয়া হবে না। মোটরসাইকেল অথবা কম্পিউটার কেনার জন্য অগ্রিম অর্থ দেওয়া হবে না।
নতুন প্রকল্পের ক্ষেত্রে পূর্ত, জনস্বাস্থ্যকারিগরির মতো কিছু দপ্তর অর্থ দপ্তরের অনুমতি ছাড়াই এতদিন 10 কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ করতে পারত। অর্থ দপ্তরের নতুন নির্দেশিকায় সেই ক্ষমতা কমিয়ে এক কোটি টাকা করা হল। অন্যান্য দপ্তরের ক্ষেত্রে এই ক্ষমতা এক কোটি থেকে কমিয়ে 10 লাখ হয়েছে।