পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / city

সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আদালতের কাজ শুরু হোক, চাইছেন বিচারপ্রার্থী-আইনজীবীরা - কলকাতা

সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশে 16 মার্চ থেকে রাজ্যের সমস্ত আদালতের কাজকর্ম কার্যত বন্ধ রয়েছে ৷

Lawyers want to work amid lockdown
আদালতের কাজকর্ম

By

Published : May 19, 2020, 6:28 PM IST

Updated : May 26, 2020, 9:04 PM IST

কলকাতা, 19 মে : লকডাউনের জেরে 31 মে পর্যন্ত রাজ্যের সমস্ত আদালতের স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ থাকবে ৷ এই মর্মে হাইকোর্টের তরফে কয়েকদিন আগেই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছে । কোরোনা ভাইরাসের জেরে সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশে 16 মার্চ থেকে রাজ্যের সমস্ত আদালতের কাজকর্ম কার্যত বন্ধ রয়েছে ৷ শুধুমাত্র অত্যন্ত জরুরি মামলার শুনানি চলছে । হাইকোর্টে কিছু মামলার শুনানি হলেও নিম্ন আদালতগুলির অবস্থা আরও খারাপ । কিন্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে 16 মার্চ হলেও প্রায় গোটা মার্চ মাসেই আদালতের কাজকর্ম তেমনভাবে হয়নি । ফলে সাধারণ বিচারপ্রার্থী, আইনজীবী থেকে শুরু করে আদালতের সঙ্গে যুক্ত একাধিক পেশার ব্যক্তি চরম সংকটের সম্মুখীন ।

হাইকোর্ট সূত্রে জানা যাচ্ছে, ফেব্রুয়ারি মাসের হিসাবে কলকাতা হাইকোর্টের অরিজিনাল ও অ্যাপিলেট লিয়ে প্রায় দু’লাখ 29 হাজার মামলার নিষ্পত্তি না হয়ে পড়ে ছিল । অ্যাপিলেট সাইডে দেওয়ানী ও ফৌজদারি মিলিয়ে দু’লাখ 8হাজার 974 এবং অরিজিনাল সাইডে 19 হাজার 86টি মামলা অমীমাংসিত ছিল । এর উপর কোরোনার কারণে আদালতের কাজকর্ম প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে । লকডাউন পরিস্থিতিতে হাইকোর্টে বসছে হাতে গোনা কয়েকটি বেঞ্চ । তাও ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে শুনানি চলার ফলে বহু আইনজীবী এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারছেন না । কারণ অনেকেই বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত নন । পাশাপাশি অনেক সময় ইন্টারনেটের সংযোগ না থাকার জন্য স্থগিত হয়ে যাচ্ছে শুনানি । সাধারণ মানুষ জানেনই না এই নতুন পদ্ধতিতে ঠিক কোথায় কীভাবে আবেদন করলে তাঁর মামলাটির শুনানির ব্যাবস্থা হতে পারে । এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিমকোর্ট নজিরবিহীনভাবে এক সদস্য বিশিষ্ট বেঞ্চ বসিয়ে মানুষকে আইনি পরিষেবা দিয়ে মামলার যে পাহাড় জমছে তা কিছুটা লাঘব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ।

আদালতের কাজ শুরু হোক, চাইছেন আইনজীবী থেকে বিচারপ্রার্থীরা

এই পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টগুলির ক্ষেত্রে কি নতুন কিছু ভাবা হচ্ছে? প্রশ্নের উত্তরে কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল রাই চট্টোপাধ্যায় জানান, ‘‘এখনও পর্যন্ত বিশেষ কোনও নির্দেশ আমাদের জন্য আসেনি ।’’ কিন্ত এই পরিস্থিতি কতদিন চলতে পারে? সাধারণ মানুষের হতাশা আরও বাড়ছে । বিশেষ করে হাইকোর্টে বিচারাধীন কয়েকশো চাকরি সংক্রান্ত মামলার শুনানি একেবারেই বন্ধ । ফলে ওই সমস্ত চাকরিপ্রার্থীরা দিনের পর দিন আরও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন । পাশাপাশি বহু বিচারাধীন বন্দীর জামিনের আবেদনের শুনানি হচ্ছে না । আদালত যেগুলিকে মনে করছে অত্যন্ত জরুরি, সেগুলি শুনছে । কিন্ত তার বাইরে হাজার হাজার মানুষ দিন গুণছেন । বহু মামলাকারী আগাম জামিনের আবেদন জানাতে পারছেন না । এমন একজন উচ্চ প্রাথমিকে চাকরিপ্রার্থী নুরুজ্জামান, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিসহ অন্যান্য বিচারপতিদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন ৷ তাঁদের মামলার যাতে দ্রুত শুনানি করে অবসাদ ও হতাশা থেকে মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করুক আদালত । পাশাপাশি প্রদীপ সাউ নামে আর এক চাকরিপ্রার্থীও আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, আদালত বন্ধ থাকার জন্য তাঁরা বিচার পাচ্ছেন না । তাই দ্রুত আদালত খুলে মামলাগুলির যেন শুনানির ব্যাবস্থা করা হয় । কোচবিহার জেলার আপার প্রাইমারির প্যানেলভুক্ত প্রার্থী দীপঙ্কর দেব জানান, ‘‘মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ার জন্য আমার মতো বহু প্রার্থীর নিয়োগ আটকে গিয়েছে ।’’

মুর্শিদাবাদের এক ব্যক্তি সংবাদমাধ্যমে নিজের পরিচয় গোপন রেখে জানালেন, তাঁর পরিচিত এক বিচারাধীন বন্দী আদালত বন্ধ থাকার কারণে বিচার পাচ্ছেন না । তাহলে উপায়? এ ব্যাপারে আইনজীবী আশিস কুমার চৌধুরি জানালেন, ‘‘কোরোনার কারণে আদালতের কাজকর্ম প্রায় বন্ধ । এর ফলে বিচারাধীন প্রার্থীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত । যে সমস্ত মামলার দ্রুত শুনানির প্রয়োজন ছিল আদালত ঠিকঠাক না বসার কারণে সেটা সম্ভবই হচ্ছে না । ফলে এর সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষই অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । কিন্ত কোরোনার প্রকোপ থেকে এখনই মানুষ মুক্তি পাবে সেই আশ্বাস বিজ্ঞানীরাও দিতে পারছেন না । তাই বিচার প্রক্রিয়া চালু রাখা প্রয়োজন । সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে, আদালত কক্ষ স্যানিটাইজ় করে বিচারপ্রক্রিয়া সচল করা প্রয়োজন ।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘হাইকোর্টে এখন যেভাবে কাজ হচ্ছে সেটা একেবারেই পর্যাপ্ত নয় । বিচারপ্রার্থীরা আদালতে আসতে পারছেন না । সীমিত সংখ্যক মামলার শুনানি হচ্ছে ।’’ আইনজীবীর মতে, ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে যে শুনানি চলছে তাতে অনেকেই সড়গড় নয় । ফলে বিচারপ্রক্রিয়া অনেকের কাছেই অধরা । আদালতকে তার পুরনো অবস্থানে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন । বিচার প্রক্রিয়াকে সচল করার জন্য বেশি সংখ্যক বেঞ্চ বসানোর দরকার । তাহলে দীর্ঘদিন ধরে জেলে বন্দি বিচারাধীন আসামিরা বিচার পাবেন । পাশাপাশি বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবী, টাইপিস্ট, ক্লার্ক, স্টেনোগ্রাফার ছাড়াও আরও বহু ব্যক্তি অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে । অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নিজেরা আরও সচেতনভাবে কাজ করলে এই ভাইরাসকে রুখে দেওয়া যাবে ।’’

আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বললেন, ‘‘বিচার প্রক্রিয়া জরুরি পরিষেবা । বিচার পাওয়া প্রত্যেকের আইনি অধিকার । বিচারবিভাগ যদি নিয়মিত কাজ না করে তাহলে এই ন্যায্য অধিকার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বঞ্চনা থেকে যায় । যে কোনও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিচারব্যাবস্থা মস্তিষ্কের মতো কাজ করে ।’’ অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, মদের দোকান খোলা গেলে আইনি প্রক্রিয়া কেন চালু করা যাবে না ৷ আইনজীবী আলি আহসান আলমগির বলেন, ‘‘হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির প্রচেষ্টায় মার্চের শেষ থেকে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে মামলার শুনানি হচ্ছে । আগামী 19, 22, 26, ও 29 মে বেশ কয়েকটি ডিভিশন বেঞ্চ ও সিঙ্গল বেঞ্চ বসবে । ফলে বিচারব্যবস্থা একেবারে থেমে গেছে সেটাও বলা যাবে না ।’’

Last Updated : May 26, 2020, 9:04 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details