কলকাতা, 16 জুন : নারদ মামলা (Narada Case) এ রাজ্য থেকে সরানোর যে আবেদন জানিয়েছিল সিবিআই, তার উপর শুনানি চলছে কলকাতা হাইকোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে ৷ মঙ্গলবারের মতো বুধবারও অভিযুক্তদের তরফে সওয়াল করেন মদন মিত্রের আইনজীবী সিদ্ধার্থ লুথরা ৷ এদিন তিনি সিবিআই যে নিয়মকানুনের দ্বারা চলে, সেই ম্যানুয়াল প্রয়োগের যোগ্যতা নিয়ে নিজের বক্তব্য পেশ করেন ৷
প্রথমেই বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন আইনজীবী সিদ্ধার্থ লুথরার কাছে জানতে চান, প্রশাসনিক কাজের জন্য যে নথি রয়েছে, তা কি কোনও ব্যক্তির ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা সম্ভব ? এর জবাবে আইনজীবী লুথরা বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় ভিজিল্য়ান্স কমিশনের সম্মতি নিয়েই সিবিআইয়ের ম্যানুয়াল তৈরি হয়েছে ৷ তাই সেটা মেনে চলা সিবিআইয়ের জন্য বাধ্যতামূলক ৷’’
এরপর বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের প্রশ্ন ছিল, ‘‘সিবিআই ম্যানুয়াল না মেনে চললে বিভাগীয় তদন্ত হতে পারে ৷ কিন্তু সেক্ষেত্রে অভিযুক্তরা কীভাবে লাভবান হবেন ?’’
জবাবে মদনের আইনজীবী বলেন, ‘‘17 মে মাননীয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে যে চিঠি পাঠিয়েছিল সিবিআই, তা অস্পষ্ট ৷ সেখানে মামলা স্থানান্তরের কোনও কথা লেখা ছিল না ৷ তাছাড়া, তদন্তের এই পর্যায়ে যেখানে চার্জশিট পেশ হয়ে গিয়েছে, সেখানে হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদেরও কোনো প্রয়োজন নেই ৷ সিআরপিসি সংশোধনের পর পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের শারীরিকভাবে আদালতের কাছে পেশ করার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। আইন মোতাবেক, ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমেই বিচারপর্ব চলতে পারে ৷ সিবিআই আদালতের বিচারক তাঁর চেম্বারেই শুনানি করেছেন সেদিন। সেখানে কেউ উপস্থিত ছিলেন না ৷ তাই মহামান্য বিচারকের প্রভাবিত হওয়ারও কোনও সুযোগ ছিল না ৷ সেদিন শুনানি প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলেছিল ৷ সিবিআই সেখানে বাধাদানের কোনও প্রসঙ্গ তোলেনি ৷’’
আরও পড়ুন :Narada Case : অভিযুক্তদের গ্রেফতারির যৌক্তিকতা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে প্রশ্ন আইনজীবীর
হাইকোর্টের কাছে মদনের আইনজীবীর আবেদন ছিল, ‘‘সিবিআইয়ের কাছ থেকে সিসিটিভি ফুটেজ চেয়ে পাঠাক আদালত ৷ তাহলেই দেখা যাবে সিবিআই কার্যালয়ের মূল ফটক বাধাহীন ছিল কিনা ৷ আদালতকে বিপথে চালিত করার চেষ্টা করছে সিবিআই ৷ নিম্ন আদালতে শুনানির সময় গুরুত্বপূর্ণ নথি পেশ না করতে পারার যে গুরুতর অভিযোগ সিবিআই করছে, তাও অবিলম্বে খারিজ করা উচিত ৷’’
এরপর করোনা পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে আইনজীবী লুথরা বলেন, ‘‘গোটা দেশে বিগত 14 মাস ধরে জামিনের মামলার শুনানি ভার্চুয়ালি হচ্ছে ৷ অথচ এখানে নিম্ন আদালত অভিযুক্তদের জামিন দেওয়ার পরও সিবিআই তাঁদের মুক্ত করেনি ৷ তারা হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের জন্য অপেক্ষা করছিল ৷ নিম্ন আদালতে নিয়মমাফিকই শুনানি এবং রায়দান হয়েছিল ৷ তারপর গোটা বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত করে দেখাবার মতো কিছু নেই ৷ সিবিআই এ রাজ্যে একাধিক মামলার তদন্ত করছে ৷ তাহলে তারা শুধুমাত্র একটি মামলা নিয়েই অতিরিক্ত স্পর্শকাতর কেন ?’’
এরপরই বিচারপতিরা জানতে চান, সিবিআই বলতে চেয়েছিল অভিযুক্তরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একত্রিত হয়ে ভার্চুয়াল শুনানির জন্য চাপ দিয়েছেন ৷ এই ব্যাপারে মদনের আইনজীবীর কী বক্তব্য ?
এর উত্তরে আইনজীবী জানান, অভিযুক্তদের কারও সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কোনও প্রয়োজনই নেই ৷ এ রাজ্য বহুদিন আগেই সিআরপিসি সংশোধন করেছে ৷ তাতে যেখানে ভার্চুয়াল প্রোডাকশনের বিষয়টি রয়েছে ৷ আদালতের কাজে বাধা দেওয়াই যদি তাঁদের (অভিযুক্তদের) উদ্দেশ্য হত, তাহলে তাঁরা শারীরিকভাবে উপস্থিত হয়েও সেই কাজটি করতে পারতেন ৷ ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শুনানি হলে বাধাদানের প্রশ্নই ওঠে না ৷
মদন মিত্রের আইনজীবীর যুক্তি, নারদ মামলায় ধৃত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শুনানিতে বাধাদানের কোনও অভিযোগ সিবিআই তাদের চার্জশিট অথবা রিমান্ড অ্যাপ্লিকেশনে জানায়নি ৷ বাধা দেওয়ার ব্যাপারটি পরে বানানো হয়েছে ৷ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ লোপাটেরও কোন অভিযোগ নেই ৷ একজন ব্যক্তি যিনি তদন্তে সাহায্য করছেন, তাঁকে কখনওই গ্রেফতার করা যায় না ৷ তাই অভিযুক্তদের সিবিআই হেফাজতে রাখারও কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই ৷
আরও পড়ুন :Narada Case: নারদ মামলা কি সরবে ভিন রাজ্যে ? হাইকের্টে ফের শুরু শুনানি
এরপর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল বলেন, ‘‘কোনও নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করা মানে তার অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ করা নয় ৷’’ পাশাপাশি অন্য বিচারপতিরা তাঁদের পর্যবেক্ষণে জানান, বিচারপতি যদি প্রভাবিত হয়ে থাকেন তাহলেও তিনি অতিরিক্ত পরিশ্রম করেন ৷ যাতে তাঁর নির্দেশনায় সেই প্রভাবের কোনও ছাপ না থাকে ৷
এরই প্রেক্ষিতে আইনজীবী লুথরা বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের সব বক্তব্যই বিশেষ বিচারক লিপিবদ্ধ করেছেন ৷ তিনি যদি সত্যিই ভীত, সন্ত্রস্ত হতেন, তাহলে তিনি কীভাবে এগুলো নিজের নির্দেশনায় লিখলেন ?’’ বৃহস্পতিবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি ৷