কলকাতা, 16 জুন : করোনা আবহে ম্লান জামাই ষষ্ঠীর আমেজ ৷ রাজ্যজুড়ে কার্যত লকডাউন পরিস্থিতি চলছে ৷ তাই উৎসবের দিনে কিছুটা হলেও মনমরা রসে, বশে থাকতে ভালবাসা আমবাঙালি ৷ তবে সেই খামতি অনেকটাই দূর করে দিল শোভন-বৈশাখী জুটি ৷ বেছে বেছে এমন একটা দিনেই কার্যত নতুন অবতারে প্রকাশ্যে (সোশ্য়াল মিডিয়ায়) এলেন তাঁরা ৷ ফেসবুকের প্রোফাইলে বৈশাখী বন্দ্য়োপাধ্য়ায় (Baisakhi Banerjee) হয়ে গেলেন ‘বৈশাখী শোভন ব্যানার্জি’ (Baisakhi Sovan Banerjee) ! আর বেলা বাড়তেই জানা গেল, বান্ধবী বৈশাখীকে নিজের যাবতীয় স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি দান করে দিয়েছেন শোভন চট্টোপাধ্য়ায় (Sovan Chatterjee) ৷ তারপরই আলোচনার নতুন রসদ ‘বৈশাখী শোভন ব্যানার্জি’ ৷ যার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারলেন না তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষও (Kunal Ghosh) ৷ শোভন-বৈশাখীকে কটাক্ষ করতে বেছে নিলেন সেই সোশ্য়াল প্ল্য়াটফর্মকেই ৷
বুধবার দুপুর 1 টা বেজা 42 মিনিটে নিজের টুইটার (twitter) হ্য়ান্ডেল থেকে একটি পোস্ট করেন কুণাল ৷ লেখেন, ‘‘গ্ল্যাক্সোবেবি কি নিজের পদবি ছেড়ে বন্দ্যোপাধ্যায় পদবি নিল নাকি? জামাইষষ্ঠীর দিন ডামি-জামাইয়ের এমন পদবিত্যাগ ও ফুলটুসিকে সম্পত্তিদান (?) সার্কাসের এক অপূর্ব ইভেন্ট।’’
ওই টুইটের কয়েক ঘণ্টা পর আরও একটি টুইট করেন কুণাল ৷ সেখানে তিনি লেখেন, "পাশে থাকার জন্য সম্পত্তিদান? বন্ধুত্বের বিনিময়মূল্য? ছি ছি। আমার জীবনের কঠিনতম দিনে যারা পাশে ছিল, তাদের তো কিছু দিলেও নেবে না। এর নাম বন্ধুত্ব, ভালবাসা। নিঃস্বার্থে আগলে রাখা। সমাজে আসল বন্ধুদের ছোট করার কোনও অধিকার এই দুই বিকৃত মস্তিষ্কের নেই ।"
কুণালের ‘‘গ্ল্য়াক্সোবেবি’’-র লক্ষ্য যে আদতে শোভন চট্টোপাধ্য়ায়, সেকথা আজ আর কারওরই অজানা নয় ৷ বস্তুত, শোভন-বৈশাখীর সঙ্গে কুণালের এই বাকযুদ্ধও নতুন নয় ৷ বেশ কিছুদিন আগেই কুণাল ঘোষকে ‘মুখ পোড়া হনুমান’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন নারদ কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত শোভন চট্টোপাধ্য়ায় ৷ এর পাল্টা তাঁকে ‘গ্ল্য়াক্সোবেবি’ নাম দেন কুণাল ৷
আরও পড়ুন :Sovan-Baishakhi : বৈশাখীর সাহসকে কুর্নিশ অনুরাগীর, বোল্ড ম্য়াডোনার সঙ্গে তুলনা বাঙালি বধূর
আসলে বৈশাখী বন্দ্য়োপাধ্য়ায় তাঁর জীবনে আসার পর থেকেই কার্যত বৈশাখীর হাতে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন শোভন ৷ তাঁর হয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেন বৈশাখীই ৷ তা সে যেকোনও বিষয়েই হোক না কেন ৷ বিবাহিত শোভনের বিবাহিতা বৈশাখীর প্রতি এমন আচরণ অধিকাংশ মানুষই ভালভাবে নেননি ৷ এমনকী, বৈশাখী পর্ব শুরু হওয়ার পর থেকেই তৃণমূলের সঙ্গেও দূরত্ব বেড়েছে শোভন চট্টোপাধ্য়ায়ের ৷ যা স্বাভাবিকভাবেই পছন্দ হয়নি রাজ্য়ের শাসক শিবিরের ৷ তাই শোভনকে পাল্টা আক্রমণ করতে ‘গ্ল্য়াক্সোবেবি’র মতো একটা উপমা বেছে নেন কুণাল ৷
সম্প্রতি নারদ কাণ্ডে শোভন-সহ চার হেভিওয়েটকে গ্রেফতার করে সিবিআই ৷ আর তারপরই জেলের বাইরে কেঁদে ভাসান বৈশাখী ৷ পরবর্তীতে শোভন যখন এসএসকেএমে চিকিৎসাধীন ছিলেন, সেখানেও রাতবিরেতে গিয়ে দাপিয়ে বেড়ান তাঁর বান্ধবী ৷ সেবারও এই ঘটনার প্রতিবাদ করেছিলেন কুণাল ৷ বৈশাখীর নাম দিয়েছিলেন ‘ফুলটুসি’ ৷ আর এদিন তাঁর আক্রমণ ছিল আরও ব্য়ক্তিগত এবং অনেক বেশি তীব্র ৷
শোভন-বৈশাখীর মধ্যে বন্ধুত্ব থাকলেও তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে রঙ্গ-তামাশার অন্ত নেই ৷ দু’জন বিবাহিত মানুষের বিবাহ বহির্ভূত এই মেলামেশা হজম করাটা অনেকের কাছেই বেশ কঠিন ৷ আর বাকিদের কাছে এটা নেহাৎই ঠাট্টার বিষয় ৷ কুণালও বিষয়টিকে ঠাট্টার মোড়কেই পেশ করতে চেয়েছেন ৷
স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমের সম্পর্কের ক্ষেত্রে পার্টনারের নাম নিজের নামের মধ্য়ে সংযুক্ত করাটা ইদানীংয়ের ট্রেন্ড ৷ বৈশাখীও সেই পথেই পা বাড়িয়েছেন ৷ যদিও তাঁর দাবি, শোভন সোশ্য়াল মিডিয়ায় অভ্যস্থ নন বলেই এটা করতে হয়েছে তাঁকে ৷ নেটনাগরিকরা যদিও এর মধ্যে সম্পর্কের গভীরতার গন্ধই পাচ্ছেন ৷ এই প্রেক্ষাপটে শোভনের বৈশাখীকে সম্পত্তি দানের খবর সেই জল্পনাকে আরও উসকে দিয়েছে ৷
আরও পড়ুন :স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বান্ধবী বৈশাখীকে লিখে দিলেন শোভন
তাছাড়া, এভাবে নিজের সবকিছু বন্ধুর কাছে বিলিয়ে দেওয়াটাও প্রায় বেনজির ৷ আজকালকার দিনে নিজের বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে বা স্বামী-স্ত্রীকেও সম্পত্তি দান করার আগে যে কেউ দশবার ভাবেন ৷ অথচ শোভন এমন একজনকে তাঁর সম্পত্তি দান করলেন, যিনি আইনত তাঁর কেউ নন ! এই ঘটনাকেই ‘‘সার্কাসের এক অপূর্ব ইভেন্ট’’ বলে উল্লেখ করেছেন কুণাল ৷ এমনকী শোভনকে ‘‘ডামি-জামাই’’ বলতেও কসুর করেননি ৷ অর্থাৎ, শোভন-বৈশাখীর সম্পর্ককে কার্যত ডামি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বলেই উল্লেখ করেছেন তিনি ৷ উল্টে দিয়েছেন বিয়ের পর মহিলাদের পদবি বদলের রীতিকেও ৷ প্রশ্ন তুলেছেন ‘চট্টোপাধ্য়ায়’ শোভনে ‘বন্দ্য়োপাধ্য়ায়’ হয়ে গিয়েছেন কি না, তা নিয়েও !