শিলিগুড়ি, 2 অক্টোবর : টানা জল-যন্ত্রণায় টনক নড়েছে কলকাতা পৌরনিগমের (Kolkata Municipal Corporation) ৷ বিশেষজ্ঞদের দাবি, অপরিকল্পিতভাবে একের পর এক বহুতল ও আবাসন তৈরিরই খেসারত দিতে হচ্ছে কলকাতাবাসীকে ৷ যথাযথ নিকাশির ব্যবস্থা না করেই নতুন নতুন বাড়ি উঠছে ৷ আর সেইসব বহুতলের প্ল্য়ান মঞ্জুর করছে পৌরনিগম ৷ এবার তাই বাইপাসের দু’ধারে বহুতল ও আবাসন তৈরির অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে আরও কঠোর নিয়ম আনছে কলকাতা পৌরনিগম ৷
আরও পড়ুন :Kolkata Municipal Corporation : শহরে 75 মাইক্রোনের নিচে প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা
নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড় ও ঘূর্ণাবর্তের জেরে সম্প্রতি নাগাড়ে বৃষ্টি হয়েছে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ৷ তার জেরে দিনের পর দিন জলমগ্ন থেকেছে গোটা শহর ৷ বিশেষ করে বাইপাসের দু’ধারে আনন্দপুর, মুকুন্দপুর, পূর্ব যাদবপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা চলে গিয়েছে জলের নীচে ৷ এমনকী, বৃষ্টি থেমে যাওয়ার চার-পাঁচদিন পরও এই এলাকাগুলি জলমগ্ন ছিল ৷ পৌরনিগম সূত্রে খবর, কলকাতার দক্ষিণ দিকের নিচু এলাকাগুলিতে নিকাশিব্যবস্থায় সমস্যা থাকাতেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয় ৷ এই এলাকাগুলিতে জল জমার সমস্যা চিরতরে দূর করতে ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছে কলকাতা পৌরনিগম ৷ একটা সময় দক্ষিণ-পূর্ব কলকাতার এই অংশের অধিকাংশই ছিল জলাভূমি ৷ কিন্তু, পরবর্তীকালে পর্যাপ্ত নিকাশির বন্দোবস্ত না করে বাইপাসের ধারে বড় বড় আবাসন তৈরি হয়েছে ৷ এর ফলে বৃষ্টির জল বেরোনোর উপায় না থাকায় জলমগ্ন হয়ে পড়ছে এলাকা ৷
কলকাতা পৌরনিগম সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেসব এলাকায় পর্যাপ্ত নিকাশিব্যবস্থা নেই, সেখানে বহুতল আবাসন তৈরি হলে নতুন করে জমা জল অপসারণের কাঠামো তৈরি করতে হবে ৷ সেই পরিকাঠামোর খরচের একাংশ বহন করতে হবে বহুতল আবাসন নির্মাতাদের ৷ কলকাতা পৌর নিগমের মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) জানিয়েছেন, এখন থেকে বাইপাসের ধারে যেখানে-সেখানে ইচ্ছামতো বহুতল বা বড় আবাসন তৈরি করা যাবে না ৷ বহুতল আবাসন তৈরি করার ক্ষেত্রে কলকাতা পৌরনিগম নীতি বদল করছে ৷ এবার থেকে আগে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করবেন পৌরনিগমের বিশেষজ্ঞরা ৷ তাঁদের পেশ করা রিপোর্টের উপর নির্ভর করেই বিল্ডিং প্ল্যান তৈরি করতে হবে ৷ তবেই আবাসন তৈরির অনুমোদন মিলবে ৷ ফিরহাদ জানান, প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় কতটা জলা জমি রয়েছে, সেই জলা জমির জলধারণ ক্ষমতা কতটা, আশপাশের নিকাশিব্যবস্থা কেমন ইত্যাদি সবকিছুই খতিয়ে দেখবেন পৌরনিগমের বিশেষজ্ঞরা ৷ পাশাপাশি, প্রস্তাবিত আবাসনের বাসিন্দারা দৈনিক কত জল ব্যবহার করবেন, সেই জল কীভাবে, কোথায় ফেলা হবে, বহুতলের প্ল্য়ানের অনুমোদন দেওয়ার আগে সেসবও খতিয়ে দেখা হবে ৷
আরও পড়ুন :Kolkata Municipal Corporation : খাল পরিষ্কার না হলে জল-যন্ত্রণা থেকে রেহাই নেই, সাফ কথা ফিরহাদের
এলাকার বিধায়ক দেবব্রত মজুমদার জানিয়েছেন, নামী দামি বহুতল ও আবাসন নির্মাণকারী সংস্থাগুলি 50 থেকে 100 একর জমিতে বড় বড় বহুতল আবাসন তৈরি করে ফ্ল্যাট বিক্রি করেছে ৷ কিন্তু অধিকাংশ জমিরই নিকাশিব্যবস্থা নেই ৷ যেমন, 108 ও 109 নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এমন অনেক বহুতল আবাসন তৈরি হয়েছে ৷ যার ফলে স্বাভাবিক জলপথগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ এর জেরে ভারী বৃষ্টি হলে এলাকায় জল দাঁড়িয়ে যাচ্ছে ৷ এই সমস্যা দূর করতে এবার থেকে এই এলাকায় বড় আবাসন তৈরি করার আগে কলকাতা পৌরনিগমের বিশেষজ্ঞ কমিটির পরিদর্শন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে ৷ তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই বহুতল আবাসনের নকশা অনুমোদন করা হবে ৷