হাওড়া, 2 অক্টোবর : "দল পরিচালনার অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা বদল ও আন্তরিকতা না এলে বিজেপি কোনওদিন তৃণমূলকে হারিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে পারবে না ।" ফের বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন বিজেপি নেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায় (Joy Banerjee) । এবার মন্তব্য দলের আভ্যন্তরীণ পরিকাঠামো এবং পরিচালনা সংক্রান্ত ৷
সদ্য সমাপ্ত বিধানসভার নির্বাচনের পর থেকেই ক্রমশ প্রকাশ্যে আসছে রাজ্য বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব । নির্বাচনের দিনেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) জয়ী হবেন বলে দাবি করেছিলেন বিজেপি নেতা জয় বন্দোপাধ্যায় । সেদিন তাঁর মন্ত্যবের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) । কিন্তু সেই দ্বন্দ্ব না থেমে ক্রমশই এগিয়ে চলেছে বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা । ফের একটি ভিডিয়ো বার্তায় জয় দিলীপ ঘোষের মন্তব্যের বিরোধিতা করেন ৷
ভিডিয়ো বার্তায় জয় জানান, তিনি দিলীপ ঘোষকে সম্মান করেন । তাঁর নেতৃত্বে কাজ করেছেন । তবে তিনি ঘরে বসে আছেন বলে দিলীপ যে মন্তব্য করেছেন তাতে তিনি ব্যথিত হয়েছেন ৷ আত্মপক্ষ সমর্থনে জয় জানান, তাঁর কোভিড হয়েছিল ৷ তিনি মরণাপন্ন অবস্থায় ছিলেন দীর্ঘদিন । সেখান থেকে তিনি বেঁচে ফিরেছেন । তিনি সোশ্যাল মিডিয়াতেও সেভাবে সক্রিয় নন ।
দিলীপের মন্তব্যের পালটা জয়ের দাবি, দিলীপ ঘোষের পরে বিজেপির জন্য যদি কেউ গোটা রাজ্য চষে বেড়ান তিনি হলেন জয় বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি 2014 সাল থেকে অসুস্থ হওয়ার আগে অবধি গোটা রাজ্য চষে বেরিয়েছেন ৷ নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ও দক্ষিণ 24 পরগনার যেসব জায়গায় কেউ ভয়ে ঢুকতেও পেতেন, সেখানেও তিনি বিজেপির পতাকা লাগিয়ে এসেছেন । তাই তাঁর 'ঘরে বসে সোশ্যাল মিডিয়ায় বক্তব্য রাখা'-এর মন্তব্য জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে খাটে না ।
ফের ভিডিয়ো বার্তায় বিজেপিকে আক্রমণ করলেন জয় জয়ের বক্তব্য, কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে তিনি কথা বলেননি । বরং এরাজ্যে দল যে পদ্ধতিতে চলছে, তার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এবং তা তিনি বারবার বলবেন । বাংলায় বিজেপিকে আগে বাঙালি হতে হবে । বাঙালির আবেগ, ভালবাসা, খাদ্যাভ্যাস রপ্ত করতে হবে । না হলে পরাক্রমী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানো সম্ভব নয় ৷
তাঁর প্রশ্ন, কেন ভবানীপুরে দল বাঙালি প্রার্থী ও অবজার্ভর দিতে পারল না ? তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে বিজেপি সম্বন্ধে অনেক ভ্রান্ত ধারণা জন্মেছে । সাধারণ মানুষ মনে করেন, বিজেপি জিতলে হিন্দি ভাষা বলতে হবে, নিরামিষাশী হয়ে যেতে হবে । এই সব ভ্রান্ত ধারণাগুলো কাটাতে পারলে তবেই মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করা যাবে । বর্তমান কর্মপদ্ধতি পরিবর্তন না করলে আগামী পঞ্চায়েত বা পৌরসভা ভোটের কোনও নির্বাচনেই বিজেপি দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না । পাশাপাশি বিজেপিকে তাঁর কর্মীদের প্রতি আন্তরিক হতে হবে ।
জয়ের অভিযোগ, তিনি হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন কোনও বিজেপি নেতা তাঁর খোঁজ নেননি ৷ এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হলে ওই হাসপাতালের সামনে মেডিক্যাল ক্যাম্প করে দলের কর্মীদের বসিয়ে দিতেন । এটাই তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে পার্থক্য ৷ বিজেপিকে এই পার্থক্য দূর করতে হবে, নাহলে বাংলাতে কোনওদিন বিজেপি তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই করে জিততে পারবে না ।
বারবার এভাবে দলের অভ্যন্তরের নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব যেভাবে প্রকাশ্যে চলে আসছে, তাতে আগামী দিনে ভারতীয় জনতা পার্টি কতটা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবে তাই নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ।
আরও পড়ুন : Bhabanipur By-Poll : ভবানীপুরে জিতবেন মমতা, ভুলের মাশুল দেবে বিজেপি; বিস্ফোরক জয় বন্দ্যোপাধ্যায়