কলকাতা, 24 নভেম্বর: সায়েন্স ফ্যাকাল্টি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের (SFSU) বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে পদত্যাগপত্র জমা দিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ডিন অফ সায়েন্স সুবীর মুখোপাধ্যায়। গতকাল উপাচার্য সুরঞ্জন দাশের কাছে জমা করা পদত্যাগপত্রে কোন কোন কারণে তিনি পদত্যাগ করছেন তা বিস্তারিতভাবে জানান সুবীরবাবু। পদত্য়াগ পত্রে তিনি অভিযোগ করেছেন, সায়েন্স ফ্যাকাল্টির ছাত্র ইউনিয়নের কয়েকজন পড়ুয়ার দুর্ব্যবহার ও সেই ব্যবহারে অপমানিত হওয়ার কথা। গত 7 অক্টোবর ছয়মাসের জন্য ভারপ্রাপ্ত ডিন অফ সায়েন্স পদে যোগ দিয়েছিলেন সুবীর মুখোপাধ্যায়। দু’মাস সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই পদত্যাগপত্র জমা দিলেন তিনি।
এক অংশের পড়ুয়াদের দুর্ব্যবহারে ডিন অফ সায়েন্সের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয় যাদবপুরে। এর আগেও একইভাবে ছাত্র ইউনিয়নের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেছিলেন আগের ভারপ্রাপ্ত ডিন অফ সায়েন্স কল্যাণকুমার দাস। বহু অনুরোধের পরেও সেই পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার না করায়, ৭ অক্টোবর সেই দায়িত্ব দেওয়া হয় সুবীর মুখোপাধ্যায়কে। এবার তিনিও একই অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করলেন। পদত্যাগপত্রে সুবীরবাবু জানিয়েছেন, 4 নভেম্বর সায়েন্স ফ্যাকাল্টির অ্যাডমিশন কমিটির বৈঠকে ডেপুটেশন দিতে এসে সায়েন্স ফ্যাকাল্টি স্টুডেন্স ইউনিয়নের অফিস-বেয়ারারদের ব্যবহারে তিনি এবং বৈঠকে উপস্থিত অন্যান্য সদস্যরা অপমানিত ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। 6 নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্যের ফোন ব্যবহার করে SFSU-র চেয়ারপারসন তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং সেই কথোপকথনেও অপমানের শিকার হন তিনি।
ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের দৌরাত্ম্য, ইস্তফা যাদবপুরের ডিন অফ সায়েন্সের - SFSU
এক অংশের পড়ুয়াদের দুর্ব্যবহারে ডিন অফ সায়েন্সের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয় যাদবপুরে। এর আগেও একইভাবে ছাত্র ইউনিয়নের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেছিলেন আগের ভারপ্রাপ্ত ডিন অফ সায়েন্স কল্যাণকুমার দাস। বহু অনুরোধের পরেও সেই পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার না করায়, ৭ অক্টোবর সেই দায়িত্ব দেওয়া হয় সুবীর মুখোপাধ্যায়কে।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ছাত্র ইউনিয়নের সদস্যরা তাঁর কাছে এসে অভিযোগ করছিলেন ডিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। সেইসময় তিনি ডিন অফ সায়েন্সকে ফোন করে ছাত্রদের কথা বলার জন্য ফোনটি দিয়ে সেইসময় চলা একটি বৈঠকে মনোযোগ করেন। ইউনিয়নের সদস্যরা একটু দূরে গিয়েই ডিনের সঙ্গে কথা বলেন বলে দাবি চিরঞ্জীববাবুর। তবে সেখানে কী কথা হয়েছে? তা তাঁর জানা নেই ৷ এবং সেখানে যদি ইউনিয়নের সদস্য়রা দুর্বব্য়হার করে থাকেন, তবে তা দুর্ভাগ্য়জনক ৷
এখানেই শেষ নয়। 11 নভেম্বর অ্যাডমিশন কমিটির বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত বাদ দেওয়ার দাবিও জানায় SFSU। সেই বৈঠকে মূলত M.Sc কোর্সে ছাত্র ভরতি নিয়ে ও B.Sc কোর্সে ভরতি ছাত্রদের নথি যাচাই কীভাবে করা হবে তা নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ডিন অফ সায়েন্সকে SFSU-র চেয়ারপারসন ও জেনারেল সেক্রেটারি সাক্ষরিত ডেপুটেশনে লেখা ছিল, 'হেনসফোর্থ, উই ডিমান্ড টু স্ক্র্যাপ দ্য মিনিটস অফ দ্য সেইড মিটিং'। এই ঘটনাগুলির উল্লেখ করে সুবীর মুখোপাধ্যায় পদত্যাগ করেন ভারপ্রাপ্ত ডিন অফ সায়েন্সের পদ থেকে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রাক্তনী এবং 30 বছর ধরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত সুবীর মুখোপাধ্যায়। এক অংশের পড়ুয়াদের আচরণ নিয়ে তিনি বলেন, "স্টুডেন্ট ইউনিয়নের এক অংশের ব্যবহারে, যা তাঁদের করা উচিত নয়, সেইজন্য আমি পদত্যাগ করেছি। আমি অত্যন্ত অপমানিত বোধ করছি। আমরা আশা করি, ন্যূনতম সন্মান আমাদের দেওয়া হবে। তবে, এই নির্দিষ্ট ছাত্রদের সমাজের প্রতি কোনও দায়বদ্ধতা রয়েছে বলে আমার মনে হয় না। আমি পদের মোহ করি না। কিন্তু, আমি তো শিক্ষক। একজন শিক্ষকের সঙ্গে ছাত্ররা এই ধরনের ব্যবহার করে কী করে? এটা পড়ুয়াদের ব্যবহার হওয়া উচিত নয়। আমি অত্যন্ত অপমানিত বোধ করেছি।" ওই পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে তাঁর বার্তা, "শুভবুদ্ধির উদয় হোক।"
গোটা ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, "সায়েন্সে এই সমস্যাটা হচ্ছে। কেন হচ্ছে আমি জানি না। ঘটনাটা অত্যন্তই দুর্ভাগ্যজনক এবং ভীষণই অনভিপ্রেত।" একইসঙ্গে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করার আবেদন জানান সহ-উপাচার্য। তিনি বলেন, "আমরা বর্তমান ডিন সুবীর মুখোপাধ্যায়কে অনুরোধ করব যাতে উনি ওনার ইস্তফাপত্র প্রত্যাহার করেন। যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলো যাতে সবাই মিলে আলোচনার মাধ্যমে আমরা সমাধান করতে পারি। কারণ, আমাদের ছাত্র ও শিক্ষক, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সবাইকে নিয়েই চলতে হবে। এটাই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি।"
বারবার এক অংশের ছাত্রদের দুর্ব্যবহারে একের পর এক ডিনের পদত্যাগ করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানায় যাদবপুরে শিক্ষক ও গবেষক মহলও। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সংগঠন JUTA-র সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, "শিক্ষকদের সঙ্গে বারে বারে এই ধরনের খারাপ ব্যবহার করার আমরা তীব্র সমালোচনা করছি। এভাবে ডিন পদ খালি হয়ে যাওয়ায় গবেষকদের, ছাত্রদের এবং শিক্ষকদের প্রচুর কাজ আটকে যাচ্ছে। আর এই রকম চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কোনও শিক্ষক আর অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে চাইবেন না।" যাদবপুর বিশ্ববিদ্য়ালয়ের রিসার্চ স্কলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (JURSA) তরফেও এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।