কলকাতা, 7 জুলাই : গেরুয়া বসন ছেড়ে তৃণমূলে ফিরেছেন মুকুল রায় (Mukul Roy) ৷ ফিরছে তাঁর কর্তৃত্ব ৷ আর তারপর থেকেই শুধু একটা প্রশ্নই পাক খাচ্ছে বাংলার ক্ষমতার অলিন্দে ৷ প্রশ্নটা হল, আর কতজন এবং কবে ? অর্থাৎ, মুকুলের পিছু পিছু আর কতজন নাম লেখাবেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের (Mamata Banerjee) দলে ? কে, কবে করবেন সেই ভোলবদল (রাজনৈতিক রংবদল) ?
67 বছরের মুকুল রায় হাই ব্লাড সুগারের রোগী ৷ রোজ নিয়ম করে ইনসুলিন নিতে হয় তাঁকে ৷ এমন একজন মানুষের তৃণমূলে ঘর ওয়াপসি কি সত্যিই বিরাট ক্ষতি করে দেবে গেরুয়া ব্রিগেডের ? মানতে নারাজ বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) ৷ তাঁর সাফ কথা, দলে থাকাকালীন মুকুলের তেমন কোনও অবদান ছিল না ৷ তাই তিনি দল ছেড়ে যাওয়াতেও বিজেপির বিশেষ কোনও ক্ষতি হয়নি ৷
আরও পড়ুন :নিলর্জ্জের মতো মুকুল বিজেপির বেঞ্চে বসেছিলেন, তোপ দিলীপের
ইদানীংকালে রাজনীতিতে রংবদল বিচিত্র কিছু নয় ৷ এমন ঘটনা আখছারই ঘটে ৷ কিন্তু একুশের ভোটপর্বের ঠিক আগে যেভাবে পাইকারি হারে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বিজেপি যোগ দিয়েছেন এবং বিজেপিও তাঁদের যেভাবে দু’হাত বাড়িতে স্বাগত জানিয়েছে, তা কিছুটা উদ্ভটই বটে ৷ এমনকি, বাংলার রাজনীতিতে এমন ঘটনাক্রম খানিক আনকোরাও ৷
ঝাড়াই-বাছাই না করেই এভাবে অন্যের সংসার ভাঙিয়ে নিজের ঘর ভরানোর কারণ কী ? এর পিছনে বিজেপির তরফে দু’টি যুক্তি থাকতে পারে ৷ প্রথমত, একুশের ভোটের আগে যতটা বেশি করে সম্ভব তৃণমূলের সংগঠন ভেঙে দেওয়ার পণ করেছিল বিজেপি ৷ দ্বিতীয়ত, দলে যোগ্য প্রার্থী না থাকায় তৃণমূলের দক্ষ নেতাদের পদ্ম প্রতীকে দাঁড় করানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল ৷
এবার আবার মুকুল রায়ের প্রসঙ্গে ফেরা যাক ৷ দিলীপ ঘোষ যাই বলুন না কেন, মুকুলের বিজেপিতে যোগদান কিংবা তৃণমূলে ফেরাকে আর পাঁচজন দল বদলু নেতার সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে চলবে না ৷ মুকুল যখন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি যোগদান করেছিলেন, তখনও পর্যন্ত রাজ্যে বিজেপি হাওয়া এত প্রবল ছিল না ৷ সেটা ছিল 2017 সাল ৷ লোকসভা নির্বাচন তখনও দু’বছর বাকি ৷ আর বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে সবে মাত্র একবছর ৷ এই অবস্থায় মুকুল বিজেপিতে গিয়েছিলেন, কারণ বিজেপিরও তাঁকে দরকার ছিল ৷ মুকুল ছিলেন তৃণমূলের চাণক্য ৷ বঙ্গ বিজেপির হাতে তেমন কোনও নেতা তখন ছিলেন না ৷ মুকুল সেই শূন্যস্থান পূরণ করেছিলেন ৷
এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় হল, মুকুলের যোগদানের পরই উনিশের লোকসভা নির্বাচনে অভাবনীয় সাফল্য পায় বিজেপি ৷ এতদিন যাদের বঙ্গ রাজনীতিতে খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর ছিল, তারাই 18 টি আসনে জয়লাভ করে ৷ বস্তুত, মুকুল এবং তাঁর রণকৌশল ছাড়া বিজেপির পক্ষে উত্তরবঙ্গ এবং মতুয়া অধ্যুষিত উত্তর 24 পরগনা কিংবা নদিয়ায় বিজেপির পক্ষে মাথা তুলে দাঁড়ানোই সম্ভব হত না ৷
আরও পড়ুন :কৃষ্ণনগরে পা দিয়েই বিজেপির ঘর ভাঙালেন মুকুল
অন্যদিকে, তৃণমূল ছেড়ে মুকুল কিন্তু খুব একটা শান্তিতে ছিলেন না ৷ নতুন শিবিরে মানিয়ে নিতে সমস্য়া হচ্ছিল তাঁর ৷ বিজেপিতে গিয়ে বড় কোনও পদ বা মন্ত্রিত্বও পাননি তিনি ৷ এর কারণ, তাঁর পাস্ট রেকর্ড ৷ সারদা ও নারদ কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত মুকুল রায় ৷ সেই কারণেই দেশের শাসকদলে নাম লিখিয়েও বিশেষ কিছু লাভ হয়নি তাঁর ৷ 2017 সালে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর 2020-র সেপ্টেম্বরে এসে অবশেষে তাঁকে জাতীয় সহ-সভাপতির পদ দেওয়া হয় ৷ যা নিয়ে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিজেপি নেতা তথা রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি রাহুল সিনহা ৷ তাতে অস্বস্তি বাড়ে গেরুয়া শিবিরের ৷ এরপর একুশের ভোটের ঠিক আগেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) ৷ বরাবর যিনি মুকুল রায়ের বিরোধী পক্ষ হিসাবেই সুবিদিত ৷