পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / city

তৃণমূলের বহিরাগত তত্ত্বের জবাব দিতে গিয়ে কি হোঁচট খাচ্ছে বিজেপি ?

তৃণমূলের বহিরাগত তত্ত্বকে পালটা জবাব দিতে বাংলার বাইরে থেকে আসা চা-বাগানের শ্রমিক ও চটকল শ্রমিকদের কথা তুলে ধরলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ৷ একই সঙ্গে নেওটিয়ার মতো বেশ কয়েকজন শিল্পপতির বাংলায় অবদানের কথাও তুলে ধরেন তিনি ৷

dilip ghosh
দিলীপ ঘোষ

By

Published : Dec 2, 2020, 10:16 PM IST

কলকাতা, 2 ডিসেম্বর : বাংলা জয়ের স্বপ্নকে সফল করতে ইতিমধ্যে অমিত শাহের নির্দেশে রাজ্যে এসেছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ পাঁচ সেনাপতি ৷ তাঁদের "বহিরাগত" বলে সমালোচনা করেছেন তৃণমূল নেত্রী থেকে শুরু করে তৃণমূলের বাকি বড়-ছোটো সব নেতা-নেত্রীরা ৷ এর জবারও দিচ্ছে বিজেপি । তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছে, তৃণমূলের আক্রমণের জুতসই জবাব দিতে গিয়ে কোথাও যেন হোঁচট খেতে হচ্ছে বিজেপিকে ৷ আজ কলকাতায় রাজ্য দপ্তরে সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ তৃণমূলের বহিরাগত তত্ত্বের পালটা জবাব দিতে গিয়ে চা বাগান ও চটকলে বাংলার বাইরে থেকে আসা শ্রমিকদের উদাহরণ তুলে ধরেন ৷ এছাড়া তিনি বাংলায় বহিরাগতদের অবদান প্রসঙ্গে নেওটিয়ার মতো শিল্পপতিদেরও উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরেন ৷ এর আগে বিজেপি নেতারা প্রশান্ত কিশোরের উদাহরণও তুলে বলতে চেয়েছেন । প্রশ্ন তুলেছেন, পিকের মতো বহিরাগতকে তৃণমূল তাহলে কেন এনেছে ? কিছুদিন আগে দিলীপ ঘোষ কেডি সিং ও আহমেদ হাসানের উদাহরণও তুলে ধরেছেন ৷ কিন্তু তৃণমূলের বহিরাগত-র পালট বিজেপি নেতাদের এই উত্তর যেন কোথাও গিয়ে ধাক্কা-ই খাচ্ছে বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য ৷

আমফান নিয়ে গ্রামবাংলায় অসন্তোষের আগুন এখনও নেভেনি ৷ এরই মধ্যে শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে তৃণমূল অন্দরের অস্বস্তিও সামনে এসে পড়েছে ৷ এই অবস্থা থেকে কিছুটা নিস্তার পেতে সাহায্য করতে পারে রাজ্য সরকারের ঘোষিত "দুয়ারে সরকার " কর্মসূচি ৷ এই কর্মসূচিকে সামনে রেখে নতুন করে জন সংযোগের ঘুঁটি সাজাচ্ছে তৃণমূল ৷ রাজ্যের প্রত্যেককে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেওয়া হবে বলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন ৷ আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প রাজ্যে চালু করতে না দেওয়া নিয়ে বিজেপির অভিযোগকে এভাবেই সামাল দিতে চেয়েছে তৃণমূল ৷ সরকার ঘোষিত "দুয়ারে সরকার " কর্মসূচি সফলভাবে রূপায়ণ হলে তা সামনে বিধানসভা ভোটে তৃণমূলকে বাড়তি অক্সিজেন জোগাবে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা ৷ এজন্য তৃণমূলকে টেক্কা দিতে প্রায় ন'মাস আগের এক কর্মসূচিকেই নতুন মোড়কে আনতে চলেছে বিজেপি ৷ কোরোনা পূর্ব রাজ্যে অমিত শাহ শহিদ মিনারের সভা থেকে ঘোষণা করেন, "আর নয় অন্যায়" কর্মসূচি ৷ এই কর্মসূচিকেই এবার ভিন্ন আঙ্গিকে সামনে আনতে চলেছে বিজেপি ৷

আমফান দুর্নীতির অভিযোগকে চাপা দিতেই তৃণমূল "দুয়ারে সরকার" কর্মসূচি নিয়েছে ৷ আজ রাজ্য দপ্তরে সাংবাদিক বৈঠকে এই অভিযোগ করেন দিলীপ ঘোষ ৷ শুধু তাই নয়, তৃণমূলের এই কর্মসূচির পালটা "আর নয় অন্যায়" কর্মসূচিও নিল বিজেপি ৷ গতকালই কলকাতা হাইকোর্ট আমফান ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগের মামলায় ক্যাগ তদন্তের নির্দেশ দেয় ৷ বিচারপতি টি বি এন রাধাকৃষ্ণণ ও অরিজিৎ বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের ডিভিশন বেঞ্চ ক্যাগ-কে তিন মাসের মধ্য়ে এই রির্পোট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় ৷ কলকাতা হাইকোর্টের এই রায় বিজেপি-কে আমফান নিয়ে আন্দোলনে নামার ক্ষেত্রে বাড়তি অক্সিজেন যোগাবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল ৷

আজ থেকে প্রায় ন'মাস আগের ঘটনা ৷ চলতি বছরের মার্চ মাসে শহিদ মিনারের সভা থেকে “আর নয় অন্যায়”-র প্রচার অভিযানের কর্মসূচি শুরু করেন অমিত শাহ৷ তিনি এই অভিযানকে সফল করতে একটি নম্বরে (9727294294) নম্বরে মিসড কল দেওয়ার আবেদনও জানান ৷ তারপর বিজেপি-র আইটি সেলের মতে মাত্র পাঁচদিনে পাঁচ লাখ লোক এই নম্বরে মিসড কল দেয় ৷ এরপরে কোরোনা আবহে এই কর্মসূচি থমকে যায় ৷ রাজ্য বিজেপি আবার সেই কর্মসূচিকেই এবার একটু ভিন্ন আঙ্গিকে নিয়ে আসছে ৷ রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, "তৃণমূলের দুর্নীতি নিয়ে লিফলেট প্রকাশ করবে রাজ্য বিজেপি ৷" 1 কোটি বাড়িতে লিফলেট বিলি করা হবে৷ ডিসেম্বরের 5 থেকে 13 তারিখ পর্যন্ত আপাতত এই লিফলেট বিলি করা হবে বলেও জানান দিলীপ ৷

বাংলা জয়ের স্বপ্নকে সফল করতে ইতিমধ্যে অমিত শাহের নির্দেশে রাজ্যে এসেছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ পাঁচ সেনাপতি ৷ তাঁদের নিয়ে তৃণমূলের বহিরাগত তত্ত্বকে আমল না দিয়ে পালটা জবাবের পথে নেমেছে বিজেপিও ৷ রাজ্যে চা বাগানের শ্রমিক ও চটকলের শ্রমিকদের অধিকাংশই রাজ্যের বাইরে থেকে আসা ৷ রাজনৈতিক মহল বলছে, এই উদাহরণ দিয়ে বিজেপি সভাপতি বোঝাতে চাইলেন বাংলার উন্নয়নে বাংলার বাইরে থেকে আসা মানুষদেরও অবদান কম নয় ৷ একই সঙ্গে নেওটিয়ার মতো শিল্পপতিদেরও কথাও দিলীপের বক্তব্যে এসেছে ৷ এসব উদাহরণ তৃণমূলের প্রত্যুত্তর হিসাবে কতটা জুতসই হল তা পরে বিজেপির বুদ্ধিজীবীরা নিশ্চয় বিচার করবেন ৷ তবে ইতিহাসের সত্য, বাংলার মাটি অনেক বহিরাগতের আত্মবলিদানে কম সমৃদ্ধ হয়নি ৷ মাদার টেরিজা, ভগিনী নিবেদিতা , ডিরোজিও, অ্যানি বেশান্তের মতো আরও অনেকের নাম উল্লেখ করা যায়-ই ৷ বাংলার মাটিতে পদ্মফুল ফোটাতে চেয়ে শাহ-মোদি না-কি অল্পবিস্তর বাংলা শিখছেন ৷ রাজ্যে এসে বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, রামমোহন, বিবেকানন্দ, বঙ্কিমের কথা অবাঙালি উচ্চারণে একটু আধটু বলার চেষ্টাও করেন এই দুই নেতা ৷ সেখানে তৃণমূলের বহিরাগত তত্ত্বকে পালটা উত্তর দিতে রাজ্য নেতারা আরও একটু বাঙলার ইতিহাস চর্চা করলে ভালো নয় কি ?

ABOUT THE AUTHOR

...view details