কলকাতা, 28 ডিসেম্বর : গত দুই বছর গঙ্গাসাগর মেলা (Gangasagar Mela) করোনার কারণে নমো নমো করে সম্পন্ন হলেও এবছর পুরোদমে মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য সরকার । যদিও রাজ্য সরকারের তরফ থেকে সমস্ত ধরনের সর্তকতা অবলম্বন করেই মেলার আয়োজন করা হচ্ছে বলে জানানো হচ্ছে ৷ তবে চিকিৎসক মহল মনে করছে এই অবস্থায় মেলার আয়োজন না করলেই ভাল হত ।
যদিও শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস প্রকাশ্যে না বললেও ঘরোয়া আলোচনায় বলছে, পশ্চিমবঙ্গে সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে এই অবস্থায় মেলার আয়োজন না করলে, বিজেপি ফের ধর্মীয় ভাবাবেগ নিয়ে রাজ্যের শাসক দলকেই কাঠগড়ায় তুলত ৷ আর রাজ্যের শাসক দল কোনও ভাবেই বিরোধীদের হাতে সমালোচনার অস্ত্র তুলে দিতে চায় না ৷
ফলে এবার গঙ্গাসাগর মেলা হচ্ছেই ৷ সতর্কতা বজায় রেখেই মেলা আয়োজন করা হচ্ছে বলে রাজ্য সরকারের দাবি । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Chief Minister Mamata Banerjee) আজ নিজে আয়োজনের খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখতে গঙ্গাসাগরে গিয়েছেন । থাকবেন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত । এই অবস্থায় গঙ্গাসাগরে এই বছর বিশাল জমায়েতের সম্ভবনা দেখছে ওয়াকিবহাল মহল ।
কিন্তু এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে চিকিৎসক মহল । বিশেষ করে ওমিক্রন আবহে এভাবে লক্ষ লক্ষ মানুষের জমায়েত বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা । তাঁরা সংক্রমণ বৃদ্ধির ভয় পাচ্ছেন (Gangasagar mela May become super spreader of Omicron)।
চিকিৎসক কৌশিক লাহিড়ী বলছেন, ‘‘দেশ যাঁরা চালান, তাঁদের নিজস্ব বাধ্যবাধকতা আছে । চিকিৎসকদের পরামর্শ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁরা অগ্রাহ্য করেন । সবচেয়ে বড় কথা প্রথম এবং দ্বিতীয় ওয়েভের থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী ঝড় আসা আটকানোর চেষ্টা করার পরিবর্তে সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য রাস্তা খুলে দেওয়া হচ্ছে ।’’
তবে তিনি মনে করেন, ‘‘আর এতে দোষ একমাত্র যে সরকারের এমন নয় । সাধারণ মানুষও নিয়ম মানতে রাজি নয় । আর এর ফল ভুগতে হচ্ছে আমাদের । যদি আমরা লক্ষ্য করি করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় আমরা সাধারণ মানুষ, ডাক্তার, পুলিশ, প্রশাসন সকলে হাতে হাত মিলিয়ে সংক্রমণকে রুখে দিয়েছিলাম ৷’’
তাঁর দাবি, ‘‘কিন্তু নির্বাচন আর বিশাল বিশাল ব়্যালি আমাদের সেই লড়াইকে দুর্বল করে দিয়েছিল । দ্বিতীয় ঢেউয়ের তার ফল আমাদের ভুগতে হয়েছে ।’’ তাই তাঁর প্রশ্ন, ‘‘সত্যিই কি এর থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি ? তাহলে এভাবে এত বিশাল জমায়েতের অনুমতি কেন দেওয়া হচ্ছে ? আইসিএমআর বলছে আবার নতুন করে বিধি-নিষেধ চাপানোর প্রয়োজন রয়েছে, সেখানে এমন উদ্যোগ কেন ?’’
একই মত চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাসের । তাঁর মতে, চিকিৎসকরা যখন বলছেন যে জনসমাবেশ বা জমায়েত যেখানে হবে, সেখানে কিন্তু কোভিড সংক্রমণ বাড়বে । কারণ উপসর্গবিহীন মানুষ আছেন ৷ তারপর ওমিক্রন থাবা বসিয়েছে বিভিন্ন রাজ্যে । এই তালিকার বাইরে বাংলাও নেই । সে ক্ষেত্রে যে কোনও সময় জনসমাবেশ করলে একটা সংক্রমণের বৃদ্ধি যে ঘটতেই পারে, সেটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই । বিভিন্ন রাজ্য রাত্রিকালীন কার্ফু করছে । দিল্লিতে আরও কড়া হয়েছে প্রশাসন । এক্ষেত্রে গঙ্গাসাগর মেলা হতে পারে একটা বড় উৎসব । এখানে একটা আধ্যাত্মিক বিষয় আছে । তবুও দেশের মানুষের কথা ভেবে, তাদের হিতে যদি চিন্তা করতে হয় তাহলে এই মেলা না করলেই ভাল হত ।’’
একই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষক তথা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন রেজিস্ট্রার রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তীর । তিনি বলেন, ‘‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে বারবার সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য আমরাই দায়ী । সরকার ও পুলিশ প্রশাসনও তার দায় এড়িয়ে যেতে পারে না ।’’
একই সঙ্গে তিনি বলছেন, ‘‘সত্যি কথা বলতে কী, সংক্রমণ বৃদ্ধির বিষয়টা যেমন আছে তেমন গঙ্গাসাগর মেলাকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ 24 পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকার সাধারণ মানুষের সারা বছরের আয়ের সংস্থানের বিষয় রয়েছে । মেলা না হলে সেই সমস্ত মানুষগুলি অনাহারে মারা যাবে । তাই সরকারেও কোথাও যেন হাত-পা বাঁধা । ওমিক্রন আবহে এমন পদক্ষেপ করতে বাধ্য হচ্ছে সরকার ।’’
আরও পড়ুন :Mamata at Gangasagar : মমতাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান কপিলমুনি আশ্রমের মোহন্ত
তবে তিনি বলছেন, ‘‘সরকারের তরফ থেকে মাস্ক বিতরণ, মেলা প্রাঙ্গণে আরটিপিসিআর টেস্টের ব্যবস্থা বা 600 বেডের করোনা হাসপাতাল - এসবের মাধ্যমে আর যাই হোক সংক্রমণের বৃদ্ধি রোখা যাবে না । কাজেই ফল যাই হোক শো মাস্ট গো অন ।’’