পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / city

হাসপাতালে চরম অব্যবস্থা, মুখ্যসচিবকে চিঠি কেন্দ্রীয় দলের - Apurva Chandra

গতকাল পরিদর্শনের পর আজ রাজ্যের কোরোনা হাসপাতালগুলির পরিকাঠামো নিয়ে রাজ্য সরকারের মুখ্যসচিবকে চিঠি দিল কেন্দ্রীয় দল ৷

ICMR
কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল

By

Published : Apr 24, 2020, 3:21 PM IST

Updated : Apr 24, 2020, 9:15 PM IST

কলকাতা, 24 এপ্রিল : রাজ্যের কোরোনা পরিস্থিতি ও হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাজ্য সরকারকে চিঠি দিল কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল ৷ মৃতদের ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়ার ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে চিঠিতে ৷ সেখানে বলা হয়েছে, ওয়ার্ডে কেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা মৃতদেহ পড়ে থাকছে ?

কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল তাদের দ্বিতীয় চিঠিতে লেখে, "মুখ্য স্বাস্থ্যসচিব 23 এপ্রিল একটি চিকিৎসকদের বিশেষ কমিটি গঠনের কারণ দেখান এবং বলেন যে, কোনও কোরোনা রোগী যদি পথ দুর্ঘটনায় মারা যায়, তাহলে তা কোরোনায় মৃত হিসেবে গণ্য করা হবে না ৷ পথ দুর্ঘটনায় মৃত ও হাসপাতালে কোনও রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃতের মধ্যে আমরা কোনও সম্পর্ক খুঁজে পাচ্ছি না ৷ উপরোক্ত বিষয়টি আরও ভালোভাবে বুঝতে 19 এপ্রিল কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে প্রতিটি রাজ্যে পাঠানো চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে নিম্মলিখিত বিষয়গুলি জানতে চাওয়া হচ্ছে -

  • COVID-19-এ আক্রান্তদের মৃত্যু ঘোষণার জন্য যে চিকিৎসকদের কমিটি তৈরি করা হয়েছে সেই সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশিকা ৷
  • COVID-19-এ আক্রান্ত ব্যক্তি, যাদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে অন্য কোনও কারণ দেখানো হয়েছে, তার সম্পূর্ণ রেকর্ড ৷
  • কমিটি সিদ্ধান্ত নিতে কত সময় নিচ্ছে ৷

গতকাল থেকে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল ও কোয়ারানটাইন সেন্টার ঘুরে দেখছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল ৷ গতকালের পরিদর্শনের পর আজ সেই বিষয় নিয়ে মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে চিঠি দেন সেই দলের সদস্যরা ৷ চিঠিতে প্রশ্ন করা হয়, রোগীদের কোরোনা রিপোর্ট আসতে এত সময় লাগছে কেন ? বাঙুরসহ বেশ কয়েকটি হাসপাতালে অব্যবস্থা চরম পর্যায়ে ৷ রোগীদের নিরাপত্তার কথা ভাবা হচ্ছে না ৷ ভেন্টিলেটরের সংখ্যাই বা এত কম কেন?

কেন্দ্রীয় দলের রাজ্য সফরে আসা নিয়ে চাপানউতোরের পর গতকাল রাজ্যের সহায়তায় কেন্দ্রীয় দল পরিদর্শনে বের হয় ৷ প্রথমে রাজারহাট কোয়ারানটাইন সেন্টারে যান সেই দলের প্রতিনিধিরা ৷ সেখান থেকে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইন্সটিটিউট ও বাঙুর হাসপাতালে যান ৷ এরপর মুখ্য স্বাস্থ্যসচিবের সঙ্গে দেখা করে 22 তারিখের চিঠিতে উল্লেখিত নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন ৷

কেন্দ্রীয় দলের পাঠানো চিঠি

আজ চিঠিতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল যে বিষয়গুলি তুলে ধরেন, তার মধ্যে প্রথমেই বলা হয়, চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইন্সটিটিউটে আইসোলেশন বিভাগে রোগীর সংখ্যা প্রচুর ৷ এছাড়া বাঙুর হাসপাতালে রোগীদের রিপোর্ট পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে পাঁচদিন বা তারও বেশি সময় ৷ চিত্তরঞ্জনে চারজন রোগী গত 16 এপ্রিল থেকে, দুইজন 17 এপ্রিল থেকে এবং তিনজন 8 এপ্রিল থেকে রিপোর্টের অপেক্ষা করছে ৷ কিছু রোগীর রিপোর্ট নেগেটিভ ৷ পরীক্ষার ফল আসতে এত সময় লাগছে ৷ এতে অসংক্রমিত ব্যক্তিদেরও সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে ৷

বাঙুরে রোগী ভরতি ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয় চিঠিতে ৷ বলা হয়, ওয়েটিং এরিয়াতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনও বালাই নেই ৷ দুইজন রোগীর স্বাস্থ্য খুবই খারাপ হওয়ার পরও তাদের যথার্থ পরিষেবা দেওয়া হচ্ছিল না ৷

চিঠিতে আরও বলা হয়, অন্য হাসপাতাল থেকে বাঙুর হাসপাতালে রোগীদের রেফার করা হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সেই বিষয়ে জানানো হচ্ছে না ৷ সমস্ত বিষয়টিই রোগীদের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ৷ তাদের নিয়ে আসার জন্য কোনও বিশেষ ব্যবস্থাও করা হচ্ছে না ৷ ফলে রোগীর পালিয়ে যাওয়া বা দেরিতে ভরতি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে ৷

বাঙুর হাসপাতালে কেবল 12টি ভেন্টিলেটর পরিষেবা রয়েছে অথচ 354জন রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক ৷ কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জানানো হয়েছে যে, কোনও রোগীর ভেন্টিলেটর প্রয়োজন হলে এবং তা যদি পাওয়া না যায়, তাহলে তাদের অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে ৷ এই সংক্রান্ত তথ্য চেয়েছে কেন্দ্রীয় দলটি ৷

সোশাল মিডিয়া থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ওয়ার্ডে মৃতদেহ ঘন্টার পর ঘন্টা পড়ে থাকে ৷ তদন্তে জানা যায়, ডেথ সার্টিফিকেট বের করতে চার ঘন্টা সময় লাগে, তারপরই দেহ মর্গে স্থানান্তরিত করা হয় ৷ এটা বোঝা যাচ্ছে না, মারা যাওয়ার পরও কেন দেহ বেডে পড়ে থাকবে ৷ কেন আগেই মর্গে স্থানান্তরিত করা হয় না ৷ ডেথ সার্টিফিকেট বের করতে এবং মর্গে দেহ স্থানান্তরিত করতে কত সময় লাগে, সেই তথ্যও জানানো হোক ৷ রাজ্যকে দেওয়া চিঠিতে দাবি জানিয়েছে কেন্দ্রীয় দল ৷

চিঠিতে আরও উল্লেখ, রাজ্যের তরফ থেকে জানানো হচ্ছে যে, বাকিগুলির মতো এরাজ্যেও পরীক্ষার হার বাড়ানো হয়েছে ৷ শেষ চারদিনে প্রতিদিন পরীক্ষার সংখ্যা 400 থেকে বাড়িয়ে 900 করা হয়েছে ৷ এর মধ্যে ক’টি পুনরায় পরীক্ষা করা হয়েছে এবং ক’টি নতুন পরীক্ষা, তা জানানো হোক ৷ এছাড়াও বলা হচ্ছে বিভিন্ন জেলায় স্ক্রিনিং করা শুরু করা হয়েছে ৷ প্রতিদিন 1.25 থেকে 2 লাখ মানুষের স্ক্রিনিং করা হচ্ছে ৷ এর মধ্যে কতজনকে কোরোনার পরীক্ষা করা হয়েছে এবং কতজনের রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে সেই তথ্য দেওয়া হোক ৷

চিকিৎসকদের কোরোনা পরীক্ষা নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে যে প্রচার করা হচ্ছে, সেই সংক্রান্ত কোনও নির্দেশিকা কি সরকারের তরফে পাঠানো হয়েছে ? এই প্রশ্নও চিঠিতে করা হয় রাজ্যকে ৷ কারণ চিকিৎসকরা সোশাল মিডিয়ায় নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ৷ কোনও স্বাস্থ্যকর্মীর কোরোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলে 10 লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে ৷ একই ক্ষেত্রে কেন্দ্র দেবে 50 লাখ টাকা ৷ স্বাস্থ্যকর্মীরা এই দুটি স্কিমের মধ্যে না কি যে কোনও একটিকে বেছে নিতে পারেন ৷ এই বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছে কেন্দ্রীয় দল ৷ এই নিয়ে রাজ্যের নির্দেশিকা বিস্তারিত জানার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে তারা ৷

Last Updated : Apr 24, 2020, 9:15 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details