কলকাতা, ৮ মার্চ: এখন রঙের উৎসবে মেতে ওঠার সময়। তবে, চোখ, ফুসফুস এবং ত্বক বাঁচিয়ে রঙের এই উৎসবে মেতে ওঠা উচিত। রঙের আনন্দ উপভোগ করতে গিয়ে ছোটোদের যাতে সমস্যায় পড়তে না হয়, তার জন্য বড়দের হতে হবে সাবধান। কীভাবে সকলে মিলে রঙের উৎসবে রঙিন হয়ে উঠবেন, তারই পরামর্শ দিলেন চেস্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ কৌশিক চক্রবর্তী ।
রঙের উৎসব: কোনটা করণীয়, কোনটা নয়?
চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী: কেমিকাল রং ব্যবহার না করাই বাঞ্ছনীয় । অর্গানিক বা হারবাল রং ব্যবহার সকলের পক্ষেই ভালো। রং খেলার সময় কখনওই আঁটসাট পোশাক পরবেন না । কারণ, রঙের মধ্যে যদি কেমিকাল কিছু থাকে, তাহলে যাঁদের অ্যালার্জি রয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে । এমন পোশাক পরতে হবে, রং মাখার পরে যেন তা সঙ্গে সঙ্গে ঝেড়ে ফেলা যায় । শুকনো রং বা জলে গোলা রং, যে ধরনের রং-ই খেলুন না কেন, চোখের যত্ন নেওয়াটা বাঞ্ছনীয় । ক্রিকেটাররা যেমন মুন গ্লাস ব্যবহার করেন বা পুরো চোখ কভার করা গ্লাস ব্যবহার করেন, সেরকমভাবে রং খেলা খুব ভালো ৷ কারণ তাহলে চোখের মধ্যে রং যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা-ই থাকে না । চোখের মধ্যে যদি কোনও কারণে রং ঢুকে যায় তাহলে অবিলম্বে পরিষ্কার ঠান্ডা জলে চোখ ধুতে হবে । এটা আবির বা জলে গোলা রং, যে কোনও ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য । ছোটো থেকে বড় সকলের জন্যই, চোখে যাতে রং না ঢোকে সেটা দেখা দরকার। এমনভাবে রং খেলতে হবে যেন শ্বাসনালীতেও বেশি রং না যায় । আবির বা শুকনো রং খুব সহজে বাতাসে মিশে যায় । যাদের অ্যাজমা রয়েছে, অথবা শ্বাসনালীর কোনও অ্যালার্জি আছে, শ্বাসের সঙ্গে এই রং তাঁরা ইনহেল করলে সমস্যা দেখা দেয়। বেড়ে যেতে পারে অ্যাজমা । এক, চোখ দুই, ফুসফুস তিন, ত্বককে বাঁচানো। এই তিনটি পদক্ষেপের মাধ্যমে রং-এর ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে আমাদের শরীরকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে । যদি দেখা যায় কারও চোখে কেমিকাল রং লেগে গিয়েছে, প্রাথমিকভাবে জল দিয়ে ধোওয়ার পরেও যদি দেখা যায় সেই রঙ চোখে লেগে রয়েছে, তাহলে দ্রুত চোখের চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত । চোখ ওয়াশ করিয়ে নেওয়া উচিত যাতে চোখের আর ক্ষতি না হয় । রং খেলতে গিয়ে চোখের ক্ষতি হয়েছে এই রকম ঘটনা খুব একটা আনকমন নয় । অনেকের ক্ষেত্রেই আমরা দেখে থাকি ৷
ছোটোদের জন্য অভিভাবকদের কী করণীয়?
চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী : রং খেলার সময় চোখ শ্বাসনালী এবং ত্বক বাঁচানোর ক্ষেত্রে ছোটোদের জন্য আরও বেশি সাবধান হওয়া প্রয়োজন । বাচ্চারা স্বাভাবিকভাবেই বড়দের থেকে উচ্চতায় ছোটো । বড়রা কেউ অন্য কারও গায়ে বা মুখে আবির দিচ্ছে । আবির নিচের দিকে ঝরে পড়ছে । কোনও ছোট কেউ পাশে থাকলে, তার চোখে ওই আবির চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় । রং খেলার সময় বড়দের তুলনায় বাচ্চাদের চোখে এবং শ্বাসনালীতে তা ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি । ছোটোদের অনেক বেশি সাবধানে রাখতে হবে । যেখানে দেখা যাচ্ছে অনেক বেশি রং, সেখান থেকে দূরে থাকাই ভালো । একদম ছোটো বাচ্চাদের রঙের কাছে নিয়ে যাওয়াই উচিত নয়। কারণ তখন ত্বক অনেক নরম থাকে। যে কোনও রঙের সংস্পর্শে এলে ওই ত্বকে অনেক ক্ষতি হতে পারে। ৩-৪ বছরের শিশুরা রং খেলতে পারে। তবে, বাবা-মা কিংবা গুরুজনরা যেন সামনে থাকেন ।
চোখ-ফুসফুস-ত্বক বাঁচিয়ে রঙের উৎসবে কীভাবে রঙিন হয়ে উঠবেন ? রং খেলার পরে শরীর কীভাবে পরিষ্কার রাখতে হবে?
চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী: আবির হলে ঝেড়ে ফেললেন তারপর স্নান করে নিলেন, ঠিক আছে । এটা যদি কেমিকাল না হয়ে অর্গানিক বা হারবাল হয় তাহলে খুবই ভালো । কিন্তু যে রংগুলি গায়ে লেগে থাকে, রং তুলতে অনেকটা জল লাগে, সাবান লাগে । বাড়িতে যাঁরা ওয়াশরুম ব্যবহার করছেন, ঠিক আছে । কিন্তু অনেকেই পুকুর বা কোনও জলাশয় কিংবা নদীতে গিয়ে এই রং তুলে ফেলার চেষ্টা করেন । এটা মুশকিল । কারণ কেমিকাল রঙে থাকা পদার্থগুলি ক্ষতিকর । এই ক্ষতিকর পদার্থগুলি ওই পুকুর, জলাশয় বা নদীর জলের সঙ্গে মিশে যাবে। নদীতে তবু একটা ফ্লো আছে । সেখানে রঙের মধ্যে থাকা এই কেমিকালগুলি ভেসে অন্যত্র চলে যাচ্ছে । কিন্তু পুকুর বা কোনও জলাশয় সেখানে যদি রং খেলার পরে স্নান করতে নামেন, সেখানে তখন ভালো রকম দূষিত হয়ে যায় রঙের মধ্যে থাকা কেমিকালের কারণে । এটা আটকানোর প্রথম উপায়-ই হল, ক্ষতিকর কেমিকাল দিয়ে তৈরি রং ব্যবহার না করা । ভেষজ রং ব্যবহার করা ৷ চোখ, নাক, শ্বাসনালী এবং চামড়া অর্থাৎ, ত্বক এগুলিকে বাঁচিয়ে নিয়ে রং খেলতে হবে ।
রঙের উৎসব কীভাবে রঙিন হয়ে উঠতে পারে?
চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী : কেউ যদি প্রশ্ন করেন, নিজের এবং অন্যের কোনও সমস্যা তৈরি না করে সব থেকে ভালো ভাবে কীভাবে রং খেলা কাটানো যায়, তা হলে আমি বলব রং না খেলে । ছুটির দিন সবাই মিলে আনন্দ উপভোগ করুন । গল্প-গুজব করুন । খাওয়া-দাওয়া করুন ৷ তবে রং খেলার সঙ্গে সংস্কৃতি জড়িত । রং খেলবেন না, এমন কথায় অনেকের ভাবাবেগে আঘাত লাগতে পারে । গুরুজনদের পায়ে আবির দেওয়াটা সংস্কৃতির অংশ, সেটা করুন । কিন্তু, পায়ে আবির দেওয়া এবং অনেকটা রং মাখিয়ে দেওয়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। তাই যতটা সম্ভব কম রং মাখুন, আনন্দ বেশি করুন । রং গায়ে লাগিয়ে রঙিন হওয়ার দরকার নেই, সেটা ধুয়ে ফেলতে হবে । মনটা রঙিন করুন । সকলের সঙ্গে ভালো সময় কাটান । গুরুজন, বাচ্চাদের সময় দিন । মনটা অনেক দিন রঙিন থাকবে। রং খেলার মধ্যে অনেকে মদ্যপান করে থাকেন । এর জন্য, এমন হতে পারে, কী করা উচিত এবং কী করা উচিত নয়, সেই বুদ্ধি হয়ত লোপ পেতে পারে কিছু সময়ের জন্য । রং খেলার সময় আনন্দ করুন, কিন্তু এমন কিছু করবেন না যাতে অন্যের ক্ষতি হয় । এমন কোনও অবস্থায় রং খেলা উচিত নয় যাতে আপনার বোঝার ক্ষমতা লোপ পায়, আপনার কাজের জন্য অন্যের ক্ষতি হবে কি না ।