কলকাতা, 13 জুন: রাজ্যে উত্তরোত্তর বাড়ছে কোরোনা সংক্রমণের সংখ্যা । এই পরিস্থিতিতে পড়ুয়াদের ক্যাম্পাসে এনে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়া কোনও ভাবেই সম্ভব নয় । তাই আগের সেমেস্টারগুলির ফলাফলের ভিত্তিতে 50 শতাংশ ও বাকি 50 শতাংশ হোম অ্যাসাইনমেন্ট, প্রজেক্ট, অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের ভিত্তিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত সেমেস্টারের মূল্যায়নের প্রস্তাব দিলেন রাজ্যের উপাচার্যরা । আজ সল্টলেকে ওকাকুরা ভবনে রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রারদের নিয়ে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় । সেখানেই সর্বসম্মতভাবে এই বিকল্প পথের প্রস্তাব দেন উপাচার্যরা।
জট কাটার পথে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত সেমেস্টারের মূল্যায়ন
কাটতে চলেছে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত সেমেস্টারের মূল্যায়নের জট । উদ্ভুত কোরোনা পরিস্থিতির মাঝে পড়ুয়াদের চাকরি পেতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেই কথা ভেবেই ঐক্যমত হলেন রাজ্যের সব উপাচার্যরা ।
আজকের বৈঠকে রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রাররা উপস্থিত ছিলেন । শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিব মণীশ জৈন, উচ্চশিক্ষা সংসদের সভাপতি মমতা রায়-সহ উচ্চশিক্ষা দপ্তরের অন্য আধিকারিকরাও ছিলেন । আজকের বৈঠকের শেষে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "কোরোনা এবং আমফানের জেরে উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে কী করে পঠন-পাঠন এবং স্বাস্থ্য-সুরক্ষার ব্যবস্থা করা যায় তা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়েছে । এখনই বিস্তারিতভাবে বলতে পারছি না । কারণ, মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানো হবে, তাঁর অনুমোদনের পরেই এটি বলতে পারব । কিন্তু, সবাই একমত হয়েছেন যে, এই সংকটের সময়ে আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখা । আমরা আমাদের বিস্তারিত গাইডলাইন তাঁদের জানিয়েছি । উচ্চশিক্ষার যে সমস্ত পরীক্ষাগুলি আছে সেগুলি সম্পর্কেও তাঁরা নির্দিষ্টভাবে একই ঐক্যমতে এসে পৌঁছেছেন যে, সশরীরে উপস্থিতি ছাড়াও পরীক্ষা নিতে হবে।"
কোন উপায়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে, তার জন্য অন্য রাজ্যগুলি কী করছে, সেদিকেও নজর দেওয়া হয়েছে । শিক্ষামন্ত্রী বলেন, "কী করে রাজ্যের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলি এই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পঠন-পাঠন এবং পরীক্ষা এগুলি সামলাচ্ছে, তা নিয়েও আজকে দীর্ঘক্ষণ উপাচার্য এবং অন্য আধিকারিকদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে । আমি খুশি হয়েছি যে তাঁরা সবাই একটা জায়গায় পৌঁছেছেন । এমন হয়নি যে একটি বিশ্ববিদ্যালয় একটি কথা বলছে আর একটি বিশ্ববিদ্যালয় অন্য একটি কথা বলছে । তাঁরা সবাই আলোচনা শেষে একত্রিত হয়েছেন এবং একটি প্রস্তাবও আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন ।"
জানা গেছে, 50 শতাংশ আগের সেমেস্টারের ফলাফল ও 50 শতাংশ অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন, হোম অ্যাসাইনমেন্ট, প্রজেক্টের মতো বিষয়ের মাধ্যমে চূড়ান্ত সেমেস্টারের মূল্যায়নের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে । 50 শতাংশ হোম অ্যাসাইনমেন্ট, প্রজেক্ট বা অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের ভিত্তিতে কীভাবে করা হবে, সেই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নিজেদের মতো সিদ্ধান্ত নেবে । সব উপাচার্যরাই এই ঐক্যমতে এসে এই প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানা গেছে ।
রাজ্যের চূড়ান্ত সেমেস্টারের পড়ুয়াদের পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে বহুদিন ধরেই আলোচনা চলছিল । কিন্তু, রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয় ঐক্যমতে না পৌঁছানোয় সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না । কিন্তু, চূড়ান্ত সেমেস্টারের পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া জরুরি হয়ে পড়েছিল । অবশেষে আজ ঐক্যমতে পৌঁছে সিদ্ধান্ত নিলেন উপাচার্যরা । এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "ইতিমধ্যেই কয়েকটি রাজ্যকে দেখেছি । তা দেখেই আমরা মনে করেছি কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার । কারণ, চূড়ান্ত বছরের ছাত্র-ছাত্রীরা অনেকেই চাকরি পেয়েছে । তাই যেমনভাবেই হোক 31 জুলাইয়ের মধ্যে ফাইনাল টার্ম যাতে শেষ করা যায় তার জন্য উপাচার্যদের বলেছি । তাঁরা নিজেরাও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । বিশ্ববিদ্যালয় সেনেট, সিন্ডিকেট, বিভাগীয় বা অন্যান্য যে সমস্ত এগজ়িকিউটিভ কাউন্সিল রয়েছে সেগুলি আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত কার্যকর করে তাঁরা নিজেরাই জানিয়ে দেবে রাজ্য আদেশনামা বা অ্যাডভাইজ়রি দেওয়ার পর । সেটি আমরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরেই দেব ।"
আজকের বৈঠকে মূলত চূড়ান্ত সেমেস্টারে পরীক্ষা সংক্রান্ত আলোচনা হয়েছে । অন্যান্য সিমেস্টারগুলি নিয়ে বা অ্যাকাডেমিক সেশন চালু করার বিষয়ে তেমন কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি বলেই জানা গেছে । এ বিষয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন, টার্মিনাল সেমেস্টারের পরীক্ষা ছাড়া অন্যান্য সেমেস্টারের পরীক্ষাগুলি যাতে আমরা পরবর্তী সেমেস্টার বা পরবর্তী বর্ষে নিয়ে যাই । তার মডালিটিস আজকে তাঁরা তৈরি করেছেন । আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সবুজ সংকেত পেলে তা প্রকাশ করে দেব, যা উপাচার্যদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের বহিঃপ্রকাশ হবে । শিক্ষা দপ্তর উপাচার্যদের সম্মিলিত প্রস্তাবের বাইরে গিয়ে কথা বলবে না । উপাচার্য একসঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটাকেই কার্যকর করতে বলব । অ্যাকাডেমিক সেশন এই মুহূর্তে চালু করা সম্ভব হবে না । কবে থেকে চালু করা হবে, তা নিয়ে অন্য রাজ্যগুলি কী করছে দেখব ।"
অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই জুলাই মাসে রাজ্যের স্কুলগুলি বন্ধ রাখার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন । কয়েকদিন আগেই নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, "পড়াশোনার কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে । সেটাও সবাইকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে । ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে কাজ করতে হবে । ৩০ জুন পর্যন্ত ছুটি দিয়েছি । আমার মনে হয় জুলাই হয়ে যাবে । জুলাইয়ে ইতিমধ্যেই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা ঘোষণা হয়েছে । কেন্দ্রের পরীক্ষাও ঘোষণা হয়েছে ।’’ মুখ্যমন্ত্রীর সেই ইঙ্গিত সত্যিতে পরিণত হল । আজ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, জুলাই মাসেও স্কুলগুলি বন্ধ রাখা হবে । তিনি বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলেছেন জুলাই মাসটা যেন স্কুল বন্ধ থাকে । আমরা জুলাই মাসে তাঁর নির্দেশ মতো স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি ।" এর আগের ঘোষণা অনুযায়ী, 30 জুন পর্যন্ত বন্ধ ছিল রাজ্যের সব স্কুল । তবে জুলাই মাসে স্কুল কলেজগুলি বন্ধ রাখার বিষয়ে সরকারি কোনও নির্দেশিকা প্রকাশিত হয়নি ।