পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / city

কলকাতায় লঞ্চ জেন্ডার বেসড ভায়োলেন্স ইন মিডিয়া টুলকিটের - Gender

দেশে বেড়ে চলেছে লিঙ্গভিত্তিক হিংসা অর্থাৎ জেন্ডার বেসড ভায়োলেন্স । কীভাবে এর থেকে মুক্তি সম্ভব, তার জন্য গণমাধ্যমের কী ভূমিকা রয়েছে, এসব নিয়ে গতকাল কলকাতা প্রেসক্লাবে লঞ্চ করা হল জেন্ডার বেসড ভায়োলেন্স ইন মিডিয়া টুলকিট ।

প্রেসক্লাবে

By

Published : Sep 24, 2019, 12:08 AM IST

Updated : Sep 24, 2019, 5:56 AM IST

কলকাতা, 24 সেপ্টেম্বর: দেশে বেড়ে চলেছে লিঙ্গভিত্তিক হিংসা অর্থাৎ জেন্ডার বেসড ভায়োলেন্স । কীভাবে এর থেকে মুক্তি সম্ভব, তার জন্য গণমাধ্যমের কী ভূমিকা রয়েছে, এসব নিয়ে গতকাল কলকাতা প্রেসক্লাবে লঞ্চ করা হল জেন্ডার বেসড ভায়োলেন্স ইন মিডিয়া টুলকিট । ভায়োলেন্সের খবর কীভাবে মিডিয়ায় প্রকাশিত হচ্ছে, তা বিশ্লেষণ করে এই টুলকিট তৈরি করেছে ফেমিনিজ়ম ইন ইন্ডিয়া। http://bit.ly/GBVInMedia-তে ক্লিক করে এই টুলকিট সম্পূর্ণ পড়া যাবে।

কলকাতা প্রেস ক্লাবে এই টুলকিট লঞ্চের পর ফেমিনিজ়ম ইন ইন্ডিয়া-র ক্যাম্পেইন ম্যানেজার অস্মিতা ঘোষ বলেন, "রোজ খবরের কাগজে হাজার হাজার ধর্ষণের মামলার খবর হয় । আমরা দেখতে পাচ্ছি এটা আমাদের দেশের একটা মারাত্মক সমস্যা ।" যে ভাষার ব্যবহার করা হয়, তাতে লিঙ্গভিত্তিক নির্যাতন সাধারণ মানুষ কতটা বোঝেন, সেই বিষয়েও প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, "কারণ, মিডিয়া যদি ফোকাস করে নিগৃহীতা ছোটো পোশাক পরে ছিলেন, মদ্যপান করেছিলেন, তাহলে সাধারণ মানুষ মনে করবেন এগুলিই কারণ । এগুলি ওই মহিলার দোষ, যদি এমন পোশাক পরো, তাহলে তুমি ধর্ষণের শিকার হতে পার । এভাবে নিগৃহীতার প্রতি দোষারোপ তৈরি করতে পারে মিডিয়া । যদি আমরা এগুলি বিশদে প্রকাশ না করি, তাহলে বুঝতে পারব জেন্ডার বেসড ভায়োলেন্স ওই মহিলার দোষ নয় । এটা ধর্ষকের দোষ ।"

গতকাল কলকাতা প্রেসক্লাবে লঞ্চ করা হল জেন্ডার বেসড ভায়োলেন্স ইন মিডিয়া টুলকিট ।

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেছেন, "হেডলাইনে বলা হয়, উইমেন রেপড । কিন্তু যদি বলা হয়, ম্যান রেপড উইমেন, তাহলে ওই ম্যানের উপরে ফোকাস হবে । এমনিভাবে ছোটো ছোটো জিনিস মিডিয়া যদি বদল করে, তাহলে আমাদের সমাজ যেভাবে জেন্ডার বেসড ভায়োলেন্স বোঝে, সেখানে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবে ।" আগামী দিনে কী পরিকল্পনা রয়েছে? তিনি জানিয়েছেন, মিডিয়ার সঙ্গে আদানপ্রদান, মিডিয়া হাউজ়গুলির সঙ্গে কথা বলা এবং যাতে মিডিয়ার "বেস্ট প্রাক্টিসেস গাইডলাইন"-এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়, তার চেষ্টা করা । তিনি বলেন, "মিডিয়া স্কুলগুলি আমাদের প্রধান লক্ষ্য । সেখানে যাঁরা শিখছেন, তাঁদেরকে বোঝানো ।" দেশজুড়ে বিভিন্ন মিডিয়া স্কুল এবং হাউজ়ে এভাবে বোঝানোর জন্য প্রোগ্রাম করার বিষয়ে আশাবাদী তাঁরা ।

দিল্লি এবং মুম্বইতে এই টুলকিট প্রকাশ করা হয়েছে । গতকাল কলকাতায় এই টুলকিট প্রকাশ পেল । একথা জানিয়ে অস্মিতা ঘোষ বলেন, "চেন্নাইতে প্রকাশ করা হয়নি, তবে সেখানে 2-3টি কলেজে সেমিনার করা হয়েছে ।" দেশের অন্য শহরগুলিতেও এই কিট লঞ্চ করার সুযোগ তাঁরা পাবেন বলে জানিয়েছেন । তিনি বলেন, "প্রেস কাউন্সিলের নির্দেশিকা রয়েছে । আরও বেশি লিঙ্গভিত্তিক নির্দেশিকা থাকলে তা খুব উপকারী হবে । এই বিষয়ে অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কাজ করছে।"

এই বিষয়ে সোশাল মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, "নিউজ়কে অনেকে ডেমোক্রেটাইজ়ড করেছে । সিটিজেন জার্নালিজ়ম খুব বড় জিনিস । এখন যে কেউ নিউজ় রিপোর্ট লিখতে পারেন । সাংবাদিক বা লেখক হওয়ার জন্য এটা অনেক মানুষকে এম্পাওয়ার করেছে । কিন্তু, সোশাল মিডিয়াতে কোনও দায়িত্বজ্ঞান নেই । কোনও নির্দেশিকা নেই । কেউ নিয়ন্ত্রণ করছে না । যা ইচ্ছে করতে পারে, যা ইচ্ছে লিখতে পারে । ভুয়ো খবর এখন আমাদের দেশের বড় সমস্যা ।"

তাঁর কথায়, "যাঁরা সোশাল মিডিয়াতে লিখবেন, যাঁরা ডিজিটাল প্লাটফর্মে সিটিজেন জার্নালিস্ট, যাঁরা কন্ট্রিবিউট করেন, আমাদের নির্দেশিকা সকলের জন্য জরুরি । আমাদের জানা প্রয়োজন, যে সোশাল মিডিয়াতেও লেখার জন্য দায়িত্ব রয়েছে ।"

লিঙ্গভিত্তিক নির্যাতন মিডিয়াতে এখন খুব সংবেদনশীল ইশু । কত বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ হবে, কত বেশি ক্লিক হবে, তার জন্য হেডলাইন অথবা সোশাল মিডিয়াতে সেভাবে লেখা হচ্ছে । অস্মিতা ঘোষ বলেন, "কিন্তু, আমাদের জানা উচিত, এই ধরনের লেখা, যাঁরা হিংসার শিকার, তাঁদের উপর প্রভাব ফেলছে । হিংসার বিষয়ে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ ভালো বিষয় । লিঙ্গভিত্তিক নির্যাতনকে মশালা এন্টারটেইনমেন্টের মতো ট্রিট না করে, গুরুতর অপরাধ হিসেবে যদি ধরা হয়, তাহলে এটা অনেক বেশি সঠিক হবে ।"

অস্মিতার কথায়, "লিঙ্গভিত্তিক নির্যাতন হচ্ছে সিস্টেমিক ফেনোমেনন । আমরা যদি এটাকে নিয়ে লড়তে চাই, পুরো সমাজে তাহলে অনেক ছোটো বিষয় নিয়েও শুরু করতে হবে । যেমন, ছেলেরা এমন করে অথবা, এটা লিঙ্গভিত্তিক নির্যাতন নয়, টিজ়িং । কিংবা, কেউ ধর্ষণ হওয়ার পর যদি বলা হয়, নজর ঘোরাতে এটা করা হচ্ছে । এসব ছোটো ছোটো বিষয় একটি কালচার তৈরি করে । লিঙ্গভিত্তিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র কঠোর আইন এবং শাস্তি নয়, আমাদের নিজেদের আচরণ দেখতে হবে ।"

ফেমিনিজ়ম ইন ইন্ডিয়া-র ফাউন্ডার-ডিরেক্টর জ‍্যাপলিন পাসরিচা বলেন, "জেন্ডার বেসড ভায়োলেন্স ইন মিডিয়া, আমরা এই টুলকিট লঞ্চ করেছি। আমাদের দেশে যখন ধর্ষণের কথা হয়, মিডিয়াতে অসংবেদনশীলের মতো খবর লেখা হয়, রিপোর্টে এটা বলা হয় না যে, ধর্ষণ আমাদের দেশে সমাজের সমস্যা । এমনভাবে দেখানো হয় যেন, যৌনতার ধরন হল ধর্ষণ । মিডিয়াতে ধর্ষণের খবর কীভাবে প্রকাশিত হচ্ছে, কোন ধরনের ভাষা, ছবি ব্যবহৃত হচ্ছে, সে সব বিশ্লেষণ করে এই টুলকিট তৈরি করা হয়েছে ।"

তিনি জানিয়েছেন, কীভাবে এই ধরনের রিপোর্ট সংবেদনশীল ভাবে করা যায়, এমন ছবি যেন ব্যবহার করা না হয়, যাতে কোনও মহিলা লজ্জিত না হন । ধর্ষণ কোনও মহিলার ভুল নয়, যে ঘৃণ্য কাজ করছে তার দোষ, ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ । সাধারণ মানুষ যখন এসবের খবর পড়েন, তখন তাঁদের উপর প্রভাব পড়ে । যখন তাঁরা এই খবর পড়েন, তখন তাঁদের কী ভাবেন । যদি এমন লেখা হয়, একজন মহিলা ছোটো পোশাক পরে রাত দুটোর সময় রাস্তায় ঘুরছিলেন, তখন সাধারণ মানুষের মনে হতে পারে রাতে এভাবে যাওয়ার কী দরকার ছিল ।

জ‍্যাপলিন পাসরিচা বলেন, "যে কোনও মহিলা, তাঁর ইচ্ছে মতো কিছু করতেই পারেন । তার মানে এই নয় যে, তাঁকে ধর্ষণের শিকার হতে হবে । কোনও মহিলার কাছে এটা কাম্য ন য়। কিন্তু এমন ভাবে রিপোর্ট করা হয় যেখানে সাধারণ মানুষ ভাবে, যিনি ধর্ষিতা, তাঁর দোষ ছিল ।" তিনি জানিয়েছেন, এই টুলকিটের বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্য রয়েছে যাতে সাংবাদিকরা বুঝতে পারেন কীভাবে রেপের খবর কতটা ভালোভাবে লেখা যেতে পারে ।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শ্রুতির ডিরেক্টর শম্পা সেনগুপ্ত বলেন, "লিঙ্গ ভিত্তিক নির্যাতনের সংখ্যা বেড়ে চলেছে । মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা এটা জানতে পারছি । এক্ষেত্রে একটা বড় সমস্যা যখন রিপোর্টিং হয়, তখন খুব সংবেদনশীল ভাবে করা হয় না । অনেক সময় হয়তো যাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে তাঁর নাম প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে, অথচ তা আইনবিরোধী । এমন কিছু ছবি ব্যবহৃত হচ্ছে, যেগুলো দেওয়া উচিত ছিল না ।" তিনি বলেন, "নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমরা কাজ করে চলেছি । কীভাবে একসঙ্গে কাজ করলে এটা রুখে দেওয়া যায় তার জন্য এই টুলকিট লঞ্চ করা হয়েছে ।" তাঁর কথায়, "হিংসা কমানোর জন্য একটা বড় উপায় পিতৃতান্ত্রিক সমাজকে বদলানো । এটা বদলানোর জন্য আমাদের সবাইকে বদলাতে হবে। মিডিয়া যদি একটু সচেতন ভাবে খবর করে ।"

শম্পা সেনগুপ্ত বলেন, "প্রতিবন্ধী মহিলারাও হিংসার শিকার হয়েছেন, ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড বিওরোতে তা থাকে না । এই খবরের জন্য সংবাদমাধ্যমের উপর আমরা নির্ভরশীল । হিংসা রুখতে সবাইকে একসঙ্গে মিলে কাজ করতে হবে । যতক্ষণ না একজন মহিলাকে একটি বস্তু বা শরীর হিসেবে দেখা বন্ধ করছি ততক্ষণ হিংসা বন্ধ হবে না । " সোশাল মিডিয়ার ভূমিকার বিষয়ে তিনি বলেন, "সোশাল মিডিয়া আমাদের সবার জীবনে এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । এই সোশাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ধরনের হিংসার আঁচ আমরা দেখতে পাচ্ছি ।" তাঁর কথায়, "অনেক মানুষ হয়তো মনে করছেন তাঁরা কোনও মহিলাকে সাহায্য করছেন, সাহায্য করতে গিয়ে নির্যাতন চলছে সেই সময়ের ছবি তোলা হল, লেখা হল, ভিডিয়ো করা হল, সোশাল মিডিয়ায় তা দেওয়ার পর ভাইরাল হয়ে গেল কিন্তু, ওই মহিলার ছবি বা ভিডিয়ো প্রকাশ হবে কি না, এক্ষেত্রে তাঁর অনুমতি অনেক সময় নেওয়া হয় না । হিংসাকে জিইয়ে রাখার জন্য সোশাল মিডিয়ার নেতিবাচক ভূমিকা রয়েছে । এই বিষয়ে সচেতনতা দরকার ।"

Last Updated : Sep 24, 2019, 5:56 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details